হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের বয়ানে উদ্বুদ্ধ হয়ে দুই মাদ্রাসাছাত্র কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
রবিবার বিকালে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের সম্মেলনকক্ষে পুলিশের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে এই তথ্য জানান খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খন্দকার মুহিদ উদ্দীন।
ডিআইজি বলেন, ‘রাত ২টা ১৬ মিনিটে পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিহিত দুই মাদ্রাসাছাত্র পায়ে হেঁটে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যস্থলে আসেন। কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ওই ভাস্কর্যের গা ঘেঁষে থাকা মই বেয়ে উপরে ওঠেন। পিঠে থাকা ব্যাগ থেকে হাতুড়ি বের করে প্রথমে বঙ্গবন্ধুর হাতের উঁচু তর্জুনে আঘাত করেন। হাতুড়ির আঘাতে হাত ও পরে মুখের অংশে ভাঙচুর করেন। প্রায় নয় মিনিট পর একই মই দিয়ে নেমে পায়ে হেঁটে চলে যান তারা। পুলিশ ওই দুই মাদ্রাসাছাত্রসহ মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।’
খন্দকার মুহিদ উদ্দীন বলেন, ‘বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রথমে দুই ভাই মাদ্রাসাছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তারা ভিডিও দেখে ভাস্কর্য ভাঙা দুজনকে চিনতে পারেন। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে ভারত সীমান্তের দৌলতপুরের ফিলিপনগর গোলাবাড়ি নামক নিজ গ্রাম থেকে শামছুল আলমের ছেলে সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ (২০) ও মিরপুর উপজেলার শিংপুর থেকে সমসের মৃধার ছেলে আবু বক্কর ওরফে মিঠুনকে (১৯) গ্রেপ্তার করে। এরা কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া পশ্চিমপাড়ার ইবনে মাসউদ মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র।’
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পরবর্তী সময়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, একই মাদ্রাসার দুই শিক্ষক তাদেরকে পালাতে ও সাহস জুগিয়ে সহযোগিতা করেছেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে শিক্ষক আল আমিন (২৭) ও ইউসুফ আলীকে (২৬) গ্রেপ্তার করে।
আল আমিন মিরপুর উপজেলার ধুবইল গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে ও ইউসুফ আলী পাবনা জেলার আমিনপুর থানার দিয়াড় বামুন্দি গ্রামের আজিজুল মন্ডলের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি বলেন, ‘এই ঘটনায় কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এই ঘটনায় পুরো দেশ যেমন ব্যথিত হয়েছে আমরাও তাই। এর পেছনে কোনো লিংকেজ আছে কি না তা তদন্ত করে বের করা হবে। ইতিমধ্যে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।’
কুষ্টিয়া পৌরসভার উদ্যোগে শহরের ব্যস্ততম পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ চলছে। একই বেদীতে বঙ্গবন্ধুর তিন ধরনের তিনটি ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া এই বেদীতে জাতীয় চার নেতার ভাস্কর্যও নির্মাণ করা হবে। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। শুক্রবার রাতে দুর্বৃত্তরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটির ডান হাত ও পুরো মুখমণ্ডল, বাঁ হাতের অংশ-বিশেষ ভেঙে ফেলে।
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে সম্প্রতি সরকার রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর একটি বড় ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ শুরু করে। তবে হেফাজতে ইসলামসহ ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠন ভাস্কর্যকে মূর্তির সঙ্গে তুলনা করে এর প্রতিবাদ জানায়।
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভাস্কর্য ও মূর্তি এক নয়। দুটির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে ইসলামপন্থীদের বিরোধ চলছে। ধর্মীয় বক্তাদের অনেকেই ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্যও দিয়েছেন। তবে বেশি আলোচনায় এসেছেন মাওলানা মামুনুল হক ও মাওলানা ফয়জুল করীম।