প্রতিবছর মেলায় প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ জন বিক্রয়কর্মী হিসেবে খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ পান
আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বাংলা একাডেমি আয়োজন করতে যাচ্ছে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা। প্রতিবছর মেলায় কয়েক শ স্টল থাকে, যেখানে এক মাসের খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ পান তরুণ-তরুণীরা। ছোট-বড় প্রায় সব স্টল বিকিকিনিতে সহযোগিতার জন্য বিক্রয়কর্মী নিয়ে থাকে। এবার মেলায় ৪৬০টির মতো স্টল থাকবে। পড়াশোনার পাশাপাশি যাঁরা খণ্ডকালীন চাকরি করতে চান, তাঁদের জন্য চাকরির সুযোগ রয়েছে এসব স্টলে।
বাংলা একাডেমির পরিচালক ও বইমেলার সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মেলার জন্য প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। বইমেলাকে কেন্দ্র করে এ সময়টাতে দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে বিশাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে। বিভিন্ন খাতে অনেকের কর্মসংস্থান হয়। মেলায় বিক্রয়কর্মী ও বই সরবরাহকারী ছাড়াও অনেক ধরনের কাজের সুযোগ হয়। প্রতিবছর মেলায় প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ জন বিক্রয়কর্মী হিসেবে খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ পান। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী। এবার মেলায় ৪৬০টি স্টল ও ৩৫টি প্যাভিলিয়ন থাকবে। তাই এবারও অনেক কর্মী লাগবে। বাংলা একাডেমি মেলা উপলক্ষে প্রতিবছর ১০০ থেকে ১৫০ জন বিক্রয়কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে।
আবেদনের যোগ্যতা
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো মেলা চলাকালে ক্রেতাদের কাছে বই বিক্রয় ও উপস্থাপন করার জন্য নিয়মিত কর্মীর পাশাপাশি অভিজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ খণ্ডকালীন বিক্রয়কর্মী নিয়ে থাকে। এ ছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠান বেচাকেনার হিসাব সামলানোর জন্য ক্যাশিয়ার পদেও লোক নেয়। এসব পদে আবেদনের জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস চাওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারেন। ‘বাংলানামা’ প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী কবীর আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি প্রার্থীদের দীর্ঘক্ষণ কাজ করার মানসিকতার বিষয়টি খেয়াল করা হয়। এ ছাড়া প্রার্থীর উপস্থিত বুদ্ধি, উপস্থাপনার কৌশল, যোগাযোগের দক্ষতা ও হিসাবজ্ঞান আছে কি না, তা যাচাই করা হয়।
চাকরির খোঁজখবর
কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিক্রয়কর্মী নিয়োগের জন্য পত্রপত্রিকায় তেমন একটা বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় না। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বইমেলায় কাজের জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে সিভি চাওয়া হয়। এ ছাড়া ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট বইয়ের দোকান থেকেও সিভি নেওয়া হয়। প্রথমা প্রকাশনের ব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘বইমেলার জন্য আমরা সিভি নেওয়া শুরু করেছি। প্রথম প্রকাশনের কারওয়ান বাজার, আজিজ সুপার মার্কেট ও ইউনাইটেড সিটির শেফস টেবিল কোর্টসাইডের প্রথমা বুক ক্যাফেতে সিভি নেওয়া হচ্ছে। এবার মেলা উপলক্ষে ২৫-৩০ জন কর্মী নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’
কাজের ধরন
অন্যান্য চাকরির চেয়ে বইমেলার কাজের ধরন ও সময় আলাদা। যেহেতু মেলা প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে শুরু হয়। তাই কাজ শুরু হয় বিকেল থেকেই। তবে মেলা শুরুর কিছু সময় আগে বিক্রয়কর্মীদের উপস্থিত হতে হয়। বেলা তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ডিউটি করতে হয়। ছুটির দিনগুলোতে মেলা বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়ায় ডিউটিও শুরু হয় ১১টা থেকে। মেলা চলাকালে বিক্রয়কর্মীদের পুরোটা সময়ই স্টলে থাকতে হয়। নির্দিষ্ট প্রকাশনার বই ও লেখকদের সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হয়। কারণ, ক্রেতারা দোকানে এসে বই সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন। তাই পাঠক-ক্রেতাদের চাহিদা ও পছন্দের দিকে বাড়তি খেয়াল রাখতে হয়।
বেতন ও সুযোগ-সুবিধা
প্রতিষ্ঠানভেদে বেতন নির্ভর করে। একেক প্রতিষ্ঠানের বেতন একেক রকম। তবে সাধারণত বিক্রয়কর্মীদের এক মাসে ১০-১৩ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হয়। অভিজ্ঞ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বেতন আরও বেশি হয়। এ ছাড়া প্রতিদিন রয়েছে বিকেলের নাশতা। ছুটির দিনগুলোতে মেলা যেহেতু সকাল থেকে শুরু হয় তাই সকাল, দুপুর ও বিকেলের খাবার দেওয়া হয়। এ ছাড়া মেলা উপলক্ষে নির্দিষ্ট পোশাকও দেওয়া হয়। আদর্শ প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুব রাহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বইমেলা চলাকালে যাঁরা ভালো দক্ষতা দেখান, তাঁদের পরবর্তী সময়ে স্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানে বেশ কয়েকজন কর্মী আছেন, যাঁদের মেলা থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।’
মাহাবুব রাহমান আরও বলেন, বইমেলায় খণ্ডকালীন চাকরির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা হাতে–কলমে কাজ শেখার সুযোগ পান। আর নিয়োগকর্তারাও তাঁদের সরাসরি পরীক্ষা করে নিতে পারেন। কর্মীদের পুরো এক মাস যাচাই করার সুযোগ পাওয়া যায়। যে ছেলে বা মেয়েটি পুরো মাস মেলার ভিড় সামলে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে পারেন, তাঁর যোগ্যতা নিশ্চয় অন্যদের চেয়ে আলাদা। তাই তাঁদের স্থায়ী চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।