স্কুল শেষে একটি ভালো কলেজে ভর্তি হতে কে না চায়! অনেকে স্বপ্ন পূরণ করতে পারে,অনেকে পারে না। একারণেই
মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে একঝাঁক তরুণ তরুণী তাদের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন উচ্চমাধ্যমিক কলেজে।
কেউ পেরেছেন তাদের কাঙ্ক্ষিত কলেজে ভর্তি হতে আবার কেউবা পারেনি ।
আবার অনেকে ভাল কলেজে ভর্তির সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে হয়তো ভর্তি হতে পারে নি । ঠিক আমিও অনেক প্রতিকূলতার গণ্ডি পেরিয়ে আল্লাহর তায়ালার অশেষ মেহেরবানীতে একটি সুন্দর ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠে ভর্তি হয়েছি যা বাংলাদেশে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ নামে পরিচিত ।
প্রতি বছর জুন – জুলাই মাসে প্রতিটি উচ্চমাধ্যমিক যেমন নতুন তরুণ-তরুণীদের কোলাহলে পূর্ণ থাকে ঠিক তেমনি আমার কলেজেও কোলাহলপূর্ণ একটি অবস্থা বিরাজ করে । সেখানে যেমন সকল শিক্ষকদের সাথে নতুন পরিচিতি , সকল সহপাঠীর কাছে নতুন , ক্যাম্পাসের কাছে নতুন, ঠিক তেমনি নতুনদের সাথে মানিয়ে নেওয়ার একটা চেষ্টা বা আগ্রহ সবার মধ্যে থাকতে দেখা যায় ।
নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ এ-এক নান্দনিক চিত্র । কিন্তু এই বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকার কারণে বিশ্ব যখন একটা সংকটময় সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তখন উচ্চমাধ্যমিক সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেন । কিন্তু সব কিছু তো আর থেমে থাকলে চলে না । তারই ধারাবাহিকতায় একাদশ শ্রেণীর প্রাতিষ্ঠানিক সকল কার্যক্রম অনলাইনে “”এরিক ইয়ান”” এর তৈরি জুম অ্যাপ এর মাধ্যমে চলতে থাকে ।
সেখানে প্রথমত,শিক্ষকদের সাথে ওরিয়েন্টেশন ক্লাস , ক্লাস টিচার সহ সকল শিক্ষকদের সাথে পরিচিতি পর্ব, তারপর ক্লাস রুটিন প্রকাশ হওয়া এবং চূড়ান্ত ভাবে নিয়মিত রুটিনের মাধ্যমে ক্লাস শুরু । কিছুদিন পর ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচন করেন শ্রেণি শিক্ষক । ছেলেদের মধ্যে আমি মেয়েদের মধ্যে অনন্যা সরকার নির্বাচিত হয় । ক্লাসের ৬৪ জন শিক্ষার্থী হয়তো ৬৪ জেলার, কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময়ে সবাই তাদের শিক্ষকের দেওয়া আইডি পাসওয়ার্ড দিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করে আবার কেউবা শিক্ষকের পাঠানো লিংক দিয়ে তখন ওই ৬৪ জেলার সকলেই ৬ ইঞ্চি ডিসপ্লের মধ্যে। যেন পৃথিবীটা যেন ছোট হতে হতে ড্রয়ারে রাখা বোকা বাক্সেতে বন্দী!
জুমে স্যাররা ক্লাস নেন, কিন্তু তাদের কাঙ্ক্ষিত অফলাইনের সেই জীবন্ত ক্লাসটি হয়তো শত চেষ্টার পর ও সেই জীবন্ত লাগে না। তবে অনেক শিক্ষক আবার সেই অনলাইন ক্লাসটিও গল্প আড্ডায়,জীবনবোধ দিয়ে জীবন্ত করে তোলেন। হয়তো তাদের কাঙ্ক্ষিত শাসনটি ও করতে পারেন না অনলাইনের এ-ই জটিল ধাঁধাঁয়। শিক্ষকরা তাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের চোখের সামনে দেখে যে শান্তি পান সেই তৃপ্তি হয়তো তারা আর পান না।চোখে হয়তো ঠিকই দেখেন ৬ ইঞ্চি ডিসপ্লেতে কিন্তু সেটাই কি চোখের শান্তি মেটানো দেখা । এ একটি যান্ত্রিক অবস্থা…
এবার নিতুন ক্যাম্পাস নিয়ে কিছু বলার ইচ্ছে হয়। বাংলাদেশের অন্য সব কলেজ থেকে আমার কেলেজ একটু আলাদা, অন্যরকম। কারণ,
আমাদের ক্যাম্পাসের প্রতিটা কোনা যেখানে কানায় কানায় পূর্ণ থাকে শিক্ষার্থী দিয়ে, সেখানে হয়তো এখন একটা কাক পক্ষীও নেই । কেন নেই সেই প্রশ্ন হয়তো ক্যাম্পাস নিজেকেই নিজে করে । কিন্তু ক্যাম্পাস কি তার উত্তর দেয় ??
ক্যাম্পাস এতক্ষণে কোলাহলপূর্ণ থাকতো ।
শিক্ষকরা ধারাবাহিক ভাবে ক্লাস নিতো , কুইজ ক্লাব ঘরে কুইজ হতো , চলত দেশ সেরা বিতর্ক ক্লাবের বিতর্ক, বিজ্ঞান ক্লাবের বিজ্ঞান চর্চা, আবৃত্তি ক্লাবের বিদ্রোহী কবিতা, আর কত কী! শিক্ষার্থীরা টিফিন টাইমে “”ডালিয়া “” ক্যান্টিনে ভিড় জমাতো । তারা তাদের ক্যাম্পাসের ২৪ টি ক্লাবের মধ্যে বিভিন্ন সহ প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতো, সেখানে কেউ তাদের ভিতরে বিরাজমান প্রতিভা দেখিয়ে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি পেত,কেউ কলেজ লিডার হত, কেউবা হাউস লিডার। সব মিলিয়ে একটা উৎসবের আমেজ থাকতো ।
আমার কলেজে বিভিন্ন গ্যালারির মাধ্যমে শিক্ষণীয় সকল বিষয়কে তুলে ধরার একটা চেষ্টা করা হয়েছে এবং যা ১০০% স্বার্থক । একেকটি গ্যালারি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যা একবার একটি শিক্ষার্থী ঘুরে দেখলেই তার মনের ভিতরে ধারণ করতে পারবে এবং সেই বিষয় সম্পর্ক এ তার একটি সুনিশ্চিত ধারনা সে পেয়ে যাবে । আমাদের কলেজের গ্যালারি সমূহ একনজরে দেখে আসা যাক…
✓মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি
✓Health & Hygiene Gallery
✓Science Galaxy
✓আমার সোনার বাংলা গ্যালারি
✓শিল্পাঙ্গন গ্যালারি
✓লোকশিল্প ও কারুকাজ গ্যালারি
✓শিল্প সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ গ্যালারি
✓দুর্বার বাংলাদেশ গ্যালারি
✓স্বপ্ন সিড়ি
✓ সশস্ত্রবাহিনী গ্যালারি
✓জ্ঞান কুঞ্জ গ্যালারি
✓মানবিক ও বিজনেস গ্যালারি
✓স্পোর্টস গ্যালারি
আর নতুন ভাবে তৈরি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কর্ণার।
এগুলোকে হয়তো এখন আর কেউ দেখে না । কিন্তু এগুলোর সাথে পরিচিত হয়েছে অনেকেই । আরো সুদূর ভবিষ্যতে আরো অনেকে পরিচিত হবে ইনশা আল্লাহ। আর জ্ঞান বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়বে জানার দারুণ ইচ্ছে।
আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহ তায়ালা এই পরিস্থিতি কোন একদিন স্বাভাবিক করে দিবেন । । সর্বোপরি একটাই কামনা নিয়ে আমার এই লেখা শেষ করি আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সকলকে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেন । আর আমরা আমাদের প্রিয় সেই ক্যাম্পাসের সাথে বেড়ে উঠে যেন সৎ ,পরিশ্রমী , নিষ্ঠাবান, কর্মঠ ও মানুষের মত মানুষ হতে পারি।
কারণ আমাদের কলেজের উপরে বড় করে লেখা আছে
” ভালো মানুষ হও,সাফল্য তোমার পেছনে ছুটবে “.
মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে ,
সেকশন-এলিথিয়া