গত ৩০ বছরে মেহেরপুরে ভেণ্ডার লাইসেন্স (জুডিশিয়াল, নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, টিকিট বিক্রেতা) পেয়েছেন ৫২ জন। তার মধ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরেই পেয়েছেন ১২ জন। আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তনের পরে বদলির আদেশ পেয়ে এ কাজ করেছেন সদ্য বিদায়ী ডিসি মো: শামীম হাসান।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, বিনামূল্যের ভেণ্ডার লাইসেন্স পেতে এ ১২ জনের জনপ্রতি লেগেছে লক্ষাধিক টাকা। ৩০ বছরের রেকর্ড ভেঙে একই বছরে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে ১২ জনকে ভেণ্ডার লাইসেন্স দিয়েছেন তিনি। বদলি হওয়ার আগে সুকৌশলে তিনি একাজটি করে মেহেরপুর থেকে বিদায় নিয়েছেন। অথচ বছরের পর বছর আবেদন করেও অনেকেই পাননি লাইসেন্স। এমন আবেদনকারীর সংখ্যাও রয়েছে শতাধিক। এছাড়াও ভেন্ডার লাইসেন্স নবায়ন করতেও এলআরফাণ্ডের নামে নিয়েছেন অতিরিক্ত অর্থ। প্রতি অর্থ বছরে ২ থেকে ৩ জন বা কোন অর্থ বছওে সর্বোচ্চ ৬ জন নিবন্ধন পেলে আলাদিনের চেরাগের মত ২০২৪-২৫ চলমান অর্থবছরে নিবন্ধন পেয়েছেন ১২ জন। যা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভেণ্ডার অভিযোগ করেন সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে অনেকগুলো ভেন্ডার লাইসেন্স দিয়ে চলে গেছেন। এ ধরণের একটি খবর আসলে তা যাচাইয়ের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে স্ট্যাম্প ভেণ্ডারের নিবন্ধন তালিকা চেয়ে আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন থেকে একটি তালিকা সরবরাহ করা হয়।
ভেণ্ডারদের অভিযোগ ও তালিকা বিশ্লেষণ করে চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে নবায়নকৃত ৫২ জন ভেণ্ডার রয়েছেন। ১৯৯৫-৯৬ অর্থ বছর থেকে ভেণ্ডার নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। ওই অর্থ বছরে নিবন্ধন পান মো: সামসুল ইসলাম, মো: ফুজায়েল হক, মো: শওকত আলী। ১৯৯৬-৯৭ অর্থ বছরে মো: আশরাফুল ইসলাম। তিন বছর বাদ দিয়ে ২০০০-০১ অর্থ বছওে মো: আব্দুল মান্নান। ২০০২-০৩ অর্থ বছরে মো: আয়ুব আলী, ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে মো: আরোজ আলী, ২০০৪-০৫ অর্থ বছরে মো: লুৎফর রহমান, মো: নুর ইসলাম, মো: আফাজ উদ্দিন, মো: বরকতুল্লাহ, ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে মো: মতিউর রহমান, ২০০৬-০৭ অর্থ বছরে মো: সজিব, মো: সাজ্জাদ হোসেন, মো: হুমায়ন কবীর রতন, ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে মো: আব্দুল আজিজ, মো: জারজিস, ২০১১-১২ অর্থ বছওে মো: আরিফ শেখ, ২০১২-১৩ বছরে মো: শিহাব উদ্দীন, মো: রবিউল ইসলাম, অপূর্ব কুমার সাহা, মো: হাসানুজ্জামান, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে মো: সিরাজুল ইসলাম, মো: গিয়াস উদ্দিন, শেখ শহীদ ইকবাল, মীর ফারুকুজ্জামান, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে সনজিৎ পাল বাবু, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে মো: জাব্বারুল ইসলাম, মো: আনিসুর রহমান, মো: ওছাইদ আলী, মো: ফারুক হোসেন, মো: খাইরুল ইসলাম, মোছা: মাহফুজা খাতুন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছওে মো: নাহিদ হাসান, মো: আব্দুল সবুর, ২০১৯-২০ অর্থ বছওে মো: মনিরুজ্জামান কাজল, মো: আজিজুর রহমান, মো: আবু বক্কর, মো: মাসুদ রানা, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে মো: মোস্তাফিজুর রহমান, ২০২৪-২৫ অর্থ বছওে মো: ইকবাল, সোহেল রানা, মামুনুর রশিদ, কাজী মো: বাকি বিল্লাহ, মো: ইয়ারুল ইসলাম, মো: হাসানুজ্জামান, মোহা: শাহাবুদ্দীন, মো: শামীম আজাদ, ইব্রাহিম খলিল, মো: তানজিমান আলী, মো: মাসুম রেজা, মো: হাসান রেজা।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরে নিবন্ধন না পাওয়া ওলিয়ার রহমানের সাথে কথা বলে কালের কণ্ঠর প্রতিবেদক । ওলিয়ার জানান, ইউএনও অফিস থেকে আমার ভেরিফিকেশন হওয়ার পরও আমি লাইসেন্স পাইনি। মুজিবনগর থেকে একজন লাইসেন্স পেয়েছেন ৮০ হাজার টাকা দিয়ে। আমি কারো সাথে যোগাযোগ করিনি বলে আমার লাইসেন্স হয়নি। তিনি আরও বলেন, একশ’র বেশি আবেদন জমা পড়ে রয়েছে এখনও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক পুরাতন একজন ভেণ্ডার প্রতিবেদককে বলেন, একেকজনের প্রায় লক্ষাধিক টাকা লেগেছে লাইসেন্স পেতে। তাকে নতুন লাইসেন্স পাওয়া একজন জানিয়েছেন। তার কথা মত এ অর্থবছরে নিবন্ধন পাওয়া একজনের সাথে বসেছিলেন এ প্রতিবেদক কিছুটা গোপনিয়তা রক্ষা করেন। সাংবাদিক পরিচয় দিলে কথা বলতে না চাওয়ায় কৌশলে নতুন লাইসেন্স পাওয়া ওই ব্যক্তির সাথে বসা হয় লাইসেন্স কিভাবে পেতে হয় তা জানতে। কথোপকথনের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আবেদন করে যোগাযোগ করলে লাইসেন্স পাওয়া যায়। ডিসির এল আর ফান্ডে বেশ কিছু টাকা জমা দিতে হয়। তিনিও সেখানে টাকা জমা দিয়েছেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর তারিখ দিয়ে জেলা প্রশাসকের সাক্ষর করা লাইসেন্স তিনি পেয়েছেন ১৭ সেপ্টেম্বর। তবে কত দিয়েছেন এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন ভালোই দিয়েছি। প্রশ্ন করা হয় বিভিন্ন জনের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে ৮০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা লেগেছে, আপনারও কি এই পরিমান লেগেছে , জবাবে তিনি বলেন, আমার একটু কম লেগেছে।
মেহেরপুর জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী আল মামুন অনল বলেন, ভেণ্ডার লাইসেন্স ডিসিরা তাদের ক্ষমতায় দেন। তবে একই অর্থবছরে এর আগে এতজন লাইসেন্স পাননি। এবছর এতজনকে লাইসেন্স দেওয়ার পেছনে অনৈতিক দূরভিসন্ধি রয়েছে এটা ধরে নেওয়ায় যায়। সরকার পরবর্তিনের পর সাবেক জেলা প্রশাসক বদলি হওয়ার আগে অতি গোপনে এতজনকে লাইসেন্স দিয়ে গেছেন। এর সুষ্ঠ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে সাবেক জেলা প্রশাসন মো: শামীম হাসানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে কথা না বলে কেটে দেন। পরে আবার ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।