ফ্রান্সসহ বিশ্বের গণমাধ্যমগুলো গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বাংলাদেশ সফর। তারা এটাকে ইন্দো-প্যাসিফিক সম্পর্ক দৃঢ়তার অংশ হিসেবে দেখছে।
এএফপির বরাত দিয়ে আরএফআই লিখেছে, ফ্রান্সের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলকে “দৃঢ়তা” আনতে এবং চীন কেন্দ্রিক রাজনীতি ও কূটনীতিকে মাথায় রেখে রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সোমবার বাংলাদেশে গেছেন। গণমাধ্যমগুলো প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ও প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ছবিও প্রকাশ করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন বিস্তৃত অঞ্চলে প্রভাবের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এবং ম্যাক্রোঁ ফ্রান্সকে একটি বিকল্প প্রস্তাব হিসাবে হাজির হয়েছেন বলে ফ্রান্সের গণমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে। “বাংলাদেশ ধীরে ধীরে বিশ্ব মঞ্চে তার স্থান পুনরুদ্ধার করছে” বলে মন্তব্য করেছেন ম্যাক্রোঁ। প্রতিবেশি ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন শেষ হওয়ার পর রোববার ঢাকায় আসার পর একথা বলেন ম্যাক্রোঁ। ক্রমবর্ধমানশীল অর্থনীতি ও ১৭ কোটি মানুষের সম্ভাবনাময়তার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে “অসাধারণ সাফল্য” অর্জনকারী বলেও মনে করেন তিনি।
এর আগে রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ম্যাক্রোঁকে লাল গালিচা সংবর্ধনা এবং গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলছেন আন্তজার্তিক বিশ্লেষকেরা। জাতিসংঘে ভেটো ক্ষমতার অধিকারী ফ্রান্স এবং একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে শক্তিশালী দুটি রাষ্ট্রের একটি হচ্ছে দেশটি।
এএফপির বরাত দিয়ে ফ্রান্স২৪ একই সংবাদ প্রচার করেছে। যেখানে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের অংশীদারদের ধমক দেওয়া বা তাদের একটি অস্থিতিশীল পরিকল্পনার দিকে নিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতি নই। বরং গণতান্ত্রিক নীতি এবং আইনের শাসনের উপর ভিত্তি করে আমরা তৃতীয় উপায় প্রস্তাব করতে চাই।
প্রেসিডেন্টের এলিসি প্যালেস অফিস বলেছে, ঢাকা সফরে “একটি দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গভীর করার একটি সুযোগ যেটি দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথও উন্মোচন করবে।
ফ্রান্সের গণমাধ্যমে ম্যাক্রোঁর ঢাকা সফরকালে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে লেখা হয়েছে। প্যারিসে ফেরার আগে সোমবার ম্যাক্রোঁ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি তার পিতা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করবেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
৩৩ বছর পরে ফ্রান্সের কোনও প্রেসিডেন্টের এটি প্রথম ঢাকা সফর। তবে ১৯৯০ সালে ফ্রাঁসোয়া মিতেরার সফরের সঙ্গে এই সফরের গুণগত অনেক পার্থক্য রয়েছে। কারণ, গত ৩০ বছরে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি।
প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সম্মানে দেওয়া নৈশভোজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক একটি কৌশলগত অংশীদারত্বে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ফরাসি প্রেসিডেন্টের সম্মানে আয়োজিত ভোজসভায় বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ইন্দো-প্যাসিফিক এবং এর বাইরেও সকলের অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য কৌশলগত সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যেতে পারে বলে আমি আত্মবিশ্বাসী।’