প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনি কত মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বহু মানুষকে চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছেন। জীবনের শেষ বেলায় এসে আমি আপনার কাছে মিনতি করছি, আমাকে বাঁচান। অনেক কষ্টে দিন কাটে আমার। আমার কিছুই নেই। আপনি আমার পাশে দাঁড়ান। আমি যন্ত্রণার জীবন থেকে মুক্তি চাই। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন আন্তর্জাতিক পদক জয়ী (ভারোত্তোলক) রতন কুমার পাল। তিনি ‘মিস্টার বাংলাদেশ’র খেতাবপ্রাপ্ত একজন আন্তর্জাতিক ক্রীড়াবীদ।
স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ মিলিয়ে ৭০টির মতো পদক জিতেছেন এক সময়ের কৃতী ভারোত্তোলক (ওয়েট লিফটার) রতন কুমার পাল।তিনি ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ উপাধি পাওয়া খ্যাত ২০০২ সালে হাঁটুর হাড়ে ক্ষয় রোগ দিলে অসুস্থ হয়ে পড়েন এখন শুয়ে শুয়ে কাঁদছেন অলিম্পিক পদকজয়ী এই খেলোয়াড়। অসুস্থ হয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একাধিক পদকজয়ী এই কৃতী খেলোয়াড় দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী। কেঁদে কেঁদে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিকিৎসা সহায়তা চেয়েছেন স্বনামধন্য এই ভারোত্তোলক।
কুষ্টিয়া শহরের রাজারহাট এলাকার হেরঙ্গ কুমার পালের ছেলে রতন কুমার পাল ১৯৮০ সাল থেকে টানা ২০০০ সাল পর্যন্ত খেলাধুলায় অংশ নিয়েছেন। এ সময় স্বর্ণ, রৌপ্য, ব্রোঞ্জ মিলিয়ে প্রায় ৭০টির মতো পদক অর্জন করেন তিনি। বডিবিল্ডার হিসেবে ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ উপাধি পান। ৬৪ বছর বয়সী এই ভারোত্তোলক এখন শয্যাশায়ী।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ভার উত্তোলন করতে করতে হাঁটুর হাড় ক্ষয় হয়ে যায় রতন কুমার পালের। ২০০০ সালের শেষের দিকে তার হাঁটুর হাড়ে ক্ষয় রোগ ধরা পড়ে। ২০১০ সালে ভারতের ভেলোরে চিকিৎসা করিয়ে কৃত্রিম হাঁটু সংযোজন করা হয়। এরই মধ্যে দুবার ব্রেন স্ট্রোক করেছেন তিনি। এখন হাঁটাচলা করতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। একসময় তার পাশে হাজারো মানুষ ও ভক্তরা থাকলেও এখন খোঁজখবর নেন না কেউ।
‘মিস্টার বাংলাদেশ’র জীবনের ডায়েরিতে দেখা যায়, রাশিয়া, চীন, বুলগেরিয়া ও ভারতসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন রতন কুমার পাল। এসব প্রতিযোগিতা থেকে ১৬টি স্বর্ণপদক, ৩১টি রৌপ্যপদক, ২২টি ব্রোঞ্জপদক ও দুটি আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। পাশাপাশি অলিম্পিক পদকসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
‘কেমন আছেন’ জানতে চাইলে ‘ভালো নেই, ভীষণ কষ্টে আছি’ উত্তর দিয়ে কথা শুরু করেন রতন কুমার পাল। সেই সঙ্গে বলেন, কেউ আমার খোঁজখবর নেয় না।
রতন কুমার পাল বলেন, আমি ভীষণ অসুস্থ। খুবই কষ্টে আছি। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। ওষুধ কিনতে পারছি না। সংসার চলে না আমার। অথচ একদিন দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জসহ অনেক পদক পেয়েছি।
‘দেশের হয়ে অনেক পদক ও সনদ অর্জন করেছি’ উল্লেখ করে রতন কুমার পাল বলেন, এখন অসুস্থ অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে বিছানায়। কৃত্রিম হাঁটু সংযোজন করা হয়েছে। চলতে-ফিরতে পারি না। ওষুধ কিনতে পারি না। এখন মনে হয় খেলা করে ভুল করেছি। এসব পদক কোনো কাজে আসছে না। সব পদক দিয়ে হলেও আমি বাঁচতে চাই।
নিজের অর্জিত সব পদক দুই হাতে উঁচু করে ধরে কাঁদতে কাঁদতে রতন কুমার পাল বলেন, একসময় আমি দুই হাত দিয়ে ১০০-১৫০ কেজি পর্যন্ত তুলেছি। দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছি। আজ হাত দিয়ে ভাত খেতে পারি না। পা দিয়ে চলতে পারি না। এর চেয়ে বড় কষ্ট পৃথিবীতে নেই।
জীবনের দুর্যোগময় সময়ে রতন কুমার পালের পাশে রয়েছেন স্ত্রী যুথিকা রানি পাল। স্বামীর চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
যুথিকা রানী পাল বলেন, আমার স্বামী আন্তর্জাতিক ভারোত্তোলক। নামকরা খেলোয়াড়। বর্তমানে তিনি অসুস্থ। তার অবস্থা ভীষণ খারাপ। চলাফেরা করতে পারেন না। হাত পা বাঁকা হয়ে গেছে। বিছানায় প্রস্রাব-পায়খানা সারেন। মুখে খাবার তুলে দিতে হয়। চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই আমাদের। অর্থের অভাবে দুই বছর ধরে তার চিকিৎসা বন্ধ।
তিনি বলেন, রতন কুমার সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি আমরা। বর্তমানে আমাদের সংসারের অবস্থা খুবই খারাপ। সংসার চলে না। তার চিকিৎসা করানোর টাকা নেই। একমাত্র ছেলেকে লেখাপড়া করাতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিনীত অনুরোধ, আমাদের সহযোগিতা করুন; আপনি আমাদের বিপদে পাশে না দাঁড়ালে হয়তো আমার স্বামী বাঁচবে না। কারণ আপনি ছাড়া আমাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই।
যুথিকা রানী পাল আরও বলেন, ভার তুলতে তুলতে তার দুই পায়ের হাড় ক্ষয়ে গেছে। ২০০০ সালে তার বোনআর্থ্রাইটিস রোগ ধরা পড়ে। ভারতের ভেলোরে চিকিৎসা করে ২০১০ সালে হাঁটু রিপ্লেসমেন্ট করা হয় তার। এতে ১০ লাখ টাকা খরচ হয়। চিকিৎসার পরও হাঁটতে পারেন না তিনি। এখন অসহায় জীবনযাপন করছেন।
রতন কুমার পালের ভাই গণেশ কুমার পাল বলেন, টাকার অভাবে ভাইয়ের চিকিৎসা করাতে পারছি না। তার সংসারই চলে না, কি দিয়ে চিকিৎসা করাবে? তাদের খোঁজ নেয় না কেউ। আমাদেরও আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। টাকা থাকলে আমরাই ভাইকে সহায়তা করতাম। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ, আমার ভাইয়ের পাশে দাঁড়ান। আপনি পাশে দাঁড়ালে হয়তো আমার ভাই বেঁচে যাবে। কারণ তাকে সহায়তা করার কেউ নেই।