গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পর দলটির কার্যালয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভুয়া উপদেষ্টা আরেফির মিথ্যাচার ছড়ানোর ঘটনায় জড়িত থাকায় দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেন। লাইভে এসে তিনি এই কথা বলেন।
বিএনপির কার্যালয়ে বসে মার্কিন নাগরিক মিয়া আরেফির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ইশরাক হোসেন লাইভে বলেন, ‘আরেফি তার বক্তব্য রাখার এক পর্যায়ে ‘আপত্তিকর’ কথা বলা শুরু করে, যার মধ্যে কূটনৈতিক শিষ্টাচার ছিলো না। কিন্তু ওই মুহূর্তে সংবাদ সম্মেলন থেকে ক্যামেরার সামনে থেকে উঠে যাওয়ার ইচ্ছা হলেও তা পারেননি বলে জানিয়েছেন ইশরাক হোসেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন যে, ২৮ অক্টোবর তিনি কয়েকটি ‘গুলিবিদ্ধ’ হয়েছিলেন এবং ট্রমাটাইজ ছিলেন। পুরো বিষয়টি বুঝে ওঠার আগে আরেফির সংবাদ সম্মেলনটি ঘটে গেছে, বলে তিনি যোগ করেন। সেই সময় কারও সাথে কথা বলার মতো পরিস্থিতি ছিলো না। এই অবস্থায় যা হয়েছে তা করা উচিত হয়নি জানিয়ে সবার কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন তিনি।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন আরও জানিয়েছেন, ঘটনাটির পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় রুহুল কবির রিজভীকে পুরো ঘটনাটি বর্ণনা করেন। তিনি কোন পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন, তা তিনি রিজভীকে বুঝিয়ে বলতে সক্ষম হন। ঘটনাটি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অবহিত করতে তিনি রিজভীকে অনুরোধ করেন। গ্রেপ্তার এড়াতে মুখ ঢেকে তিনি গন্তব্যে পৌঁছে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দিন স্বপন এবং দলটির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খানের মাধ্যমে দলের মহাসচিবকে পুরো ঘটনাটি জানান। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গেও তখন তিনি যোগাযোগ করে পুরো ঘটনাটি খুলে বলেন। বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকেও বিষয়টি অবহিত করে দুঃখপ্রকাশ করেন।
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া মার্কিন নাগরিক মিয়া আরেফি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, বিএনপির অফিসে বসে সে যা যা বলেছে, তা তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকেই শিখিয়ে-পড়িয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বেতনভুক্ত সাংবাদিক মুশফিকুর ফজল আনসারীর বন্ধু সে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা জামায়াতে ইসলামির লোকজনের কাছে আরেফিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় মুশফিকুর ফজল আনসারী। আরেফি বাংলাদেশে তৎপরতা চালানোর সময় তার যাবতীয় ব্যয়ভার জামায়াতে ইসলামিকে বহনে রাজি করায় মুশফিকুর। পুরো কাজটির জন্য তারেক রহমানের অনুমতি জোগাড় করে মুশফিক। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন ও ইশরাক হোসেনকে বার্তা দেন তারেক। ফলে বিএনপি অফিসে সহজে ঢুকতে পারে আরেফি আর সারওয়ার্দী। এভাবেই এই ঘটনায় যোগ দেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।
মিয়া আরেফি বাংলাদেশে কার সঙ্গে থেকে কাজ করবে তাও বলে দেয় জামায়াতে ইসলামি। লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সারওয়ার্দীকে সামনে রেখে অন্তর্বতী সরকারের কাঠামোর দাঁড় করাতে চাইছে জামায়াত। সেই সারওয়ার্দী আরেফির দায়িত্ব নেন।
২৮ অক্টোবর আরেফিকে নিয়ে বিএনপি অফিসে যান সারওয়ার্দী। বিএনপি হাই কমাণ্ডের নির্দেশ ও মুশফিকুর ফজল আনসারীর আনসারীর অনুরোধে সংবাদ সম্মেলন করে আরেফি। সেখানে আরেফি আর সারওয়ার্দীর মাঝখানে বসে থাকতে দেখা গেছে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে। ভুয়া উপদেষ্টা আরেফির মিথ্যাচার ছড়িয়ে পড়লে মার্কিন দূতাবাস তার ব্যাপারে সত্য তথ্য জানিয়ে দেয়। এরপর তাকে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয়।