করোনা ভাইরাস সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারিতে প্রতিটি দেশের অর্থনীতি ও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সাথে সৃষ্টি হয়েছিল ভয়, সংক্রমণ ও মৃত্যুর সুদীর্ঘ তালিকা। দুই বছরের মত মানুষ ছিল ঘরের মধ্যে বন্দি। ঘরের মধ্যে বন্দি থেকে আরও ভয়াবহ ও দীর্ঘ হয়েছিল প্রতিটি দিন প্রতিটি ক্ষণ।
যখন বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ উন্নত বিশ্বে আবিস্কৃত প্রতিষেধক তাদের নিজেদেরকে সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য কিনতে ও ব্যবহার করতে পারছে না। তখন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বলিষ্ট ভূমিকা রেখে (আবিস্কৃত টিকার মেধাস্বত্ববিহীন করার প্রস্তাব দিয়ে অনুমোদন করিয়ে) সেই বৈশ্বিক মহামারি থেকে বাংলাদেশের মানুষদেরকে বাঁচানোর জন্য সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন দেশের আটটি ভ্যাক্সিন।
যেখানে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, কয়েক লক্ষ মানুষ মারা যেতে পারে বাংলাদেশে। সেই টিকা কিনে বিনা মূল্যে প্রয়োগ করে নিরাপদ স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করেছিলেন এবং বাঁচিয়েছিলেন লক্ষ মানুষকে প্রাণ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রণোদনা দিয়ে অর্থনীতিকে করেছিলেন সচল। তিনি স্বাস্থ্য সেবা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় পরামর্শ কমিটি গঠন করেছিলেন এবং সেইসাথে অধিদপ্তর ভিত্তিক কিছু কমিটিও গঠিত হয়, যেখানে বিশেষজ্ঞ সদস্যরা সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে নিশ্চিত করেছিলেন মানুষের জীবনের সুরক্ষা। বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে সৃষ্টি করেছিল জনসচেতনতা।
তাঁর নির্দেশে তৈরি জাতীয় পরামর্শ কমিটি ও অধিদপ্তর ভিত্তিক কমিটিগুলো মহামারির শুরুতেই কোভিড রোগী সনাক্তকরণে ব্যবহৃত কিট, পিপিই, অক্সিজেন ও মেশিনপত্র আমদানিতে শুক্ল মওকুফ করে মানুষের ব্যবহারের সুবিধা করে দিয়েছিল। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অধীনে আমদানি অনুমোদন, তৈরি, সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করেছে সেই সময়ের জীবন রক্ষাকারী প্রয়োজনীয় ওষুধসমূহের। যার ফলে স্বল্প ব্যয়ে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সকল কোভিড রোগী সনাক্ত করা, আইসোলেশনে রাখা ও চিকিৎসা করা সম্ভব হয়েছিল।
প্রয়োজন অনুযায়ী কোভিড-১৯ রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা সুনিশ্চিত করতে নতুন নতুন বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশেষ প্রক্রিয়ায় নতুন চিৎিসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা করেছিলেন। জটিল রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করার জন্য জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করেছিলেন। কোভিড রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য প্রতিবেশী দেশ থেকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন আমদানিও করেছিলেন।
শুধু তাই নয়, হাসপাতালে করোনা রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা যাতে ব্যঘাত না ঘটে সেজন্য চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছিলেন। এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ রাখতে তাদেরকে হোটেলে রেখে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত রেখেছিলেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বলিষ্ট নেতৃত্বে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে যে অবদান রেখেছিলেন তার সুফল পেয়েছিল বাংলাদেশ। অর্থনীতিকে রাখতে পেরেছিলেন সচল। তাঁর শক্তিশালী নেতৃত্ব ও সর্বক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি পূর্ণ মনোভাব সাধারণ মানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন আস্থার ও ভরষার আশ্রয়স্থল।
লেখক: ডিন, ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।