মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ও বাণিজ্য খ্যাত একটি বাজার বামন্দী। যেখানে রয়েছে জেলার সর্ব-বৃহৎ পশু হাট। বাজারে শাক-সবজি, মাছ-মাংস, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সামগ্রী থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও মালামাল বিক্রয় করে ব্যাবসায়ীরা। এসব দোকানের পাশাপাশি রয়েছে সুপার মার্কেট, শপিংমল, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, অফিস, একাধিক শাখা ব্যাংক ও চিকিৎসাকেন্দ্র, কলকারখানা সহ হাজারের অধিক দোকান-পাট। এ বাজারে শুধুমাত্র চায়ের দোকানের ব্যাবসার উপর নির্ভর করে চলে প্রায় শতাধিক পরিবার।
সপ্তাহে দু’দিন শুক্রবার ও সোমবার সাপ্তাহিক হাট বসে বামন্দীতে। এবারের রমজানের প্রথম দিন (২৪শে মার্চ) শুক্রবার বামন্দী বাজারের সাপ্তাহিক হাট সরেজমিনে ঘুরে জিনিসপত্রের অস্বাভাবিকভাবে দাম বৃদ্ধি চোখে। যা ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি থাকলেও উচ্চমূল্যের কারণে হতাশার চিত্র ক্রেতাদের চোখেমুখে। স্বাভাবিকের বাইরে মূল্য থাকায় অনেকেই রমজানের প্রথম দিনে ক্রয় করতে পারেননি শাক-সবজি।
বামন্দী বাজারের সবজি হাটে বেগুন, সজনে ডাটা, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলু, পটল, টমেটো, গাজর, শসা, সিম, পুইশাক, লাউ, লেবুর মূল্য প্রায় দ্বিগুন থেকে তিনগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পাইকারির তুলনায় খুচরা বাজারে শাক-সবজির দাম তুলনামূলকভাবে আরো বেশি।
রমজানের প্রথম হাটে বামন্দীতে বেগুন বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে; যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৪৫ টাকা কেজি। শসা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০-৮০ টাকা দরে; যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল কেজিপ্রতি ৫০ টাকা। পটল কেজিপ্রতি ৮০ টাকা, সজনে ডাটা ১২০ টাকা, পুইশাক ৪০ টাকা সহ আলু-পেঁয়াজ-রসূনের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা করে। লেবু বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা প্রতিপিচ। এছাড়াও অন্যান্য সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
অপরদিকে বেড়েছে মাছ মাংসের দাম। বামন্দী বাজারের মাছের হাটে সবধরনের মাছ কেজিপ্রতি ৩০-৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গরুর মাংস সাড়ে ৭’শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে যা ছিলো সাড়ে ৬’শ টাকা। ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯’শ টাকা কেজি দরে। ব্রয়লার মুরগী কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকা দরে। লেয়ার ও সোনালি মুরগী ২৬০-৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দাম নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগ থাকলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। বামন্দী বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরেই রমজানের সময় বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি থাকে। এবছরেও কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে; আবার কিছুদিন পরে কমে যাবে।
সবজি ব্যবসায়ী তাহিরুল ইসলাম বলেন, আমি খুলিশাকুন্ডী থেকে বেগুন কিনে এনেছি ৭০ টাকা কেজি দরে; এখন বিক্রি করছি ৮০ টাকা। ১০ টাকা লাভ হচ্ছে।
আরেক সবজি ব্যবসায়ী বাবুল ইসলাম বলেন, আমরা কিনে এনে বিক্রি করি। মোকামে যে দাম ধরে আমরা তার চেয়ে ২০-৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করি। আমাদের হাতে কিছু নেই সবকিছু মোকাম থেকে নির্ধারন করা হয়।
তবে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া ক্রেতাদের মধ্যে। সাজ্জাদুল ইসলাম স্বপন নামের এক ক্রেতা বলেন, রমজানের অজুহাতে প্রতিবছর ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা এতে কোন নজরদারি রাখেনা।
আরেক ক্রেতা রাশিদুল আলম বলেন, বামন্দীতে বাজার মনিটরিং করা হয়না কোনদিন। নিয়মিত যদি দায়িত্বশীলরা একটু দেখভাল করতো তবে এতটা অস্বাভাবিক হতো না বাজার দর।
বাজার মনিটরিং বিষয়ে জানতে বামন্দী বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া সিদ্দিকা সেতু বলেন, গাংনী বাজারে গতকাল আমারা মনিটরিং করেছি তবে পর্যায়ক্রমে সব জায়গায় দেখভাল করা হবে। আমাদের মোবাইল কোর্টের অভিযান রমজান মাসব্যাপী পরিচালনা করা হবে।
তবে বাজার মনিটরিং বিষয়ে বাজার কমিটির দায়িত্ব কতটুকু রয়েছে কিংবা উপজেলা প্রশাসনের কোন নির্দেশনা আছে কিনা? এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি; এখনো সবার সাথে বসা সম্ভব হয়নি। তবে খুব দ্রুত সবার সাথে বসে বিষয়টি নিয়ে সীধান্ত নেওয়া হবে।