অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমানের ছোট ভাই প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজ ও ভাতিজা মোহাম্মদ বিন নায়েফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে এমন তথ্য জানা গেছে।
এ ঘটনায় সৌদি কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেন, তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তোলা হয়েছে।
বর্তমানে প্রাণঘাতী নোবেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। এতে তেলের দাম পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তেলের অর্থ নির্ভর দেশটিতে সম্ভাব্য ঝুঁকি আরও তীব্রতর হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
সৌদি দাবির মুখে তেল উৎপাদন কমিয়ে আনতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে রাশিয়া। ২০০৮ সালের পর এই প্রথম তেলের দাম ৯ শতাংশ কমে গেছে।
ইউরেশিয়া গ্রুপ কনসালটেন্সির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক প্রধান আয়হাম কামাল ব্লুমবার্গকে বলেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সৌদি নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ বৃহৎ আকার নিয়েছে।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনাবলী অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে বলে মনে হয়েছে বাদশাহ সালমান ও তার ছেলে মোহাম্মদের কাছে। কাজেই নেতৃত্বের জোরালো দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে সরিয়ে দিতেই তাদের এই উদ্যোগ।
নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, এর একটি সম্ভাব্য মতলব হতে পারে বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের বয়স। তিনি এখন ৮৪ বছরে রয়েছেন। বাবার মৃত্যু কিংবা সিংহাসন ত্যাগের আগে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের আটকে রাখতে চাচ্ছেন উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন সালমান।
রাজপরিবারে প্রিন্স আহমেদ বিশেষ মর্যাদা বহন করেন। কারণ বাদশাহ সালমানের একমাত্র জীবিত আপন ভাই হলেন তিনি। আহমেদ ও বিন নায়েফ দুজনেই আধুনিক সৌদির প্রতিষ্ঠাতার সন্তান।
এর আগে নিজের ভাইকে সিংহাসনের উত্তরসূরি মনোনয়ন দিতেন সৌদি শাসকরা। কিন্তু বাদশাহ সালমান প্রথমবারের মতো ২০১৭ সালে নিজের ছেলেকে এই পদে বসান।
২০১৮ সালে লন্ডনে বিক্ষোভকারীদের মুখোমুখি হওয়ার সময় সৌদি আরবের বর্তমান নীতির সমালোচনা করার পর থেকে প্রিন্স আহমেদকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভাবতে শুরু করেন যুবরাজ।
বিক্ষোভকারীরা তখন ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন বিমান হামলার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন। কাজেই প্রতিবেশী দেশটিতে মানবিক সংকটের দায় নেয়ার ক্ষেত্রে বাকি রাজপরিবারের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন প্রিন্স আহমেদ।
এক ভিডিওতে রাজপরিবারের নাম নিয়ে তাকে বলতে শোনা গেছে, আল-সৌদে এসব কি হচ্ছে? এসবের জন্য বাদশাহ ও তার সন্তানই দায়ী। এরপরে ইন্টারনেটে ক্ষুব্ধ সৌদিরা প্রিন্স আহমেদের আনুগত্য মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দেন।
কিন্তু দ্রুতই এটা পরিষ্কার হয় যে সিংহাসনের উত্তরসূরি হওয়ার কোনো ইচ্ছা তার নেই। একটি বিবৃতি ইস্যু করে তিনি বলেন, তার মন্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
পরবর্তী বসন্তে তিনি দেশে ফিরে যান। বিমানবন্দরে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে আলিঙ্গন করেন। ভাইয়ের ছেলের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক রেখে আসতেই দেখা গেছে তাকে।
রাজপরিবারের যেসব সদস্যদের অবাধ্য হিসেবে বিবেচনা করছেন যুবরাজ, তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, প্রিন্স আহমেদের ক্ষেত্রে প্রথমে তেমনটি ঘটতে দেখা যায়নি। তিনি অনেকটা স্বাধীনভাবেই দেশে ফিরে আসা ও চলাচলের সুযোগ পান।
বুধবার তিনি অবকাশ থেকে ফিরে আসেন এবং পরের দিনেই গ্রেফতার হন।
আর প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ ছিলেন সাবেক যুবরাজ। তাকে মোহাম্মদ বিন সালমানের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই বিবেচনা করা হয়ে আসছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তিনি দেশের তিন সশস্ত্র বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করেছেন। যার মধ্যে সেনাবাহিনী ও ন্যাশনাল গার্ড বাহিনীও রয়েছে। কাজেই ক্ষমতার লড়াইয়ে তিনি তাৎপর্যপূর্ণ সুবিধা পাবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
এছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ। মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গে তার বেশ জানাশোনা আছে। রাজপরিবারের মধ্যে যেটাকে সম্পদ হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে।
২০১৭ সালে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান কেবল তাকে ক্ষমতাচ্যুতই করেননি, ব্যাপক অপমান ও লাঞ্ছনাও দিয়েছেন। নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বর্তমান যুবরাজের সহযোগীরা তাকে শারীরিকভাবে জবরদস্তি করেছেন।
তাকে দীর্ঘ সময় আটক রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসাবঞ্চিত করা হয়েছে। বিন নায়েফের সম্পদ জব্দ করা হয়। আর সামাজিকমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হয়, তিনি ব্যথানাশকে আসক্ত।
তার ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয় এবং স্বাধীন চলাচল বন্ধ করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কালো উর্দি ও মাস্ক পরা লোকজন রিয়াদে তার ডেজার্ট ক্যাম্পে আসেন এবং তাকে ও তার ছোটভাইকে তুলে নিয়ে যান। এসময় তার বাড়িঘর তল্লাশি ও যোগাযোগ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।
তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ তোলা হয়েছে। রাজপরিবারের অবাধ্য সদস্যদের গ্রেফতার যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নিত্য অভ্যাস। মূলত ক্ষমতা সুসংহত করতেই তিনি এই ধরপাকড় চালাচ্ছেন বলে সমালোচকদের দাবি।
সুত্র-যুগান্তর