বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে সরকার আগেই ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিতো। এখন থেকে এর সঙ্গে যুক্ত হবে আরও ২ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রবাসীরা এখন থেকে দেশে টাকা পাঠালে ৫ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন। নতুন এই অতিরিক্ত ২ দশমিক ৫ শতাংশ দিবে ব্যাংকগুলো। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) গত শুক্রবার রাতে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ রবিবার (২২ অক্টোবর) থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন বাফেদা চেয়ারম্যান এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আফজাল করিম। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে ডলার প্রবাহ বাড়বে এবং ডলার সংকট কাটাতে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখবে। এছাড়া দুই দিনের মধ্যে রেমিট্যান্স ছাড় দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০১৯–২০ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করে আওয়ামীলীগ সরকার। এ সিদ্ধান্তের কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় পাঠানোর পরিমাণ বেড়ে ২০১৯–২০ অর্থবছরে ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলারে দাঁড়ায়, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। একইভাবে ২০২০–২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৯–২০ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩৬ শতাংশ বেশি।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, বেশি দামে প্রবাসী আয় কিনতে হচ্ছে রেমিট্যান্স হাউজগুলো থেকে। আবার নির্ধারিত দামে ডলারও মিলছে না। তাই ডলার সংকট কাটাতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রবাসী আয়ে ব্যাংকে ১ মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাওয়া যায় ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। তার উপর সরকার আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিত। এতে এক ডলারে পাওয়া যেত ১১৩ টাকা ২৬ পয়সার কিছু বেশি। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন ব্যাংকগুলো দেবে আরও ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা। ফলে এখন থেকে প্রবাসীরা এক ডলারে পাবেন ১১৬ টাকার কিছু বেশি। ব্যাংক নিজস্ব আয় থেকে প্রবাসীদের ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেবে। এটি আমদানিকারকদের থেকে নেওয়া হবে না।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসাইন বলেন, যাঁরা অবৈধ পয়সা দিয়ে ডলারের ব্যবসা করেন, তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কারণ, ১৩০ টাকা ডলার রেট অফার করা হলে তাঁরা ১৪০ টাকায় কিনবে। এ জন্য হুন্ডির সঙ্গে ডলারের ফরমাল রেট মেলানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। তবে আশা করা যাচ্ছে, প্রণোদনা বাড়ার ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা বাড়বে। ডলার সংকট কাটাতে এই উদ্যোগ সুফল বয়ে আনবে।
এদিকে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর দুই দিনের মধ্যে তা প্রাপকের হাতে পৌঁছে দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করে বলেছিল, ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোকে উৎসাহিত করতে দুই দিনের মধ্যে রেমিট্যান্স ছেড়ে দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক নোটিশে বলেছে, ‘সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে যে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না।’