মেহেরপুর পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা কিন্তু ৪ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকার নাগরিক সেবা তৃতীয় শ্রেণীর মতন এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। বাসিন্দারা নাগরিক অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
নির্বাচনের সময় নানা ধরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি কোনকিছুই। নিজেদের সুবিধা অসুবিধা জানানোর লোক নেই। অনেকের অভিযোগ অসুবিধার বিষয়গুলো কাউন্সিলরকে অবগত করলেও কোন সুফল মেলেনা। দেখা মেলে না কাউন্সিলরের।
অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণের কারণে ভোগান্তিতে এলাকাবাসী। ড্রেনের পানি থেকে দুর্গন্ধ ও মশা-মাছির উপদ্রপে অতিষ্ট জীবন। মাসের পর মাস ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করায় ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে।
অনেক এলাকায় ড্রেনের গাইড ওয়াল ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশন তো হয় না উল্টো ড্রেনের পানি বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। প্রায় অনেক এলাকায় ড্রেনের গাইড ওয়াল ভাঙা। অধিকাংশ ড্রেনের নেই ঢাকনা।
কিছু এলাকায় ড্রেনের মধ্যেই ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে পানি নিষ্কাশন একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করা ও ড্রেনের ভিতরে ময়লা ফেলা অসচেতন কিছু নাগরিকদের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অনেককেই। যার কারণে পরিস্থিতি মেনে নিয়েই বসবাস করতে হচ্ছে এলাকাবাসীদের।
মেহেরপুরের হঠাৎপাড়া, শেখপাড়া, কালাচাঁদপুর, খানপাড়া একাংশ, তাঁতীপাড়ার একাংশ, নতুনপাড়া, মাঠপাড়া, বেড়পাড়ার একাংশ ও ফুলবাগানপাড়া নিয়ে গঠিত মেহেরপুর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি ডিগ্রী কলেজ, ১টি টেকনিক্যাল স্কুল (বর্তামানে বন্ধ)। ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৪৬৮৯ জন তবে আরো কিছু নতুন ভোটার বেড়েছে। ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর মোঃ শাকিল রাব্বী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৪ নং ওয়ার্ডের কিছু উন্নয়ন হলেও পাড়ার ভিতরের চিত্র ভিন্ন। সড়কে বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দর, ড্রেনেজ ব্যবস্থার দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার ও পুণঃ নির্মাণ হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীদের। নেই ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গা। বসবাস করতে হচ্ছে বসতবাড়ির আশেপাশে ড্রেনের গাইড ওয়াল ভাঙা ও ঢাকনা বিহীন ড্রেনের পাশে দূর্গন্ধময় কাঁদা পানি, ময়লা আবর্জনার স্তুুপ। পাড়া মহল্লার ভিতরে যে সমস্ত ড্রেনগুলো আছে যা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়না। গাইড ওয়াল ভাঙা ও ঢাকনা বিহীন এসকল ড্রেনের দূর্গন্ধময় কাঁদা পানি, ময়লা আবর্জনায় ভরা। ৪নং ওয়ার্ডের প্রতিটি পাড়ার একই চিত্র দেখা মেলে। প্রথম শ্রেণির পৌরসভার খুব বেশি উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই ৪ নং ওয়ার্ডে।
কালাচাঁদপুর এলাকার সুজন বলেন, আমাদের এলাকার ড্রেনগুলো অপরিকল্পিত ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। বৃষ্টি ও দৈনন্দিন ব্যবহারের পানি নিষ্কাশন তো হয়ই না, উল্টো ড্রেনের পানি বাড়িতে প্রবেশ করে। নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে ড্রেন নিমাণ করায় এই ড্রেনের বিভিন্ন জায়গায় এমনিতেই ড্রেনের গাইড ওয়াল ভেঙ্গে পড়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। বর্ষার সময় পুরো রাস্তাতে হাটু পানি থাকে। ড্রেনের দূর্গন্ধময় পানি আজও টিউবয়েলের পাড়ে জমে আছে। এখন এমন এক অবস্থা গন্ধে টিউবয়েলের পানিও খাওয়া যায় না। এমন ড্রেন রাখার চাইতে না রাখাই ভালো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুলবাগানপাড়ার একজন বাসিন্দা বলেন, পাড়ার ভিতরে ড্রেনগুলোর অবস্থা ভালো না। ড্রেনগুলো ঠিকমত পরিষ্কার করে না। ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট কোন জায়গা না থাকায় পাশে লোকের জায়গায় আবর্জনা ফেলতে হয়। সমস্ত ড্রেনই ঢাকনা বিহীন। ড্রেনের পাশেই অনেকে তৈরী করেছেন সার গর্ত যেখানে প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে বাড়ির দৈনন্দিন আবর্জনা,গরুর গবরসহ যাবতীয় ময়লা। এগুলো আবার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নামছে ড্রেনের ভিতরে।
নতুনপাড়ার কুদ্দুস আলী সহ একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, রাস্তাগুলো মোটামুটি ভালো থাকলেও ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করায় পানি নিষ্কাশন হয়না। কত বছর যে ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয়নি তা জানা নেই। তাছাড়া এলাকায় ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় যেখানে সেখানে ময়লা পড়ে থাকে। ভুল করেও এদিকে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা আসে না। প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় বসবাস করেও মনে হয় গ্রামে বসবাস করছি।
একই এলাকার শহিদুল ইসলামের স্ত্রী বলেন, বাড়ির ভিতরে ড্রেন। ড্রেনে নেই কোন ঢাকনা। যার কারণে বাড়ির ব্যবহৃত ও বৃষ্টির পানিতে সবসময় জলবদ্ধতা হয়ে থাকে। ড্রেনের কাঁদা ও পচা পানির দূর্গন্ধে বাড়িতে বসবাস করা যায় না। বারবার বলেও এর প্রতিকার মেলেনি। ঢাকনাবিহীন ড্রেনের কারণে মশার-মাছির উপদ্রপে বসবাস করায় মুশকিল। ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গার অভাবে পাড়ার ভিতরে সড়কের পাশে দূর্গন্ধময় ময়লা আবর্জনায় স্তুুপ হয়ে পড়ে থাকে।
ওয়ার্ডের উন্নয়ন চিত্র-
এলাকার উন্নয়নের মধ্যে নতুনপাড়া কবরস্থান রোড ফ্লাট সোলিং। মাঠপাড়া পিয়রুলের বাড়ি থেকে নেঙ্গু ফকিরের বাড়ি পর্যন্ত ফ্লাট সোলিং। আক্তারুলের বাড়ি থেকে মহাসিন ফকিরের বাড়ি পর্যন্ত ফ্লাট সোলিং। মহাসিন ফকিরের বাড়ি থেকে হাবলুর বাড়ি পর্যন্ত ফ্লাট সোলিং। রবুর বাড়ি হতে বাবুর বাড়ি পর্যন্ত ফ্লাট সোলিং। মালেকের বাড়ি হতে নুর মহাম্মদের বাড়ি পর্যন্ত ফ্লাট সোলিং।
মেহেরপুর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাউন্সিলর মোঃ শাকিল রাব্বী বলেন, বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে আমার ওয়ার্ডে কোন উন্নয়নমূলক কাজ আমি করতে পারিনি। কিছু টিআর প্রকল্প পেয়েছিলাম তা দিয়ে এলাকার কিছু কাজ করেছি। আমি কোন উন্নয়ন করতে পারিনি।