মেহেরপুরের নতুন মদনাডাঙ্গা গ্রামে জনসাধারণের চলাচলের জন্য বিক্রি করা জমি ঘিরে নিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন স্থানীয় গ্রাম বিএনপির নেতা আতিকুর রহমান পিন্টু।
এই ঘটনায় আদালতের নির্দেশনা থাকলেও এখনো প্রতিবন্ধকতা সরানো হয়নি। পুলিশ প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করতে গেলে উল্টো দম্ভোক্তি দেখিয়েছেন অভিযুক্ত পিন্টু।
জানা গেছে, মেহেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ বিন হারুন (জুয়েল) নিজের বাগানে যাতায়াতের জন্য এবং জনসাধারণের সুবিধার্থে ৬ লাখ টাকায় প্রায় সাড়ে তিন শতক জমি ক্রয় করেন। জমির দলিলেও উল্লেখ রয়েছে যে এটি মানুষের চলাচলের পথ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তবে ক্ষমতার পালাবদলের পরদিনই পিন্টু ওই জমি ঘিরে দখলে নিয়ে নেন এবং ইমতিয়াজ বিন হারুনকে হুমকি দেন সেখানে না যাওয়ার জন্য।
মেহেরপুরের নতুন মনাডাঙ্গা গ্রামের আতিকুর রহমান পিন্টু ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করা প্রায় সাড়ে তিন শতক জমি তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে নিয়েছে। বাগানের কোন পাশ দিয়ে যাতে বাগান মালিক জুয়েল প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বাগানের অন্যপাশের জমির মালিকদেরও ঘিরে নিয়ে যাতায়াতে প্রতিবন্ধক তৈরীর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
পিন্টু অকপটে স্বীকারও করছেন মানুষের চলাচলের জন্য বিক্রি করা জমি দখলের বিষয়টি। মানুষের চলাচলের জন্য জমি ক্রেতা আইনজীবী খ. ম. ইমতিয়াজ বিন হারুনসহ (জুয়েল) মানুষ ওই পথ দিয়ে যাতায়াত করতে পারছেনা।
পৈত্রিক সুত্রে বাগানের মালিক মেহেরপুর জেলা শহরের ইমতিয়াজ বিন হারুন। নিজের বাগানে যাতায়াতের জন্য কোন রাস্তা ছিলো না। মাঠে যাতায়াতের এবং নিজের বাগানে যাতায়াতের জন্য গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আতিকুর রহমান পিন্টু‘র কাছ থেকে ০.০৫৯৭ একর (প্রায় সাড়ে তিন শতক) জমি ৬লাখ টাকায় কিনে নেন ইমতিয়াজ।
জমির দলিলও হয়েছে সাধারণের যাতায়াতের জন্য। ফলে ওই জায়গা দিয়ে এতদিন এলাকার মানুষ মাঠে চাষাবাদের জন্য যাতায়াত করতেন। বিক্রি করা জমি ঘিরে নেয়ার ফলে সাধারণ মানুষ মাঠে যাতায়াত করতে পারছেনা।
গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন, সুমন হোসেন, সাইফুল ইসলামও স্বীকার করেন জমির মালিক ইমতিয়াজের। তিনিই পিন্টুর সাথে জমি কিনে তাদের যাতায়াতের রাস্তা করে দিয়েছেন। চলাচলের রাস্তা ঘিরে নিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে গ্রামের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ইমতিয়াজ বিন হারুন জানান, মাঠে চাষাবাদের কৃষক ও নিজের বাগানে যাতায়াতের জন্য পিন্টুর কাছ থেকে ০.০৫৯৭ একর জমি কিনে জনসাধারণের জন্য পথ করে দিয়েছি। হঠাৎ করে ওই রাস্তা ঘিরে নিয়ে মাঠ ও বাগানে যাতায়াত করা যাচ্ছেনা। এমনকি তার একটি টিনের ছাউনি ছিলো। সে ভাংচুর করে প্রায় ৩৭ হাজার টিনও লুট করা হয়েছে।
গ্রামের বাজারে নিজের হার্ডওয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পিন্টুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্বীকার করে বলেন, ইমতিয়াজ তার কাছ থেকে জমি কিনে রাস্তা তৈরী করেছেন। এই জমি কেনার আগে একদিন জেলা শহরে ইমতিয়াজ আমাকে অপমান করেন। তার প্রতিশোধ নিতে জমি ঘিরে নিয়েছি। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে পিন্টু গ্রাম বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।
বিষয়টি আদালতে গড়ালে মেহেরপুরের বিজ্ঞ বিচারিক আদালত ৬৯/২১ নং দেওয়ানী মোকদ্দমায় একটি আদেশ দেন। আদালত তার রায়ে উল্লেখ করেন, আপিলকারী বাদী ইমতিয়াজ বিন হারুনের ক্রয়কৃত ৬১২ নং দাগের জমি রাস্তা হিসেবে ব্যবহারের জন্য বৈধ।
চলাচলের রাস্তার সঙ্গে যুক্ত ৬১৩ নং দাগের জমি সরকারী খাস খতিয়ানভুক্ত, যা আগেও পতিত ছিল। প্রতিপক্ষ পিন্টু এই সরকারি জমিতে কাটাতারের বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন, যা আদালতের নির্দেশনা অনুসারে অবৈধ।
আদালত প্রতিপক্ষকে ১৫ দিনের মধ্যে এই বেড়া অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যথায় মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আদালতের নির্দেশনার পরও এখনো জমির দখল নিয়ে অচলাবস্থা চলছে।
মেহেরপুর সদর থানার এস আই সুজয় মল্লিক বলেন, বিজ্ঞ আদালতের আদেশে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে আসামিকে প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে নিতে বলা হলে আসামি বলেন, আদালত থেকে এর ফয়সালা হবে। সেভাবেই প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।