হারিয়ে গেছে কালি, কলমের লেখা সেসব চিঠি। হারিয়ে যাচ্ছে হলুদ, লাল, নীল খামে প্রিয়জনকে লেখা সেই আবেগ। শহর থেকে অজপাড়াগাঁ সব জায়গায় পৌঁছে গেছে টেকনোলজি। যখন যার ইচ্ছে প্রিয়জনের সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদানে চিঠির বদলে ভরসা এখন নতুন নতুন প্রযুক্তি। ফুরিয়ে গেছে ডাকঘরের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো কিংবা টেলিগ্রাম পরিসেবার প্রয়োজনীয়তা। লাল রঙা ডাকবাক্স হারিয়েছে তার রং, তালায় পড়েছে মরিচা।
এক সময় জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র দেয়ালে, গাছে, স্টেশনে, প্ল্যাটফর্মে ডাক বাক্স চোখে পড়ত। দিনে একবার ডাক বাক্স খুলে ডাক বিভাগের লোকজন চিঠিপত্র সংগ্রহ করে নিত। কিন্তু এখন আর শহর বা গ্রামে সেসব ডাকবাক্স তেমন একটা চোখে পড়ে না।
এরও আগে যখন ডাকেরই প্রচলন হয়নি, তখন পোষা পায়রার পায়ে বেঁধে প্রিয়জনের কাছে বার্তা পাঠাতো মানুষ। এরপর এলো ডাকযুগ। প্রিয়জনের চিঠি পাবার আশায় ডাকপিয়নের পথ চেয়ে থাকার দিন হলো শুরু। সে যুগও আর নেই। মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে ই-মেইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইমো, ভাইবারসহ কত যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা আজ সবার হাতে।
এখনকার সময়ে শহরের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই গ্রাম। গ্রামের মানুষের কাছেও এখন এসব সুবিধা পৌঁছে গেছে। যখন ইচ্ছে প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগটা তারাও নিচ্ছে। বার্তা আদান-প্রদানে চিঠির বদলে সবার ভরসা এখন নতুন নতুন প্রযুক্তিতে। এখন শহর থেকে দেশের প্রত্যন্ত অজপাড়াগাঁয়ে পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট ও ই-মেইল সেবা। তাই ডাকঘরের মাধ্যমে মান্ধাতার আমলের চিঠি, টেলিগ্রাম সেবার প্রয়োজনও ফুরিয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ডাক বিভাগ বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলায়। অধিকাংশ ডাকঘরে নেই কোনো ডাকবাক্স। দু-একটি থাকলেও তার মধ্যে চিঠির পরিবর্তে থাকে ময়লা-আবর্জনা। জেলা এবং উপজেলা ডাকঘর ছাড়া সব কটিতেই এই নাজুক অবস্থা।
ডাক বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অভিমত, প্রযুক্তির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে ডাক বিভাগ। এখন কেউ চিঠির খোঁজ নিতে আসে না। তাই কর্মীদেরও চিঠি পৌঁছে দেয়ার নেই কোনো তাগিদ। অলস সময় কাটে সকলের।
অথচ এককালে ডাক বিভাগ ছিলো যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। চিঠি, পণ্য পার্সেল, টাকা পরিবহনে একমাত্র ভরসা ছিলো ডাক বিভাগ।
ষাটের দশকে টেলিফোন এক্সচেঞ্জ আওতাবহির্ভূত এলাকার পোস্ট অফিসে ছিল টেলিগ্রাম ব্যবস্থাও। কিন্তু প্রযুক্তির অতল গর্ভে হারিয়ে গেছে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা। এখন আর কেউ টেলিগ্রাফের ধার ধারে না। দ্রুত ধাবমান জীবনে চিঠি লেখার অবকাশ কোথায়! আর মানি অর্ডারে টাকা পাঠানো এখন মৃত ইতিহাস। মোবাইল, এসএমএস, ই-মেইল আর ফেসবুক, ভাইবার, স্কাইপি, ইমো, হোয়াটসআপ সবার হাতে হাতে। এক নিমিষেই যুক্ত হওয়া যায় লাইভ কথোপকথনে।
মানি অর্ডারের বদলে মোবাইল ফোনে মানি ট্রান্সফার। অফিসিয়াল চিঠি ও ডকুমেন্ট পাঠাতে ব্যবহার হচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিস। এই অবস্থায় বাংলাদেশের ডাক ব্যবস্থা ঘুরে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে বটে। তবে তার গতি আশাব্যঞ্জক নয়। দেশে দেশে আধুনিক ডাকসেবায় ই-কর্মাসের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
কালীগঞ্জ (নলডাঙ্গা) উপজেলা ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার আব্দুল মালেক জানান, দেশ ডিজিটাল হয়ে গেছে। এখন অনলাইনে সব কাজ। তারপরও ব্যাংক, এনজিও ও সরকারি অফিসের চিঠিপত্র গুলোর চাপ একটু বেশি হয়েছে, কর্ম তৎপরতা আগের চাইতে একটু বেড়েছে । অনলাইনের মাধ্যমে টাকা-পয়সা আদান-প্রদান হচ্ছে । উপজেলার ১৫ টি শাখা ডাক ঘরেও বেড়েছে সরকারি-বেসরকারি চিঠিপত্রের আদান-প্রদান।
অফিসের বাইরে একজন বলেন, মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে ই-মেইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইমো, ভাইবার, মেসেঞ্জারসহ প্রযুক্তির কত রকমের সুবিধা এখন সবার জন্য। শহরের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই গ্রাম। কারণ এখন সবকিছুই ডিজিটাল হয়েছে। দেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে। হাতের কাছে মানুষ অনেক সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। সরকারি ডাক বিভাগের পাশাপাশি বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসে চিঠিপত্র ও টাকা-পয়সা আদান-প্রদান করতে পারছে।