মেহেরপুরে একমাসে মোটরসাইকেল রেসিং প্রতিযোগীতায় সড়কে তিন জনের মৃত্যু ও আহত হয়েছেন ডজন খানেক যুবক। এর মধ্যে নিহত ও আহতরা অধিকাংশই যুবক।
গত সোমবার সন্ধ্যায় বিট করে মুজিবনগরে রেস দিতে এসে রেসিংয়ে প্রাণ হারালেন চাঁদ মিয়া (২৫) নামের এক যুবক। এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের ইয়াহিয়া নামের এক ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধি ও রাব্বি হোসেন নামের আরো এক যুবক মারা গেছেন। এ দুটি ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো চার যুবক।
জানা গেছে, ফারসি নামের এক যুবক রেসিং প্রতিযোগীতার আয়োজন করে সোমবার সন্ধ্যায়। সেখানে বলা হয় ৩ টা মটরসাইকেল নিয়ে মুজিবনগরে রেস দিতে হবে। যে সর্বপ্রথম মুজিবনগর গেটে পৌছাতে পারবে তাকে ৫হাজার টাকা, যারা হেরে যাবে তারা দিবে এ টাকা। এমন বিটের কারনে চাঁদ মিয়া রেসিং শুরু করে। রেসিং চলাকালীন সময়ে চাঁদ মিয়া মুজিবনগর গেটের কাছে পৌছালে তার বাইক নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সরাসরি মুজিবনগর কমপ্লেক্স গেটের সাথে ধাক্কা খায় এবং সাথে সাথে মাটিয়ে লুটিয়ে পরে। পরে স্থানীয় জনগন তাকে মুজিবনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। সাথে আহত রিজোকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
মুজিবনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হাশেম জানান, চাঁদ মিয়া ও রিজো রাধাকান্তপুর গ্রাম থেকে একটি ডিসকভারি মোটরবাইক নিয়ে দ্রুত গতিতে মুজিবনগরের দিকে যাচ্ছিলো। মুজিবনগর গেটের কাছে পৌছালে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সরাসরি কমপ্লেক্স গেটের সাথে ধাক্কা দিয়ে সেখানেই লুটিয়ে পরে তার মৃত্যু হয়। এদিকে নিহতের ব্যাক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে কারও কোন অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়ায় লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, মেহেরপুর সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের সৌদি প্রবাসী মুজিবুর রহমানের ছেলে ফারসী (২২), ইয়ার আলী ছেলে মহাব্বত আলী (২২), ফরিকুল ইসলামের ছেলে সরিন (১৬), এই তিনজন প্রায় রেস এর আয়োজন করে। সোমবার ঘটনার পর থেকে এই তিন জন আত্মগোপনে রয়েছেন।
রেসের ধরন- সদর উপজেলার বন্দর পিটিআই মোড় থেকে চকশ্যামনগর পর্যন্ত সর্ট রেস এবং একই সড়কের মুজিবনগর গেট পর্যন্ত লং রেস এবং মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা রোডের কলেজ মোড় থেকে দিনদত্ত ব্রিজ পর্যন্ত এই দুটি রাস্তাতে এই মোটরসাইকেল রেস হয়ে থাকে। সর্ট রেস ৫শ থেকে এক হাজার টাকা এবং লং রেস ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা টাকা পর্যন্ত পাইজমানি থাকে। প্রতিযোগীরা এই পরিমান টাকা জমা দিয়ে রেসে অংশ নিতে পারে কিন্তু প্রথম স্থান অধিকারী এই পুরস্কার পেয়ে থাকে। তবে এ ধরণের কোন তথ্য মেহেরপুর পুলিশের কাছে নেই।
মেহেরপুরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর বিএম ফেরদৌস হাসান বলেন, গতমাসে শুধু মোটরসাইকেলের কেস হয় ২২৮টি এবং চলতি মাসের আজ পর্যন্ত মামলার সংখ্যা ২০০। আমরা মাঝে মধ্যে সন্ধ্যার পরেও চেক পোষ্ট বসিয়ে অভিযান চালাই। তাছাড়া নিয়মিত অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে সড়কের নিরাপদ রাখার চেষ্টা করছি। তবে মটোরসাইকেল রেসিং প্রতিযোগীতার কোন তথ্য তাদের কাছে নেই।
মেহেরপুর পুলিশ সুপার মো: রাফিউল আলম বলেন, অল্প বয়সি ছেলেদের মোটরসাইকেল কিনে দিয়ে বাবা মা আত্মঘাতী সিন্ধান্ত নিচ্ছেন। সড়কের পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা এবং মামলা দেওয়া সত্তেও মাঝে মধ্যে হৃদয় বিদারক কিছু দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। দুর্ঘটনা রোধে অভিভাবকসহ সমাজের সচেতন মহলকে কার্যকর ভুমিকা রাখতে হবে।