নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ না যেতেই প্রকৃতিতে নেমেছে শীতের আমেজ। বাজারে বেশ কয়েকটি শীতের শাক-সবজিরও দেখা মিলছে, তবে দামের ‘উত্তাপ’ আগের মতোই।
বেশির ভাগ সবজির দর এখনো ৭০ টাকার ওপরে। অথচ প্রতিবছর এ সময়টায় শীতের নতুন সবজি ব্যাপকভাবে বাজারে উঠতে শুরু করে। সে অনুযায়ী কমতে শুরু করে দামও, তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।
বিক্রেতারা বলছেন, এবার কয়েক দফায় বন্যা হয়েছে এবং বৃষ্টিও হয়েছে অনেক লম্বা সময় ধরে। এতে আবাদ বাধাগ্রস্ত হয়েছে, ফলে এখনো পুরোমাত্রায় শীতের সবজি আসা শুরু করেনি। এগুলো মূলত শীতের আগাম জাতের সবজি। এ ছাড়া বর্ষা ও গ্রীষ্মকালীন সবজির মৌসুম শেষ হওয়ায় মূলত দাম বেশি রয়েছে। তাঁরা বলছেন, সরবরাহ বাড়লে দু-এক সপ্তাহের মধ্যে দাম কমতে শুরু করবে।
আলুর দাম ৩৫ টাকায় বেঁধে দেওয়া হলেও এখনো বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা বেশি দামে। অবশ্য আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমেছে। এখন ৫০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে দেশের বাইরের পেঁয়াজ।
প্রজনন মৌসুমে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ঢাকার বাজারে আসতে শুরু করেছে জাতীয় মাছ ইলিশ, তবে দাম ভরা মৌসুমের মতোই।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মুগদাপাড়া, গোপীবাগ, মালিবাগসহ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাঁচা মরিচের দাম আগের মতোই, ২৫০ গ্রাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা। তবে কেউ এক কেজি নিলে পাওয়া যাচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়, টমেটো ১২০, গাজর ৮০ থেকে ৯০, শিম ১৪০ থেকে ১৫০, ঢেঁড়স ৬০ থেকে ৭০, বরবটি ৯০ থেকে ১০০, মুলা ৭০, কাঁকরোল ৮০ থেকে ৯০, পটোল ৬০ থেকে ৭০, বেগুন ৬০ থেকে ৭০, করলা ৮০ এবং চিচিঙা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে।
এ ছাড়া জলপাই ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁয়াজপাতা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৫০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউয়ের দাম কিছুটা কমেছে, পাওয়া যাচ্ছে ৪০ টাকায়, আগে ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যেত না। ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা।
বাজারে লালশাক, পুঁইশাকের সরবরাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি সরিষাশাক ও ডাঁটাশাকও পাওয়া যাচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে প্রতি আঁটি ১৫ টাকায়। মাঝে লালশাকের আঁটি ২০ টাকার কমে পাওয়া যেত না। ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া পুঁইশাকের দামও কিছুটা কমেছে।
মুগদা বাজারের সবজি বিক্রেতা আনোয়ার বলেন, একদিকে শীতকালীন সবজি বাজারে আসেনি, অন্যদিকে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন সবজির উৎপাদনও প্রায় শেষের দিকে। শীতকালীন সবজি আসতে আরো সপ্তাহ দুয়েক লাগবে, তখন দাম নেমে আসবে। তিনি বলেন, এর মধ্যেই দেশি কাঁচা মরিচ বাজারে আসছে। ফলে দাম ১৫০ টাকার নিচে নেমে এসেছে বলে জানান তিনি।
বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। বাজারে এখন চার ধরনের পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। দেশি ও দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজ কিনতে গুনতে হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা। তুরস্ক ও চীন থেকে আমদানি করা বড় পেঁয়াজ মিলছে ৫০ টাকায়। প্রায় বেগুনি রঙের আমদানি করা পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। রসুন আগের মতোই ৯০ থেকে ১২০ টাকা প্রতি কেজি; দেশি ও ভারতীয় আদা ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং চীনা আদা ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পল্টন ও সেগুনবাগিচা বাজারে বিভিন্ন আকারের ইলিশ কেজিপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। দীর্ঘদিন পরে বাজারে ইলিশ ওঠায় ক্রেতাদের আগ্রহও বেশি চোখে পড়েছে। বড় আকারের ইলিশই বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি পাঙ্গাশ ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, রুই ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।