বৃটিশ বেনিয়া ইংরেজরা সেই কবে চলে গেছে। কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া কর্মপদ্ধতি যায়নি। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কো: লি: ইংরেজদের সেই মানসিকতা থেকে বের হতে পারেনি। প্রতিবছর কৌশলে প্রথম ধাপের বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের তৃতীয় ধাপের বিদ্যুৎ ব্যবহার দেখিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ প্রতিমাসে ১৮ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করছে। ডিমান্ড চার্যে এক কিলোওয়াটের বিদ্যুৎ চাহিদার আবেদন করে দুই কিলোওয়াট লোড নেয়া হচ্ছে দাবিতে প্রতি গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। এই ডিমান্ড চার্যের নামে গ্রাহকপ্রতি গড়ে ১০০ টাকা হিসেবে নেয়া হলেও মাসে ১৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে। সেই হিসেবে এই দুই পদ্ধতিতে মেহেরপুর পৌর এলাকার গ্রাহকদের থেকে বছরে কৌশলে অতিরিক্ত সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কো: লি:।
মেহেরপুরে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়ীত্বে আছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কো: লি:। মেহেরপুর পৌর এলাকায় তাদের ভোক্তা (গ্রাহক) ১৮ হাজার। এরমধ্যে ৫ হাজার রয়েছে প্রিপেইড মিটারের আওতায়। ১৩ হাজার ভোক্তা ডিজিটাল মিটারে। এসব ভোক্তাদের সাতটি ধাপে বিদ্যুৎ বিল নেয়া হয়। প্রথম ধাপে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত ৩ টাকা ৭৫ পয়সা হিসেবে। দ্বিতীয় ধাপে ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত ৫ টাকা ৭২ পয়সা ইউনিট হিসেবে। তৃতীয় ধাপে ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ৬ টাকা প্রতি ইউনিট। ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর মিটার রিডার প্রতিমাসে ধাপ অতিক্রম করে বিল দাখিল করছেন। অতিরিক্ত বিল ব্যবহার দেখানোতে ভোক্তাদের প্রতিমাসেই বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে বিল সংশোধনের জন্য ছোটাছুটি করতে হয়। সেখানে বাদানুবাদের ঘটনাও অহরহ ঘটছে। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের জানানো হয় বিদ্যুৎ বিল সংশোধনে স্থানীয়ভাবে তাদের সেই ক্ষমতা আর নেই। সরাসরি ঢাকা অফিস নিয়ন্ত্রণ করে। পরের মাসে বিল সমন্বয় করার কথা বলে গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেয়া হয়।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কো: লি: মেহেরপুরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান- ডিমান্ড চার্য নামে টাকা নেয়াটা অহেতুক। গ্রাহক সকল শর্ত পূরণ করার পরেই তাকে সংযোগ দেয়া হয়েছে। গ্রাহককে কেন প্রতিমাসে অতিরিক্ত চার্য দিতে হবে।
মেহেরপুর পৌর এলাকার কাথুলী সড়কে ৬৩৯ হিসাব নম্বরের গ্রাহক সেপ্টেম্বর মাসে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছেন প্রথম ধাপে। প্রতি ইউনিট বিল দাখিল করার কথা ৪ টাকা ১৯ পয়সা হিসেবে। তাকে বিল দাখিল করা হয়েছে তৃতীয় ধাপে প্রতি ইউনিট ৬ টাকা হিসেবে। এনিয়ে ওই গ্রাহকের সাথে বিদ্যৎ বিভাগের প্রকৌশলীর সাথে বাদানুবাদ হয়। হোটেল বাজারের মামুন হোসেন অভিযোগ করেন- মাঝে মধ্যেই তাকে বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসে যেতে হয়। মামুন জানান- কোন ভোক্তার অভিযোগ আমলে নেয়া হয়না। তিনি সোলার পদ্ধতি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলেও জানান।
জানতে চাইলে কাথুলী সড়কের দায়ীত্বপ্রাপ্ত মিটার রিডার আফজাল হোসেন জানান- তিনি শারীরীকভাবে ছোট হওয়ার কারনে উঁচুতে থাকা মিটারের ইউনিট সঠিক দেখতে না পাবার কারণে এমন হতে পারে।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কো: লি: মেহেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: তোফাজ্জেল হোসেন বলেন- রিডিং ভুল হলে আগে স্থানীয়ভাবে আমরা সংশোধন করতে পারতাম। এখন কেন্দ্রিয় কার্যালয় নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে এখন আমাদের কিছু করার নেই। কেউ অভিযোগ করলে আমরা কেন্দ্রে সেই অভিযোগ প্রেরণ করি। তিনি স্বীকার করেন মিটার রিডার আফজাল হোসেনের এলাকার ভোক্তারা এমন অভিযোগ করেন। তিনি আরও স্বীকার করেন পরের মাসে ইউনিট সমন্বয় করা হলেও বিভিন্ন ধাপ পদ্ধতির কারনে ভোক্তা আর্থিকভাবে দণ্ডিত হন।
বিদ্যুৎ ভোক্তাদের দাবি ধাপ পদ্ধতি এবং আবাসিক সংযোগে লোড পদ্ধতির নামে মাসিক টাকা বন্ধের।