মেহেরপুর সদর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন নিয়ে পড়েছেন মহাবিপাকে। অনেক স্কুল ইতিমধ্যে মেশিনগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। আবার অনেক স্কুল মেশিনগুলো সচল থাকলেও প্রতি মাসে মেরামত বাবদ খরচ হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।
জানা যায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের শতভাগ হাজিরা নিশ্চিতকরণের জন্য ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর দেশের প্রত্যকটি সরকারি স্কুলে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার জন্য স্লিপের টাকা ব্যবহার করে আদেশ দেওয়া হয়।
সেই পত্রের আলোকে মেহেরপুর সদর উপজেলার ১০৮ টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয় করেন। কিন্তু সেই বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয় করার পর থেকেই সমস্যাই ভূগছেন তারা।
ইতিমধ্যে উপজেলার ৬০/৭০ টি স্কুলের বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি স্কুলগুলোর বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন সচল থাকলেও সেগুলো নিয়ে মহাবিপাকে রয়েছেন প্রধান শিক্ষকরা।
এব্যাপারে মেহেরপুর শহরের বিএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরাইয়া পারভীন বলেন, তার স্কুলের বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিনটি প্রতি মাসেই একবার করে মেরামত করতে হচ্ছে। একবার মেরামত করতে গেলে দেড় হাজার টাকা করে খরচ হয়। যে টাকা শিক্ষকদের পকেট থেকে দিতে হয়। বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন সারার জন্য তো সরকার টাকা দিচ্ছেনা।
মেহেরপুরের বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন স্থাপনের নামে সরকারি টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে। মেশিন স্থাপনের নামে ‘স্লিপ গ্র্যান্ড’ নামের স্কুলের ফান্ড থেকে ১৩ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। অথচ মেশিনগুলো মাত্র ৬ হাজার টাকা দামের কেনা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেক বিদ্যালয়ে মেশিনটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শিক্ষকদের উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে পারছে না ঊর্ধ্বতন অফিস। স্কুল সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের মেশিন কেনার কথা থাকলেও তা উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের মতামতের মূল্য দেওয়া হয়নি।
সূত্রমতে মেহেরপুর সদর উপজেলার ১০৮ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলায় মেশিন ক্রয়ের বিষয়ে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা কেউ মুখ খুলতে চান না। তারা বলেন, সব স্কুল কমিটি জানে। তবে স্কুল কমিটি বলছে তাদের কিছু জানানো হয়নি সদর উপজেলার তৎকালিন শিক্ষা অফিসের কয়েক ব্যক্তি শিক্ষকদের মেশিন ক্রয় করতে বাধ্য করেছিলেন। অভিযোগ উঠেছে শিক্ষা অফিসের লোকজন ৬ হাজার টাকা দামের নিম্নমানের মেশিন দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন ১৩ হাজার টাকা।
সদ্য বিদায়ী মেহেরপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ভুপেষ রঞ্জন রায় বলেন, করোনার সময় ২ বছরে প্রায় সবগুলো ডিজিটাল হাজিরা মেশিন নষ্ট হয়ে গেছিল। আবারও সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে। এখনও কিছু মেশিন নষ্ট হয়ে রয়েছে। যেগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্কুল কমিটি নিজেরা মেশিন ক্রয় করেছে। কি মানের মেশিন কিনেছেন তারাই ভাল জানেন।