মেহেরপুর সদর উপজেলার বর্শিবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে বর্শিবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের যোগসাজসে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আবু সাইদ, সহকারী শিক্ষিকা নারগিস সুলতানা (সামাজিক), ফিরোজা খাতুন (ইংরেজী), লাইব্রেরিয়ান আঁখি তারা, ধর্ম শিক্ষক মোঃ শরিফুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষিকা জাহানারা খাতুন (সামাজিক ৬ষ্ঠ-খ শাখা) ছাত্র-ছাত্রীদের নামের পাশে নিজের ও আত্মীয় স্বজনদের মোবাইল নাম্বার বসিয়ে এই উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করেছেন।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে মেহেরপুর প্রতিদিন এর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল। ছাত্র-ছাত্রীদের নামের বিপরীতে মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করলে এর সত্যতা বেরিয়ে আসে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে স্টুডেন্ট আইডি-১৯১১৮২৯০০০০৩২৯, ছাত্রীর নাম মোছাঃ রোকেয়া খাতুন, পিতা-মোঃ রবিউল ইসলাম এর বিপরীতে যে বিকাশ নম্বরটি ব্যবহার হচ্ছে সেটি ০১৯২৪৪৩১৮৭৫।
নাম্বারটি ব্যবহার করছেন বর্শিবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান আঁখি তারা। এই নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার নাম সীমা। তার বাড়ি দারিয়াপুর। উপবৃত্তির টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোনের সংযোগ কেটে ফোন বন্ধ করে দেন। স্টুডেন্ট আইডি-১৯১১৮২৯০০০০৩৩১, ছাত্রীর নাম মোছাঃ লামইয়া খাতুন, পিতা-মোঃ নজরুল ইসলাম। এর বিপরীতে যে বিকাশ নম্বরটি ব্যবহার হচ্ছে সেটি ০১৯১৬১৩৯৮৯১। নাম্বারটি ব্যবহার করছেন বর্শিবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জাহানারা খাতুন (সামাজিক ৬ষ্ঠ-খ শাখা)। এই নাম্বারে যোগাযোগ করে ছাত্রীর মোবাইল নাম্বারের স্থানে আপনার নাম্বার কেন জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়ে
আমি কিছু জানিনা। স্টুডেন্ট আইডি-৬২৫৭৮৭০৩০৩০৪৮০, ছাত্রের নাম মোঃ রাজু আহমেদ, পিতা-মোহাম্মদ আলী। এর বিপরীতে যে বিকাশ নম্বরটি ব্যবহার হচ্ছে সেটি ০১৭২৭৮৮৮১৬৯। নাম্বারটি ব্যবহার করছেন বর্শিবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আবু সাইদ এর বোন আঁখি খাতুন। এই নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজের নাম আঁখি বলে স্বীকার করেন। পরে সাংবাদিক পরিচয়
পাওয়ার পর আঁখি খাতুন বলেন নাম্বারটি আমার না। এটা আমার আব্বার নাম্বার। উপবৃত্তির কথা বলতেই তিনি গড়িমসি শুরু করে রং নাম্বার বলে ফোনের সংয়োগ বিছিন্ন করে দেন। স্টুডেন্ট আইডি-৮২৫৭৮৭০৫০১০৭৪৪, ছাত্রীর নাম আফসোনা খাতুন, পিতা-মোঃ আসাদুল হক। এর বিপরীতে যে বিকাশ নম্বরটি ব্যবহার হচ্ছে সেটি ০১৯৫৫৬৮৩০৬৪। নাম্বারটি ব্যবহার করছেন বর্শিবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা নারগিস খাতুনের বোন। এবিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
স্টুডেন্ট আইডি-৭২৫৭৪৭০২০৩০০০৫, ছাত্রীর নাম মোছাঃ তানিয়া খাতুন, পিতা-মোঃ রবিউল ইসলাম। এর বিপরীতে যে বিকাশ নম্বরটি ব্যবহার হচ্ছে সেটি ০১৭৫২১৮৫৩৭৫। নাম্বারটি ব্যবহার করছেন বর্শিবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফিরোজা খাতুন। এবিষয়ে জানতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। স্টুডেন্ট আইডি-৭২৫৭৪৭০৫০১০৬৩৫, ছাত্রের নাম মোঃ রাজিব আলী, পিতা-মোঃ আশরাফুল হক। এর বিপরীতে যে বিকাশ নম্বরটি ব্যবহার হচ্ছে সেটি ০১৯৯৬৩৪৩৮৮২। নাম্বারটিতে
যোগাযোগ করে রাজিব কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান আমি রাজিব না। তার নাম জানতে চাইলে তিনি তার নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানান। ঠিকানা জানান কুষ্টিয়া। বর্শিবাড়িয়া স্কুলের উপবৃত্তির টাকা আপনার বিকাশে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি কিছু জানিনা আন্দাজে কি বলেন এসব বলে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
বর্শিবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি গোলাম মোস্তফা শান্তি বলেন, উপবৃত্তির টাকা দিতে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ ছাত্র প্রতি ২০০ টাকা করে নিয়েছিলো। আমি তার প্রতিবাদ করলে সেসকল টাকা ফেরত দেয় প্রধান শিক্ষক। পরবর্তীতে আবার ১০০ টাকা করে নিয়েছে ছাত্র প্রতি। যারা এবিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে তাদের নাম বাদও দেওয়া হয়েছে।
সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: আনোয়ার হোসেন জানান, এ ধরণের অভিযোগের কথা শুনেছি। আমরা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের বিষয়ে উর্ধতন মহলে জানাবো।