২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূইয়া অনুপ্রবেশকারী হিসেবে নানা তথ্য মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে এ বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হয়নি তিনি।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে তৎকালীন ছাত্রনেতা সাদ্দাম হোসেন হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমানুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নে আলমগীর হোসেন ছাত্রদল ক্যাডার ছিলেন মর্মে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত প্রদান করলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এক মাস পর অজানা কারনে প্রত্যয়নপত্রের কথা আমানুর রহমান অস্বীকার করলে সে সূত্র ধরে অধ্যাপক আলমগীর প্রতিবাদ লিপি পাঠান।
এরপর প্রকৃত ঘটনা উৎঘাটনের জন্য অনুসন্ধানে তাঁর সম্পর্কে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
ছাত্রজীবনঃ আলমগীর হোসেন ভূইয়া ১৯৮৮-৮৯ সেশনে গাজীপুর ক্যাম্পাসে ভর্তি হয়। সে সময় অর্থনীতি বিভাগে ২৮ জন ছাত্রের মধ্যে ২১ জন ছাত্রলীগে যোগ দেয় কিন্তু ভূইয়া কোনভাবেই রাজী হননি। এ প্রসঙ্গে তৎকালীন অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন ইবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আফছার আলী বলেন, “ছাত্রলীগের নামটাও আলমগীর সহ্য করতে পারতো না। আমি নিজে তার রুমে চাঁদা তুলতে গিয়েছিলাম। আমাকে সরাসরী বলেছে তোমার “বঙ্গবল্টু”র নাম নিয়ে আর কখনো রুমে আসবা না বলে রুম থেকে বের করে দেন। সে মূলতঃ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেনের একান্ত বিশ্বস্ত সহচর ছিল।”
শিক্ষকতা জীবন: ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখে অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন আলমগীর হোসেন ভূইয়া। যোগদানের বেশ পরে বাসদ সমর্থিত প্রভাবশালী শিক্ষক মুঈদ রহমান তাকে শাপলা ফোরামের ফরম পূরণ করালেও কখনই দলীয় কোন কাজে সম্পৃক্ত করতে পারেননি।
এমনকি ১/১১ এ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জেলে থাকা অবস্থায় কোন দলীয় কর্মকান্ডে তাকে দেখা যায়নি। বরং অন্য সাধারণ শিক্ষকের মতো স্বাক্ষর করেই ক্ষান্ত।
২০১৩ সালে সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক কামাল উদ্দীন দূর্নীতির দায়ে অব্যহতি পেলে ক্যাম্পাসে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তখন অধ্যাপক কামাল উদ্দীন ও ভূঁইয়া উভয় গ্রুপের সাথে গোপন আঁতাতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়। পরবর্তী শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ইবির ইতিহাসে ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটে। কার্যকরী কমিটির ৬ জন সদস্যের প্রবল আপত্তির মুখেও ঐ দুজনেই সভাপতি-সেক্রেটারী পদে প্রার্থী হন। যেটি ক্যাম্পাসে তীরস্কার স্বরুপ কামাল উদ্দীন’স মডেল নামে ব্যাপক পরিচিত।
ছাত্র ইউনিয়ন থেকে আসা কামাল উদ্দীন ও বঙ্গবন্ধু বিদ্যেষী ভূঁইয়াকে বঙ্গবন্ধু প্রেমিরা যখন কোনভাবেই মানতে নারাজ, তখন তারা তৎকালীন ব্যাপক সমাদৃত ভিসি অধ্যাপক হারুন-উর-রশিদ আসকারী’র শরণাপন্ন হন। বৈঠকের পর বৈঠক করে ভিসি, প্রোভিসি ও ট্রেজারারের হস্তক্ষেপে তারা নির্বাচিত হন। পরবর্তী শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে কামাল উদ্দীন’স মডেল অনুসরণ করলে ঐ দুজনেই দ্বিমত পোষণ করেন এবং অভিযোগ রয়েছে অনুপ্রবেশকারী আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে জামাতপন্থী প্যানেলে ভোট দিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রেমিদের পরাজিত করেন। যা, মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার পায়।
সরকারী গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যাচাই করে এই জঘন্য অপরাধী চক্রের মুখোশ উম্মোচন করা প্রয়োজন বলে একাধিক সিমিয়র শিক্ষক দাবী করেন।
ইবি বঙ্গবন্ধু পরিষদ: অধ্যাপক শাহজাহান আলীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের আহবায়ক কমিটি দিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের যাত্রা শুরু হয় ২০০৫ সালে। পরর্বতীতে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আলাউদ্দীন ও হারুন উর রশিদ আসকারী, অধ্যাপক আলাউদ্দীন ও মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী ও আইনুল ইসলাম, অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী ও অধ্যাপক রুহুল কেএম সালেহ।
ধারাবাহিকভাবে নির্বাচিত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু পরিষদ পরিচালিত হয়। হঠাৎ ২০১৬ সালের ৭ই এপ্রিল কেন্দ্র হতে ডাঃ এস এ মালেক স্বাক্ষরিত আইসিটি বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুরকে আহবায়ক করে কমিটি আত্মপ্রকাশ করলে ইবি বঙ্গবন্ধু অনির্বাচিত কমিটিকে মেনে না নিয়ে ১৬ ই এপ্রিল অধ্যাপক কাজী আখতার হোসেনের সভাপতিত্বে অধ্যাপক জাকারিয়া ও অধ্যাপক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করেন। সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয় মীর মোর্শেদুর রহমান।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর আবারো অনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটি হিসেবে আইসিটি বিভাগের মাহবুবুর রহমান ও মাহবুবুল আরেফিনের কমিটি আত্মপ্রকাশ করলে পাল্টা শিক্ষক ইউনিট নির্বাচনের মাধ্যমে অধ্যাপক রুহুল কে এম সালেহ ও ড. আবু হেনা মোস্তফা জামালকে নির্বাচিত করেন।
প্রতিবেদকের হাতে সকল কমিটি, ভোটার তালিকা, চাঁদা গ্রহনের তালিকা ও সাধারণ সভায় উপস্থিতির স্বাক্ষর সংরক্ষিত আছে। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে অভিযুক্ত অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়ার নাম কেবলমাত্র ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরের তালিকা ছাড়া কোথাও পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে কেবলমাত্র ইবির ট্রেজারার পদের লোভে দীর্ঘ ২৪ বছর অপেক্ষা করে তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু গুরু অধ্যাপক মুঈদ রহমান আজো যোগদান করেননি।
তৎকালীন প্রভাবশালী ছাত্রনেতা ও কর্মকর্তা ফেডারেশনের বর্তমান মহাসচিব মীর মোর্শেদুর রহমান বলেন, “এখন সময় এসেছে কারা বঙ্গবন্ধু প্রেমি ও কারা সুবিধাভোগী অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করা। কেউ দেশরত্ন শেখ হাসিনার চোখ ফাঁকি দিতে পারবে না বলে আমি মনে করি। তাঁকে ছাত্রজীবন থেকে চিনি। জামাত বিএনপির দোসর ছাড়া কেউ বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যাঙ্গ করে ‘বঙ্গবল্টু’ বলতে পারে না?? ছাত্রলীগের নামও তিনি শুনতে পারতেন না।
অনেক সিনিয়র শিক্ষকের সাথে কথা বললে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১/১১ আমরা চাঁদা তুলতে পাঠিয়েছিলাম সে ছাঁপ জানিয়ে দিয়েছে, আমি বঙ্গবন্ধু পরিষদ করিনা আবার চাঁদা কিসের? ইউনিয়ন সমর্থিত দুর্নীতির দায়ে পদচ্যুত সাবেক প্রোভিসি কামাল উদ্দীন, বাসদ সমর্থিত ও আওয়ামী সরকার বিদ্বেষী অধ্যাপক মুঈদ রহমান তাঁদের দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সুবিধা ভোগ করে এখন ট্রেজারার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তথ্য সংগ্রহ করে সরকারের কাছে প্রকৃত রহস্য জানাবেন বলে তাঁদের দাবি।
এই বিষয়ে প্রফেসর আলমগীর হোসেন ভুইয়া কে বক্তব্য নেওয়ার জন্য ফোন করা হলে তিনি বঙ্গবন্ধুকে কটুক্তি করার বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং তিনি বলেন, ছাত্রদলের কোন রাজনীতির সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা ছিল না সেই সাথে তথ্য সগ্রহকারীকে মামলার হুমকি প্রদান করেন।