বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের। সাকিবকে ৩.২ কোটিতে কিনে নেয় ফ্রাঞ্চাইজিটি। কেকেআরের ‘লাকি চার্ম’ বলা হচ্ছিল তাকে।
কিন্তু আইপিএলের সংযুক্ত আরব আমিরাত পর্বে অবহেলিত ছিলেন তিনি। টানা ৯ ম্যাচ ডাগআউটে বসে দর্শক হয়েই কাটিয়ে দেন। পরে সুযোগ পেয়ে পারফরম্যান্সের ঝলকও দেখিয়েছেন। কিন্তু শেষ দুই ম্যাচে ছিলেন একেবারে অনুজ্জ্বল।
ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে প্রথম বলেই আউট হয়ে গেলেন। রানের খাতা খুলতেই পারলেন না। আগের ম্যাচেও (কোয়ালিফায়ার) ডাক মেরেছিলেন সাকিব। অর্থাৎ ব্যাট হাতে নিজের নামের সুবিচার করতে পারেননি এ অলরাউন্ডার।
শুক্রবার রাতে ফাইনালে চেন্নাইয়ের বিপক্ষে ১৪.৫ ওভারে নামেন সাকিব। তিনিই কার্যত ছিলেন কেকেআরের শেষ ভরসা। কিন্তু শূন্য রানে তিনি আউট হওয়ার পর কেকেআরের স্কোর দাঁড়ায় ১৫ ওভারে ৬ উইকেটে ১২০ রান। সেখান থেকে আর ম্যাচ বের করে নিতে পারেনি কলকাতা। ২৭ রানে হেরে শিরোপা হাতছাড়া হয় কলকাতার।
ফাইনালে এমন বাজে পারফরম্যান্সের কারণে ভারতে সমালোচিত হওয়ার কথা সাকিবের। কিন্তু না, সমালোচনা না করে সাকিবের পাশেই দাঁড়িয়েছে ভারতীয়রা।
তারা বলছেন, ১৯৩ রান তাড়া করতে নেমে সাকিবকে তিনে নামানো উচিত ছিল। কিন্তু সাতে নামানো হলো তাকে। ওই সময় কার্যত প্রতিটি বলেই মারতে হতো। ফলে অভাবনীয় কিছু ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।
সাকিবের ভারতীয় ভক্তদের এমন যুক্তিকে অনেকে খোঁড়া বলে মনে করলেও বোলিংয়ের ক্ষেত্রে আবার একমত সবাই। ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের বক্তব্য, সাকিব তার ওভারে ঠিকই উইকেট আনার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু কলকাতার উইকেটকিপার সে সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। আর ওই ঘটনাই গোটা ম্যাচের চেহার বদলে দেয়। রানের চাপায় পিষ্ঠ হয় কলকাতা।
ফাইনালে বল হাতে সাকিব ভালো শুরু করেছিলেন। পরে আর ভালোটা ধরে রাখাতে পারেননি। তিন ওভারে ৩৩ রান দেন।
এর কারণ হিসেবে কলকাতার উইকেটকিপার দীনেশ কার্তিককে দুষছেন ভারতীয়রা।
তারা বলছেন, নিজের দ্বিতীয় ওভারেই চেন্নাইয়ের প্রোটিয়া তারকা ফাফ ডুপ্লেসিকে আউট করার সুযোগ পেয়েছিল কেকেআর। সাকিবের করা লেগের বাইরে ফুল লেন্থের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে মিস করেন ডুপ্লেসি। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যান। বল চলে যায় কিপারের কাছে। আর ডুপ্লেসিকে স্টাম্পিং করার মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করেন দীনেশ কার্তিক। কার্তিক আসলে বলটা ধরতেই পারেননি। সেই সময় ডুপ্লেসির স্কোর ছিল চার বলে ২ রান। আর ২ রানে জীবন পেয়ে তার সদ্ব্যবহার করেন এই দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা। নাইট বোলারদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করে ৫৯ বলে ৮৬ রান করেন। সাতটি চার এবং তিনটি ছক্কা হাঁকান। স্ট্রাইক রেট ছিল ১৪৫-এর বেশি।
তার এই অনবদ্য ইনিংসে ভর করে ১৯৩ রানের বড় লক্ষ্য ছুড়ে চেন্নাই। যে লক্ষ্য আর পার করতে পারেনি কলকাতা।
শুধু ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরাই নন, বিশ্লেষকরাও সেই কথাই বলছেন। তারা বলছেন, ফাফ ডুপ্লেসিকে স্টাম্পিং করতে না পারাটাই ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। সাকিবের বলে প্রোটিয়া তারকাকে ব্যক্তিগত ২ রানে আউট করতে পারলে হয়ত এবারের আইপিএলের মহাকাব্য কলকাতার পক্ষে লেখা হতে পারত।
তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস