ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার দূর্বাকুন্ডু গ্রামের প্রবাসীর স্ত্রী চাঞ্চল্যকর নূপুর হত্যা কান্ডের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের হওয়ার ২২ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। হত্যার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। যে কারণে হত্যার শিকার নূপুরের স্বজনরা মামলার ভবিষ্যত নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন। পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দুবাই প্রবাসী মোজাম্মেল হকের স্ত্রী নূপুর খাতুন (৩৫) গত (৩ সেপ্টেম্বর) বৃহস্পতিবার রাত ৮ টায় প্রতিবেশি মুসার বাড়িতে পাওনা টাকা আনতে গিয়ে নিখোঁজ হলে রাতে খোঁজাখুজির পর তার কোন সন্ধান মেলেনি।
পরদিন (৪ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে নূপুরের বসতভিটা থেকে ৪’শ গজ দূরে একটি বাগান থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নূপুরকে হত্যা করার সময় দূর্বত্তরা তার বাম চোখ উপড়ে ফেলে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সিআইডি ও পিবিআই-এর ক্রাইমসিন ইউনিট। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারনা প্রবাসী’র স্ত্রী নুপুরকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। পরে দুর্বৃত্তরা তার বাম চোঁখ উপড়িয়ে ফেলে।
ওই দিনই নিহতের জ্যৈষ্ঠ কন্যা শোভা খাতুন বাদী হয়ে সন্দেহভাজন মূসার নাম উল্ল্যেখ পূর্বক অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে কোটচাঁদপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে মামলায় নির্দিষ্টভাবে কাউকে আসামী করা হয়নি। শুধু প্রতিবেশি মুসাকে সন্দেহ করে লেনদেন জনিত কারণে তার মাকে হত্যা করতে পারে বলে এজাহারে উল্লেখ করেন মামলার বাদী নিহত নূপুরের জ্যেষ্ঠ কন্যা শোভা।
মামলা প্রসঙ্গে প্রথম বারের তদন্তকারী কর্মকর্তা কোটচাঁদপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) ইমরান আলম বলেন, নূপুর হত্যা মামলার বাদী শোভা এজাহার গর্ভে নির্দিষ্ট কাউকে আসামী করেননি। মুসা তার মাকে হত্যা করতে পারে বলে সন্দেহভাজন হিসাবে আসামী করা হয়েছে। তবে এ মামলার রহস্য দ্রুততম সময়ের মধ্যেই উন্মোচন হবে। মামলায় বাদী মুসাসহ বেশ ক’জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকেও আসামী করেন। যার নম্বর ১। তারিখ ০৪-০৯-২০২০।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, নূপুর নিখোঁজ হওয়ার রাতে মুসা তার নিজ বাড়িতেই ছিলেন। পরদিন সকালে লাশ উদ্ধার হওয়ার পর তিনি গা ঢাকা দেন। মুসার স্বজনদের দাবী নূপুরের সাথে মুসার ছিল জামাই শাশুড়ী সম্পর্ক। তাদের সাথে অর্থনৈতিক লেন-দেনও ছিল। সে কারণে তাকে হত্যা করা হবে এমন ধারনা করা ঠিক নয়। নূপুরের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তার মা বড় ভাইসহ স্বজনরা দূর্বাকুন্ডু যান। ঘটনাস্থলে পৌঁছে হত্যার বিষয়টি রহস্যজনক মনে হলে নিহতের বড় ভাই নুরুজ্জামান নিজে বাদী হয়ে কোটচাঁদপুর থানায় মামলা করতে চান। বড় ভাই নুরুজ্জামানের অভিযোগ তাকে মামলার বাদী না করে ভাগ্নী শোভাকে বাদী করে পুলিশ মামলা নেয়। এ অবস্থায় নুরুজ্জামান গত ৭ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিহতের স্বামী মোজাম্মেল হককে হুকুমের আসামীসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর ৪৬/২০। বিজ্ঞ আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পিবিআই ঝিনাইদকে আগামী ১৩ অক্টোবরের মধ্যে তদন্তপূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
অন্যদিকে ৪ সেপ্টেম্বর থানা পুলিশের নেওয়া মামলাটি পিবিআই সদর দপ্তরের নির্দেশে ৮ সেপ্টেম্বর মামলার যাবতীয় নথিপত্র পিবিআই তাদের হেফাজতে নেয়। দায়ের হওয়া মামলা দু’টি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে। নুরুজ্জামান জানান, হত্যার মূল রহস্য আড়াল করতে শোভাকে মামলার বাদী করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আমার বোন নূপুরকে তার স্বামীর নির্দেশে আসামীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। হত্যাকান্ডের ঘটনা থেকে নিজেদের আড়াল করতে মেয়ে শোভাকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর আগে স্বামী মোজাম্মেল হক বিদেশ যাওয়ার জন্য নূপুরের পরিবারের কাছে দেড় লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে। তা দিতে অস্বীকার করায় নূপুরের উপর নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। এ ঘটনায় নূপুর যৌতুক ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে ১৬৮/১৮ ও ১৮২/১৮ দু’টি মামলা করেন। মামলায় স্বামী, ভাসুর ও দেবরদেরকে আসামী করা হয়। স্বামীর পরিবারের লোকজন এক পর্যায়ে মামলা আপোষ মীমাংসা করে নূপুরকে বাড়িতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে মোজাম্মেল হক বিদেশে চলে যান। এরপর থেকে নূপুর দু’কন্যা সন্তানকে নিয়ে স্বামীর ভিটায় বসবাস করে আসছেন। কিন্তু নূপুরের সাথে স্বামীসহ পরিবারের অন্যান্যদের সাথে বিরোধ বিদ্যমান ছিল। বাড়িতে থাকা দেবর, ভাসুর ও তার সন্তানেরা নূপুরের উপর প্রতিশোধ নিতে কৌশল আটতে থাকে। সংসার করার জন্য নূপুর সবকিছু মেনে নিয়ে সন্তানদের সাথে বসবাস করছিলেন। এদিকে পরিবারের সদস্যরা নূপুরকে চরিত্রহীনাসহ বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে প্রবাসী মোজাম্মেলের কান ভারী করে। এসব ঘটনার জেরেই আসামীরা তার বোনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে ভাই নুরুজ্জামানের দাবী।
এবিষয়ে মামলার তদন্তকারী পিবিআই কর্মকর্তা এসআই তওহিদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।