ছাতা অনেকের জন্যই নিত্যসঙ্গী। আবার অনেকে ছাতা সঙ্গে রাখতে পারেন না। রোদ, ঝড় বা বৃষ্টি যা-ই হোক না কেন ব্যাগে অনেকে ছাতা রাখবেনই। বিশেষত অনেক নারীই এখন রোদের তীব্রতা থেকে ত্বককে বাঁচাতে ব্যাগে নান্দনিক ছাতা রাখছেন। যদি বৈজ্ঞানিকভাবে বলতে চাই তাহলে ছাতা শুধু রোদের তাপ থেকেই আমাদের রক্ষা করে এমন না। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকেও আমাদের রক্ষা করতে পারে। এজন্য বাইরে গেলে সবার প্রথমে ছাতা রাখতে হয়।
ছাতা এখনও সুরক্ষার প্রতীক হিসেবে ব্যবহূত। আবার অনেকের জন্য শুধুই ফ্যাশনের অংশ। ফ্যাশন যদি হয়েও থাকে তখন আবার সুরক্ষার পুরোটা নাও মিলতে পারে। এসব ভেবেই আসলে ছাতা কিনতে হয়। ফ্যাশনের কথা মাথায় রেখে আপনি বেছে নিতে পারেন বাহারি ডিজাইন ও রঙের ছাতা।
নেবেন কোন রঙের ছাতা
ঘর থেকে বের হলেই সূর্যের প্রখর মেজাজ চোখ রাঙাচ্ছে। এই রোদে ত্বকের ক্ষতি হচ্ছে তেমনি ঘর্মাক্ত শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ। রোদে নষ্ট হয় চুলের উজ্জ্বলতাও। ত্বক-চুল ভালো রাখতে হলে রোদ থেকে বাঁচা জরুরি। বর্তমানে বিভিন্ন ফ্যাশনেবল ছাতা থাকলেও একদম হালকা রঙের ছাতা এড়িয়ে চলুন। যত বেশি হালকা হবে রং, ততই বেশি গায়ে লাগবে রোদ। কড়া রোদ থেকে নিজেকে আড়াল করতে হলে চাই গাঢ় রঙের ছাতা। ব্যবহার করতে পারেন কালো রঙের ছাতাও। রঙিন ছাতা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি আটকে দিতে পারে। বাজারে এখন দুই রকমের ছাতা বেশি পাওয়া যায়। কালো ছাতা এবং ভাঁজযুক্ত নানা রকমের রঙিন ছাতা। এই ধরনের ছাতাগুলো বেশ টেকসই। শিশুদের জন্য রয়েছে উজ্জ্বল রং ও নকশার ছাতা। দেশি ছাতার পাশাপাশি বিদেশী ছাতার চাহিদাও বেশ। আকৃতিতে ছোট, সহজে বহনযোগ্য ও নানা রঙের সম্ভার থাকায় ভাঁজ করা যায় এমন ছাতার জনপ্রিয়তা বাড়ছে দিন দিন। কালোর পরেই যে রঙের ছাতাকে প্রাধান্য দিতে পারেন তা হলো নীল কিংবা বাদামি ও গাঢ় রঙের ছাতা। কিন্তু গরমে রোদে বাইরে বেরোনোর সময় কখনই সাদা কিংবা হালকা রঙের ছাতা ব্যবহার করা একেবারেই সঠিক নয়। এই রঙের ছাতাগুলো পুরোপুরি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে আপনাকে সুরক্ষিত করতে পারে না। তাই ছাতা কিনতে এখন থেকে কালো, নীল কিংবা বাদামি ও গাঢ় রঙই অগ্রাধিকার দিতে পারেন।
ছাতার ম্যাকানিজম
এখনকার ফ্যাশনে সুইচ দিয়ে খুলবে এবং বন্ধ হবে এমন ছাতাও পাওয়া যায়। মেয়েদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রঙের বৈচিত্র্যময় ছাতা। এছাড়াও লাল, সবুজ, হালকা কমলা, বেগুনি, বিভিন্ন প্রিন্টের, পাতার নকশাসহ নানা ডিজাইনের ছাতাও ব্যবহার করতে পারেন। আর পোশাকের সঙ্গে মিল রেখেও ছাতার রং বেছে নিতে পারেন। এতে করে আপনার ফ্যাশনেবল ‘লুকটা’ আলাদা মাত্রা পাবে। তবে শিশু ও বয়স্কদের জন্য লম্বা ধরনের ছাতাই ভালো। কারণ তারা ছাতা হারিয়ে ফেলে বেশি। দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে চাইলে সুইচযুক্ত ছাতার থেকে ম্যানুয়াল ছাতা অনেক ভালো। সুইচযুক্ত ছাতা ভেঙে গেলে সহজে মেরামত করা যায় না। যেমনই হোক না কেন অপেক্ষাকৃত ভালো ব্র্যান্ডের ছাতা কিনবেন। দোকানেই বারবার ছাতা খুলে ও বন্ধ করে পরীক্ষা করে নিতে হবে। ছাতার ক্ষেত্রে সচরাচর অনেকেই কমদামি ছাতা কেনেন। এমনটি না করাই ভালো। বিশেষত নিয়মিত ছাতা সঙ্গী হলে আপনাকে ভাবতেই হবে ছাতাটি যাতে দ্রুত নষ্ট হয়ে না যায়। এ বিষয়ে বাড়তি মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
ছাতা চেনার কৌশল
ছাতা তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের কাপড় দিয়ে। তাই কাপড়ের মান দেখে নেওয়া জরুরি। বাজারে বিভিন্ন কাপড়ের ছাতা পাওয়া যায়। প্যারাসুটের কাপড় অথবা বেলপেকের কাপড়ের ছাতাগুলো ভালো মানের। কেননা এই ধরনের কাপড় সহজে ছিদ্র হয় না এবং নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। এছাড়া কিছু ছাতা রয়েছে যেগুলোতে দুই স্তরের কাপড় ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে রোদ-বৃষ্টিতে ছাতার বাইরের কাপড় গরম কিংবা ভেজা থাকলেও ভেতরের কাপড় একই রকম থাকে। ছাতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে শিক। তাই ছাতা কেনার পূর্বে শিক কম অথবা শিক নিম্নমানের কিনা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। কারণ শিক নিম্ন মানের হলে হালকা বৃষ্টি কিংবা তুফানে ছাতা উল্টে গিয়ে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর ছাতায় শিক বেশি হলে ঝড়-বৃষ্টিতেও উল্টে যাওয়ার ভয় থাকে না। স্টিলের শিক ভেজা থাকলে মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। তাই স্টেইনলেস স্টিলের শিক, অ্যালুমিনিয়ামের শিকগুলো বেশ উন্নত মানের। তাছাড়াও শিকের সঙ্গে ফাইবার সংযুক্ত করে দেওয়া ছাতাগুলোও টেকসই হয়। ছাতার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ছাতার হাতল। কারণ বাজারে কিছু কাঠের হাতল সংযুক্ত ছাতা রয়েছে, যেগুলো ভারী এবং এই ধরনের হাতল ভিজে গেলে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাধারণত প্লাস্টিকের হাতলগুলো মজবুত ও টেকসই হয়।
সূত্র: ইত্তেফাক