গাংনী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাকিউল ইলমার হত্যাকারী ওহিদুলের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০ টার সময় গাংনী উপজেলা পরিষদ চত্তরে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি গাংনী উপজেলা শাখা।
গাংনী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির উপজেলা শাখার সভাপতি পলাশীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্তারুজ্জামান বকুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হাফিজুর রহমান বকুল।
বক্তব্য রাখেন, গাংনী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নির্বাহী সভাপতি ও এবাদৎখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাওছার আলী, ধানখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন, নওদাহোগলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহিদুল ইসলাম, খড়মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুল ইসলাম, নিহত শিক্ষক জাকিউল ইসলামার মামা ফেরদৌস আহম্মেদ, ঘাতক ওহিদের বড় বোন বুলবুলি খাতুন, নিহত ইলমার ছোট ভাই ত্বোহা, বড়বামন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হাসানুজ্জামান হাসান, সহড়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, গাংনী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও নিহত ইলমার সহকর্মী মুক্তা খাতুন, হাড়িয়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লাবনী আক্তার প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ঘাতক মহিবুল ইসলাম ওহিদের দ্রুত বিচার ও সর্ব্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।
ঘাতক মহিবুল ইসলাম ওহিদের বোন তার অপর বোন ও ভাবিকে হত্যার দায়ে আপন ভাই মহিবুল ইসলাম ওহিদের ফাঁশি দাবি করেন। শিক্ষকদের আয়োজন মানববন্ধনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এদাবি করেন। তিনি বলেন, ঘাতক আমার ছোট ভাই। আমি তারপরও তার সর্ব্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
নিহত ইলমা গাংনী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (১২ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১ টার সময় পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগাভাগি ও পুকুরে মাছ ছাড়ার প্রস্তুতিকালে মহিবুল ইসলাম ওহিদ তার বোন জোছনা খাতুন, মেঝো ভাই জাহিদ হোসেন, তার স্ত্রী জাকিউল ইলমা ও ছোট বোন শামীমা খাতুনকে রামদা দিয়ে এলাপাতাড়ি কোপাতে থাকে। ঘটনাস্থলেই জাকিউল ইলমা ও জোছনা খাতুন নিহত হন। গুরুতর আহত হন ভাই জাহিদ হোসেন ও অপরা বোন শামীমা খাতুন।
ঘাতক মহিবুল ইসলাম ওহিদ সানঘাট গ্রামের দাড়ের পাড়া এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে ও স্থানীয় এসজিও সানঘাট পল্লী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক।
হত্যাকন্ড ঘটিয়ে ঘাতক মহিবুল ইসলাম ওহিদ রক্তমাখা শরীরে মাঠ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আমঝুপি এলাকা থেকে ডিবি ও গাংনী থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে আটক হন। বর্তমানে সে পুলিশী প্রহারায় মেহেরপুর ২৫০ শয্য বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জানা গেছে, , পৈতৃকি সম্পত্তি নিয়ে ভাই বোনদের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ মামলা মোকদ্দমা চলে আসছিলো। আজ সকালে নিহত জোছনা খাতুন অপর বোন শামীমা খাতুন পিতার ১ একর ২৭ শতক জমির পুকুরে মাছ ছাড়তে এসেছিলেন। সকালে সবাই মিলে বাড়িতে মিমাংসায় বসেছিলেন। মিমাংসার এক পর্যায় বোন জোছনা খাতুন, শামীমা খাতুন, মেঝো ভাই জাহিদ ও তার স্ত্রী জাকিউল ইলমা পুকুরে মাছ ছাড়তে যান। এসময় মহিবুল ইসলাম ওহিদ ধারাল রামদা দিয়ে তাদের একের পর এক কোপাতে থাকেন। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন বোন জোছনা খাতুন ও ভাইয়ের স্ত্রী গাংনী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (বরখাস্ত) জাকিউল ইলমা। এসময় গুরুতর আহত হন অপর বোন শামীমা খাতুন ও ভাই জাহিদ হোসেন।
ঘাতক মহিবুল ইসলাম ওহিদ সানঘাট পল্লী উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও সানঘাট গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে।
প্রতিবেশী তোহিদুল ইসলাম জানান, আব্দুল আজিজের প্রায় ৩০ বিঘা জমি। ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ে। এদের মধ্যে ঘাতক মহিবুল ইসলাম সবার ছোট। বাবা মারা যাবার সময় আব্দুল আজিজ তার স্ত্রী রশিদা খাতুনকে ১১ বিঘা জমি রেজিস্ট্রি দিয়ে গেছেন। মায়ের ১১ বিঘা জমি জমি নিজ নামে নেওয়ার জন্য মহিবুল ইসলাম দীর্ঘদিন যাবৎ চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। এছাড়া বাড়ির ১ একর ২৮ শতক জমির পুকুর আওয়ামী লীগের দলীয় ক্ষমতায় জোর দখল করে মাছ চাষ করে আসছিল। এনিয়ে গ্রামের মন্ডল মাতব্বর নিয়ে একাধিকবার শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও কোনো সমাধান হয়নি।
এনিয়ে মহিবুল ইসলাম ওহিদ তার ভাই ও বোনদের নামে গাংনী থানা ও মেহেরপুর আদালতে একাধিক মামলা দিয়েছেন। তার মামলায় নিহত জাকিউল ইলমা এর আগে বরখাস্ত হয়েছেন।
নিহত জোছনা খাতুনের স্বামী হাফিজুল ইসলাম বলেন, মহিবুল ইসলাম গাংনী উপজেলা শহরের ১৮ শতক জমি ও বাড়ির ১ একর ২৮ শতক জমির পুকুর একাই দখল করে আছেন। এছাড়া আমার শাশুড়ির ১১ বিঘা জমি দখলে রেখেছে ছোট ভাই ওহিদ। এনিয়ে সে কয়েকটি মামলা করেছে। আজ সকালে আমি আর আমার স্ত্রী জোছনা খাতুন সানঘাট গ্রামে আসি। বাড়িতে সবাই বসে মিমাংসার চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। ওহিদ এই পুকুরটি বিগত চার বছর যাবৎ একাই মাছ চাষ করছিলেন। সবার দাবি ছিল এই চার বছর বাকি ভাই বোন চাষ করবে। এক পর্যায়ে মাছ ছাড়ার কথা বললে সে তার ব্যাগে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে একের পর এক এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হওয়ার পর সে পালিয়ে যায়।
প্রতিবেশী তহিদুল ইসলাম জানান, ভাই বোনের জমির ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একাধিকবার শালিস বৈঠক করেছেন। ভাই বোনরা ওহিদ ২ এক বিঘা জমি বেশী দিয়ে তাদের ফ্যাসাদ মেটানোর চেষ্টা করেছেন। তারপরেও ওহিদ সেটা মেনে নেয়নি। নিজেকে আওয়ামীলী কর্মী দাবি করে সে জোর করে একাই ভোগ করছে পিতার রেখে যাওয়া পুকুর, মাঠের জমি ও গাংনীর বাড়ি। তিনি আরও বলেন, ওহিদ ভাই বোনের নামে একাধিক মামলা দিয়ে তাদের বিভিন্ন সময়ে হয়রানি ও নির্যাতন করেছে। শুধু ভাই বোনকেই নয়, এলাকার অনেক মানুষকে সে মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। সে যখন গাংনী থেকে গ্রামে আসে তার ব্যাগের মধ্যে সব সময় রামদা ও বড় সাইজের দা থাকে। ভাই বোন কিছু বললে তাদের হত্যা করবে বলে হুমকী দিয়ে আসছিল।