শিক্ষক সঙ্কট, লাইব্রেরিয়ান নেই, হিসাবরক্ষক নেই, কর্মচারীও নেই তিন চতুর্থাংশ। নেই আর নেই এ ভগ্নদশায় চলছে জেলার মহিলা শিক্ষার একমাত্র শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ। কলেজের ৬টি বিভাগে কোনও শিক্ষক নেই, বিজ্ঞান অনুষদের তিনটি বিভাগের একটিতেও নেই কোন প্রদর্শক ( ডেমোনেস্ট্রটর), এছাড়া অফিস সহকারীর ১৪টি পদের মধ্যে আছেন চারজন, সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদ থাকলেও শুন্য রয়েছে, নেই হিসাবরক্ষকও।
এতসব নেইয়ের মাঝে আরো যেটি নেই তা হলো ঠিকমত ক্লাস। ফলে শিক্ষার্থীদের অন্য কলেজের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়ে কোনমতে সিলেবাস শেষ করতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে উর্দ্ধতন মহলে চিঠি দিলেও শুন্য পদে মিলছে শিক্ষক-কর্মচারী। অতিথি শিক্ষক দিয়ে কোনমতে গণিত ক্লাস করানো হচ্ছে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ৬টি বিভাগ যার মধ্যে- ব্যবস্থাপনা, রসায়ন, প্রাণীবিদ্যা, গণিত, ইতিহাস, সমাজকর্ম বিভাগের কোন শিক্ষক নেই। অর্থনীতি বিভাগে অনার্স চালু রয়েছে। কিন্তু চারজন শিক্ষকের স্থলে আছেন ২ জন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ২ জনের স্থলে আছেন ১ জন, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান ও জীব বিজ্ঞান বিভাগে কোন প্রদর্শক নেই, প্রধান অফিস সহকারী নেই, হিসাবরক্ষক নেই, অফিস সহকারী হিসেবে ১৪টি পদের স্থলে আছে মাত্র ৪ জন। ২৯টি শিক্ষকের পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন ২০ জন।
উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষের ছাত্রী ফারমিন আক্তার পৃথি জানান, শিক্ষক সঙ্কটের কারণে কোন সপ্তাহে একদিন ক্লাস হয়, কোন সপ্তাহে হয় না। ফলে নিজগ্রাম মুজিবনগরের মোনাখালী থেকে শুধুমাত্র প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে শহরে আসতে হয়।
অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী পিংকি খাতুন, জুলেখা খাতুন জানান, ঠিকমত ক্লাস না হওয়ায় ছাত্রীরাও কলেজে আসে না।
উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করা মেঘলা খাতুন জানান, বিজ্ঞান বিভাগে পড়লেও দুই বছরে কোন দিন প্রাকটিক্যাল ক্লাস পায়নি ডেমোনেষ্ট্রেটর শিক্ষক না থাকায়। দুই বছর ধওে পৌর কলেজের হান্নান স্যারের কাছে গণিত, সরওয়ার স্যারের কাছে রসায়ন আর সাহিদ স্যারের কাছে বায়োলজি পড়েছি। কারণ আমাদের কলেজে কোন শিক্ষক নেই।
জেলা নারী শিক্ষার বিস্তার ঘটানোর লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে ‘মেহেরপুর মহিলা কলেজ’ নামে কলেজটির যাত্রা শুরু হয় প্রায় ৩ একর জমিতে। পরবর্তিতে ১৯৯২ সালে জাতীয়করণের মধ্যে দিয়ে ‘মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ’ নামকরণ হয়। পরবর্তিতে ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসের অনুষ্ঠানে
মুজিবনগর আম্রকাননের সমাবেশে মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন। পরবর্তিতে ২০১৩-২৪ শিক্ষা বর্ষ থেকে বাংলা ও অর্থনীতি দুটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। বর্তমানে আরো তিনটি ব্যবস্থাপনা, ইংরেজি ও পৌরনীতি বিষয়ে অনার্স চালুর প্রক্রিয়া চলছে। তবে দিনের পর দিন এভাবে শিক্ষক-কর্মচারী সঙ্কটে ভুগতে থাকলে জেলায় নারী শিক্ষায় ব্যঘাত ঘটার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
অন্যান্য শিক্ষকরা এ নিয়ে মুখ খুলতে না চাইলে কথা হয় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক-কর্মচারী শঙ্কটে ভুগছি। কয়েকদফা চাহিদা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে, কোন সদুত্তর মেলেনি। শিক্ষক-কর্মচারীর শুন্য পদ পূরন না হলে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে।