সাগ্নিকা চক্রবর্তী প্রতিভাময়ী প্রতিযোগী হলেও তার বাবা শ্বাশত নিপ্পন চক্রবর্তী বিচারকের ভুমিকায় দায়িত্ব পালন করে প্রতিযোগীতাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। তিনি মেহেরপুর সদর উপজেলার সীমান্ত মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মেয়ে সাগ্নিকা চক্রবর্তী মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী।
তবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিকজনরা অভিমত প্রকাশ করে বলেন, এ ধরণের কোন বিধি না থাকলেও এটি পুরাতন প্রথা হয়ে আসছে। সন্তান প্রতিযোগী থাকলে সেখানে বাবা- মায়েরা সাধারণত বিচারক হন না, হওয়া উচিতও না।
সাগ্নিকা চক্রবর্তী খ গ্রুপের আবৃতি ও সংগীত বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। প্রথম স্থান অর্জন করার মত যোগ্যতা সাগ্নিকা চক্রবর্তীর থাকলেও বাবা বিচারক হওয়ায় অন্য অভিভাবকরা বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে উপজেলা পর্যায়ে ভার্চুয়াল কনফারেন্সে ৭ মার্চের ভাষন, কবিতা আবৃতি ও সংগীত প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রতিযোগীতায় ক গ্রুপে প্রথম থেকে ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত ৪৫ জন এবং খ গ্রুপে ৮ম থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত ২৩ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগীতা শেষে উপজেলা পর্যায়ের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
খ গ্রুপের আবৃতিতে সাগ্নিকা চক্রবর্তী প্রথম, মাইশা ফারজানা ঐশি দ্বিতীয়, অনিমা শর্মিলা তৃতীয়, সংগীতে সাগ্নিকা চক্রবর্তী প্রথম, মাইশা ফারজানা ঐশি দ্বিতীয়, মো: জারিফ তৃতীয়, ৭ মার্চের ভাষণে মাইশা ফারজানা ঐশি প্রথম, আব্দুল্লাহ আল মাহি দ্বিতীয়, তানজিফ রহমান অর্পন তৃতীয়।
ক গ্রুপের ৭ মার্চের ভাষণে সাজিদ প্রথম, স্বপ্নীল দ্বিতীয়, মাসুদ রানা তৃতীয়, কবিতা আবৃতিতে রাইনা রওনব প্রথম, ইলিন আনজুম দ্বিতীয়, ফাতেমা তাজিন জোহা তৃতীয়, সংগীতে পৌলমী প্রথম, ফাতেমা তাজিন জোহা দ্বিতীয়, ইলিন আনজুম তৃতীয়।
বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সীমান্ত মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্বাশত নিপ্পন চক্রবর্তী, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মিলন কুমার দাস, বামনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফৌজিয়া আফরোজ তুলি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক অভিযোগ করে জানান, সন্তান প্রতিযোগী আর বাবা বিচারক থাকলে অন্য বিচারকরাও সেক্ষেত্রে প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে এ ধরণের প্রতিযোগীতার ক্ষেত্রে বিচারক নির্ধারণ জরুরী। এ প্রতিযোগীতার ফলাফল কখনো নিরপেক্ষ হতে পারে না।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আপিল উদ্দিন জানান, এক্ষেত্রে বাবা যদি বিচারক হন তাহলে ওই সময় তিনি মূল্যায়ন করবেন না । এভাবেই সাধারণত করা হয়ে থাকে। তাছাড়া এটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের কার্যালয় থেকে করা হয়েছে আমরা শুধু দাযিত্ব পালন করেছি।
জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বলেন, মেয়ে প্রতিযোগী হওয়ায় শ্বাশত নিপ্পন চক্রবর্তীর উচিত ছিল বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন না করা। এটা তার উচিত হয়নি। তবে সাগ্নিকা চক্রবর্তী প্রতিভাময়ী প্রতিযোগী।
মেহেরপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল আমিন জানান, সন্তান প্রতিযোগী হলে বাবা-মা বিচারক হতে পারবেন না এটা কাষ্টমস বা প্রথা। এটা বিধি না হলেও বাবা- মায়ের উচিত নয় এ ধরণের দায়িত্ব পালন করা । এক্ষেত্রে শ্বাশত নিপ্পন চক্রবর্তীর বিচারকের দায়িত্ব পালন না করা উচিত ছিল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মাসুদুল আলম বলেন, প্রতিযাগীতার বিচারক হিসেবে আমরা বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করেছিলাম। সেক্ষেত্রে শ্বাশত নিপ্প্নন চক্রবর্তী শিল্পকলার আবৃত্তি শিক্ষক। আমরা তাঁকে রেখেছি। কিন্তু তাঁর মেয়ে প্রতিযোগী ছিল এ বিষয়ে তিনি জানাননি।