তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা ছিল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অংশ।
তিনি বলেন, যেসব দেশি-বিদেশি চক্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি, তারা ভেবেছিল বাংলাদেশ কখনও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় যখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ তিন কোটি গৃহহারা মানুষকে পুনর্বাসন করে পোড়ামাটির ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ৭.৪ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে সমৃদ্ধির পথে এগোতে শুরু করল, তখন সেই সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নির্মমভাবে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় শোক দিবস-২০২০ উপলক্ষে ইন্সটিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ-আইডিইবি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী এ সময় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে শহীদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সব সদস্য, শহীদ জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন।
এদিন জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সনাতন ধর্মের সবাইকে শুভেচ্ছা জানান মন্ত্রী।
স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড পরিচালনার ধারাবাহিকতায় দেশবিরোধী অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন করার, পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এসবই ছিল একটি সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত রাষ্ট্রকে হত্যার ষড়যন্ত্র।
রাষ্ট্র পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতার উদাহরণ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু আইন করে আমাদের তেল ও গ্যাসক্ষেত্রগুলোকে বিদেশি মালিকানা থেকে উদ্ধার করে দেশের মালিকানায় নিয়ে আসেন। আজ আমরা আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ১ লাখ ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটারেরও বেশি সমুদ্রসীমার মালিক হয়েছি। এটি কখনই হতো না, যদি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত পরিষদ আনক্লস-এর সদস্য না হতেন, সেই সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর না করতেন। আর যে ছিটমহল চুক্তিকে অনেকে গোলামির চুক্তি বলতেন, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর করা সেই চুক্তির আলোকেই আজ আমাদের স্থলসীমা বেড়েছে বলে স্মরণ করিয়ে দেন ড. হাছান মাহমুদ।
বঙ্গবন্ধু তার সব স্বপ্নপূরণ করে যেতে পারেননি, কিন্তু তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অদম্যগতিতে এগিয়ে চলছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, পাঁচ মাসের করোনাভাইরাস মহামারীতে অনেক কিছু বন্ধ থাকলেও কেউ অনাহারে মৃত্যুবরণ করেনি। আমরা বিদেশে সাহায্য পাঠিয়েছি, এমনকি আমাদের রফতানি আয় গত বছরের এই সময়ের থেকে বেড়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশ আজ খাদ্যে উদ্বৃত্ত, স্বল্পোন্নত থেকে মধ্যম আয়ের কাতারে উন্নীত। কিন্তু এসব উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বিএনপি ও তাদের সমমনা যারা চোখ থাকতেও দেখে না, কান থাকতেও শোনে না, তারা যেন আর অন্ধ-বধিরের মতো আচরণ না করে, সেজন্য আমি মহান স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি।’
আইডিইবি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি একেএমএ হামিদের সভাপতিত্বে কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুর রহমান, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক মো. ফজলুর রহমান, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং আইডিইবির সহ-সভাপতি একেএম আবদুল মোতালেব, ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম, কারিগরি ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
সভার শুরুতে হাফেজ মো. রফিকুল ইসলাম পবিত্র কুরআন ও পুরোহিত রতন চক্রবর্তী পবিত্র গীতা থেকে উদ্ধৃতি পাঠ করেন। সূত্র-যুগান্তর