আড়িয়ল বিলে বিমান বন্দর নির্মাণের দাবী জোড়ালো হয়ে উঠেছে। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের এমপি, শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃন্দসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন সভা সেমিনারে বিষয়টি একের পর এক তুলে ধরছেন। ইতিমধ্যে বর্তমান সরকারের সচিব ও সাবেক প্রকল্প পরিচালকের সমন্বয়ে জনপ্রতিনিধি ও বিল পাড়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে ঢাকায় শিক্ষা ভবনের শিক্ষা প্রকৌশলীর সভাকক্ষে আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর বাস্তবায়ন কমিটির সভা হয়েছে। সভায় আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মানের জন্য সরকারের কাছে দাবী জানানো হয়।
বিশ^স্ত একটি সূত্র জানায়, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সামনে আগামী ডিসি সম্মেলনে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক তুলে ধরতে পারেন। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মাহী বি, চৌধুরী আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মানের বিপক্ষে আন্দোলন ভুল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন। শ্রীনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একটি সভায় মন্তব্য করার পর প্রায় ১ দশক আগের আন্দোলন নিয়ে তিনি গত ২৫ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবে যুক্তফ্রন্টের সভায় একই মন্তব্য করেণ। তিনি বলেন, মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে বিমান বন্দরের বিরুদ্ধে একটা আন্দোলন করা হয়েছিল। এরপর সরকার এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। মাহী বি, চৌধুরী বিমানবন্দর নিয়ে নিজেদের ভুল স্বীকার করে আড়িয়ল বিলে বিমান বন্দর নির্মাণের জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন। জাপানের সার্ভে টিমের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, পুরো বাংলাদেশ ঘুরে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য তারা সেরা জায়গা আর পায়নি। আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর হলে দেশের জন্য মঙ্গল হবে।
এর আগে ২০ জুন বিদায়ী মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক শায়লা ফারজানার বিদায়ী সংবর্ধণা অনুষ্ঠানে শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মসিউর রহমান মামুন ও ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াহিদুর রহমান জিঠু আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের দাবী তুলেন।
মসিউর রহমান মামুন বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে ৬ লেন রাস্তা ও রেল সংযোগ কাজের যে মহাযজ্ঞ চলছে তার সাথে আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের বিষয়টি চুড়ান্ত হলে শ্রীনগর ও এর আশপাশের এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন শুরু হবে। ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াহিদুর রহমান জিঠু বলেন, তার নিজের বাড়িও বিল পারে। বিলবাসী জমির ন্যায্য মূল্য ও পূনর্বাসন সুবিধা পাবে এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলে তারা বিমানবন্দরের জন্য জমি দিতে প্রস্তুত।
তাছাড়া বিল আন্দোলনের পর পরই বেশীর ভাগ আন্দোলনকারী তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। সদ্য যোগ দেওয়া মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদারের শ্রীনগর উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় সভায় শ্রীনগর পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবুল হোসেন আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের দাবী জানান। ২০১১ সালে আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা ব্যাপক আন্দোলনের মুখে ভেস্তে যায়। এর জন্য স্থানীয় সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদ ও সঠিক তথ্য উপস্থাপনের ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়। ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর যশলদিয়ায় পানি শোধনাগারের ভিত্তি প্রস্তর অনুষ্ঠানে তৎকালীর মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে টেলি কনফারেন্সে কথা বলার সময় তিনি বিমানবন্দর নিয়ে নিজেদের ভুল স্বীকার করে পুনরায় বিমানবন্দর নির্মাণের দাবী জানালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন বিষয়টি ভেবে দেখা হবে। ২০১৮ সালে বিল আন্দোলন ও পুলিশ হত্যার ঘটনায় পৃথক মামলাগুলোর চার্জশীট প্রদান করা হয়। আসামীদের মধ্যে অনেকেই জানান, যারা বিল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং এজাহারে নাম রয়েছে তাদের অনেকেই রাজনৈতিক বিবেচনায় বাদ পরেছেন। আবার একই বিবেচনায় নতুন আসামী অন্তর্ভূক্তের অভিযোগও রয়েছে।
তবে সর্বশেষ তাদের দাবী সরকার আড়িয়ল বিলে নতুন করে বিমানবন্দর নির্মানের সিদ্ধান্ত নিলে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলোর প্রতি সদয় দৃষ্টি রাখবেন। বিলের অনেক অংশে ভূমি দস্যুদের থাবা পরেছে। শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন রং এর হাউজিং কোম্পানীর লোভনীয় সাইনবোর্ড। কোম্পানীগুলোর আগ্রাসী কর্মকান্ড দেখে বিলবাসীর দাবী সরকার এখানে বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহন করুক। তবে সরকার রেল প্রকল্পে অধিগ্রহন করা জমির মতো তাদের জমিরও ন্যয্য মূল্য প্রদান করবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।