কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী রবিউল ইসলাম বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা মানেই বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু মানেই মুক্তিযোদ্ধা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একে ওপরের পরিপূরক। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে কল্পনা করা যায় না। তিনি ছিলেন স্বাধীনতার প্রতীক ও খাঁটি দেশপ্রেমিক। তিনি বাংলার মাটি ও মানুষের জন্য অকাতরে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। বাংলার জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন।
শনিবার বিকেলে কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী বঙ্গবন্ধুর পরিচিতি হচ্ছে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে। দেশ বরেণ্য, বিশ্ব বরেণ্য রাজনীতিবিদ। মানব প্রেমী, অনন্য সাধারণ একজন রাজনীতিবিদ যিনি তাঁর জীবদ্দশায় নির্যাতিত-নিপীড়িত, নিষ্পেষিত বাঙালি নামক একটি জনগোষ্ঠীকে চির দিনের জন্য স্বাধীন করে গেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস যতদিন থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অম্লান থাকবেন বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও বীরত্বের কাহিনী জানাতে হবে। একইভাবে হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল শামসের হত্যা, নারী নির্যাতন, নিপীড়ন আর তাদের পৈশাচিকতা সম্পর্কেও জানাতে হবে। যাতে করে তারা উভয়পক্ষের কথা জেনে সামগ্রিক মুক্তিযুদ্ধকে বুঝতে পারে। না হলে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ আর বীরত্বের কথা ভুলে যাবে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনযাপন সুন্দর ও সচ্ছল করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা মাসিক ৩০০ টাকা থেকে ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি করে মাসিক ২০,০০০টাকা নির্ধারণ করেছেন।
ঈদ বোনাস ও উৎসব ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়া বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস সহ বিভিন্ন দিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজ নেন, কুশলাদি বিনিময় করেন।
কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন্সী মোঃ মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মৃনাল কান্তি দে, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আসম আখতারুজ্জামান মাসুম, জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ জায়েদুর রহমান, কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি (অপারেশন) শফিকুল ইসলাম।
কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাইজাল আলী খান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আলহাজ্ব রফিকুল আলম টুকু ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোশাররফ হোসেন।
স্মৃতিচারন করে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে প্রাকৃতিক নিয়মেই অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরলোকগমন করেছেন। বয়সের হিসাব করলে আগামী ২০ বছর পর জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নাও থাকতে পারে।
আগামী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অসংখ্য মূল্যবান ঘটনাবলী মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট থেকে সরাসরি শোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। তখন হয়তোবা পত্রিকা ম্যাাগজিন পড়ে কিংবা আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মুখেন কথাগুলো ভিডিও আকারে শুনতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন্সী মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, ব্যক্তি, পরিবারের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে জাতিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দেওয়ার দৃঢ় সংকল্পে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে নেমেছিলেন। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষায় সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ আলী জোয়ার্দ্দার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কবি কনক চৌধুরী। অনুষ্ঠান শেষে ২০জন বীর মুক্তিযোদ্ধােেক প্রত্যেককে দুই হাজার টাকা ও ফুলেল শুভেচ্ছা তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।
পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীরা।