মেহেরপুর জেলা পরিষদের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কার্যালয়। আওয়ামী লীগ কার্যালয় নির্মাণের কথা বলা হলেও অভিযোগ উঠেছে নির্মাণকারীদের কয়েকজন বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। আর এ অভিযোগ করেছে খোদ জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা।
ঘটনাটি মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের বাড়ীবাকায়। যেখানে ইট-বালি দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে রাজনৈতিক কার্যালয় ওই স্থানেই ছিলো পাঠাগার। পাঠাগার সংস্কারের কথাও বলা হচ্ছে কখনও। তবে অভিযোগ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ব্যানারে কিছু বিএনপি-জামায়াত নেতা মুলত জামায়াতের রাজনৈতিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করছে। জেলা পরিষদ থেকে দুইবার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হলেও স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের কিছু নেতার ইন্ধনে পুরোদমে চলছে নির্মাণ কাজ। আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বুড়িপোতা-বাড়িবাকা সীমান্তের প্রধান সড়কের পাশে ইটের ভিত্তির পাকা ঘরের কাঠামো বানানো হচ্ছে, শুধু ছাদ ঢালাই বাকী আছে। পাশে বাঁশ দিয়ে বানানো খুঁটিতে একটি সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। সেখানে লেখা আছে, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বুড়িপোতা ইউনিয়ন ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়। একই স্থানে পূর্বে থাকা পাঠাগারের সরঞ্জাম কোথায় তার কোন হদিস নাই।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন কিছু বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা দল পাল্টে নব্য আওয়ামী লীগ সেজেছেন। পাঠাগার ভেঙে আওয়ামী লীগ কার্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। তারা অশংকা প্রকাশ করেন ভবিষ্যতে এটা জামায়াতের কার্যালয়ে পরিণত হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী জানান, রাজনৈতিক কার্যালয় স্থাপনের উদ্যোক্তা একই গ্রামের রেজা, ইদ্রিস আলী, আলম হোসেন, ইমরান হোসেন ও আকাশ রাজনৈতিকভাবে জামায়াত কর্মী হিসেবে পরিচিত। অপর উদ্যোক্তা আজিজুল একজন বিএনপি নেতা।
স্থানীয় অধিবাসী মোখলেসুর রহমান মুকুল বলেন, ‘টিনের ঘর ভেঙে এখন পাকা ঘর করা হচ্ছে, জায়গাটি খাস বা জেলা পরিষদের কিনা সেটা আমরা অবগত নয়। তবে আপনাদের বাঁধায় ঘরের কাজ বন্ধ হলে বা ঘর ভেঙে দিলেও জায়গাটি পড়ে থাকবে না। কিছুদিনের মধ্যে কেউ না কেউ ঠিকই দখল করে নেবে। ‘
বুড়িপোতা ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাজাহান বলেন, এখানে একটি টিনশেডের ঘর ছিল, আমরা ওঠাবসা করতাম। পাকা করার উদ্যোগ নিলে জেলা পরিষদ থেকে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। কিছুদিন আগে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ইব্রাহিম শাহিন এখানে স্কুলের বিল্ডিং উদ্বোধন করতে আসলে আমরা তাদেরকে জানায়। ইব্রাহিম শাহিন মৌখিকভাবে আমাদের কাজ করার নির্দেশ দেন। তবে এটা সত্য জেলা পরিষদ আমাদেরকে এখানে ঘর করার অনুমতি দেয়নি। ‘
বুড়িপাতে ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিটন বলেন, ‘এখানে কোন অনুমতি নেই জোর করে কাজ করা হচ্ছে। গতকাল জেলা পরিষদ থেকে আমাকে জানানোর পর আমি ওখানে গিয়েছিলাম কিন্তু কাউকে পাইনি। আগে এই জায়গায় একটি লাইব্রেরী ছিল সেটা ভেঙে এখন পার্টি অফিস করা হচ্ছে।’
পাঠাগার ভেঙে রাজনৈতিক কার্যালয় তৈরির একজন উদ্যোক্তা রেজা বলেন, ‘এটা হচ্ছে মূলত আওয়ামী লীগের কার্যালয়, আমাদের বাড়ি বাঁকাতে আওয়ামী লীগের বসার কোন জায়গা নেই, তাই এখানে আওয়ামী লীগের অফিস করা হচ্ছে। আগে এখানে টিনশটের একটি ঘর ছিল তবে এখানে আওয়ামী লীগের ছেলেরাই ওঠাবসা করত। আর আওয়ামী লীগের অফিস তৈরি করার জন্য জেলা পরিষদের কোন অনুমতির দরকার নেই। জায়গা জেলা পরিষদের এটা ঠিক আছে, এখনো আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে, এখানে আওয়ামী লীগের একটি অফিস বানানো হচ্ছে।
রেজা আরও বলেন, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী আমাদের ঘর করার জন্য দুই বান টিন দিতে লিখিত আদেশ দিয়েছেন, তবে উপজেলা থেকে আমাদেরকে এক বান টিন দেয়া হয়েছে। এখানে যে আওয়ামী লীগের অফিস তৈরি হচ্ছে তা জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইব্রাহিম শাহিন ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ জামান চৌধুরী সকলেই জানেন ।
এ ব্যাপারে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ইব্রাহিম শাহীনের সাথে যোগাযোগের জন্য ফোন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।
মেহেরপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুহা. আব্দুস সালাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে মূলত জামাতের অফিস তৈরি করা হচ্ছে। পুলিশ নিয়ে দুইবার কাজ বন্ধ করে দিয়ে আসার পরেও কিছু নেতার ইন্ধনে কাজ চলছে। আওয়ামী লীগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতা এর পেছনে আছেন। ব্যাপারটা নিয়ে আমি আইনি ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তাভাবনা করছি।