মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে মৌসূমি ফল লিচুর রক্ষার নামে কারেন্ট জালের ব্যবহার বেড়েছে। এতে করে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ওই জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। স্থানীয় বন বিভাগের নীরবতায় বাগান মালিক ও ব্যবসায়িরা অবাধে পাখি শিকার করছে বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন অনেকে। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছেন, বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাংনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, লিচু গাছের উপরে কারেন্ট জাল বিছিয়ে রাখা হয়েছে। কোথাও কোথাও গোটা লিচু বাগানের চারিদিক কারেন্ট জাল টাঙানো আছে। বিভিন্ন বাগানে টাঙানো জালে জীবিত ও মৃত পাখি ঝুলছে। আবার কোথাও কোথাও পড়ে আছে পাখির মৃত দেহ। কোন কোন বাগান মালিক পাখি শিকার করে তার মাংস খান।
মেহেরপুর বার্ড্স ক্লাবের সদস্য ও পাখি সংরক্ষণকারী মাজেদুল হক মানিক বলেন, পাখি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। কিছু কিছু পাখি অর্থাৎ নিশাচর জাতীয় পাখি বিষাক্ত সাপ ও ইঁদুর খেয়ে ফসল রক্ষা করে। ফসলের উপর থেকে বিরুপ প্রভাব ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার্থে প্রকৃতির বন্ধু পাখি রক্ষায় প্রশাসনের এখনই পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান তিনি।
গাংনী ভিটাপাড়ার মাঠে লিচু বাগান মালিক হেলাল জানান, পাখি শিকারের কোন উদ্দেশ্য নয়, পাখিরা বাগানের ফল খেয়ে ও নষ্ট করে। এদের কবল থেকে ফল রক্ষার্থে কারেন্ট জাল ব্যবহার করা হয়েছে। পাখি শিকার একটি জঘন্যতম অপরাধ এটি স্বীকার করে গাছ থেকে জাল সরিয়ে নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
হেমায়েতপুর লিচু বাগানের মালিক আনারুল ইসলাম জানান, তিনি জাল টাঙিয়েছিলেন কিন্তু কয়েকটি বাঁদুড় মারা যাবার পর জাল খুলে নিয়েছেন। তিনি আরো জানান, ক্ষুধার্ত পাখিরা শুধু নয়, অনেক নীরিহ পাখি যারা তপ্ত রোদ থেকে বাঁচার জন্য ছায়া খোঁজে তারাও জালে আটকা পড়ে। তিনি কোন পাখি মেরে ফেলেননি।
মেহেরপুর জেলা বার্ড কøাবের সভাপতি পাখি গবেষক এম এ মুহিত বলেন মেহেরপুরে পাখিবিদদের এবারের ঈদ উৎসব ফিকে হয়ে গেল যখন দেখলো আবাসিক পাখি কেবল কিছু ফল খাওয়ার জন্য দূর্দশায় মরতে আটকা পড়েছিল। বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী মেহেরপুর আমের এবং অন্যান্য জনপ্রিয় ফলের জন্য পরিচিত। সর্বাধিক লাভের আশায় পাখিদের দূরে রাখার জন্য অবৈধ ভাবে কারেন্ট জাল ব্যবহারের জঘন্য সংস্কৃতি বন্ধ করার দাবি জানান। তিনি আরো বলেন এখনই যদি এই সংস্কৃতি বন্ধ না করা যায় তাহলে বিশাল পরিবেশগত সমস্যা তৈরী করবে এবং কোন একসময় এই স্বর্গীয় উপহার পাখি বিলুপ্ত হবে। মেহেরপুর চুয়াডাঙ্গা সড়কে অয়ন ফিলিং স্টেশনের নিকট একটি ফলের বাগানে কারেন্ট জালে আটকা পড়ে পাখির মৃত্যু দেখে পাখি গবেষক সংবাদের সাথে আলাপ কালে হাতাশার সাথে কথাগুলো বলেন ।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, পাখি শিকার জঘন্যতম অপরাধ। তিনি এলাকায় গিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান।