পবিত্র কুরআনে কারীমায় মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “আমার বান্দাদের বলে দাও, আমি তোপরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর আমার শাস্তি- সেটাও অতি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি!’(সুরা হিজর; ৪৯-৫০)
পবিত্র কুরআনে কারীমায় অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, হা-মিম। এই কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর পক্ষ থেকে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন, তাওবা কবুল করেন। যিনি শাস্তিদানে কঠোর, শক্তিশালী। (সুরা মুমিন, ১-৩)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ তায়ালা যেমন ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু, তেমনি তিনি কঠিন শাস্তিদাতাও। একজন মুমিনের দ্বীলের ভিতরে দুইটি প্রকষ্ট থাকবে যার একটিতে থাকবে মহান আল্লাহর ভয় অন্যটিতে থাকবে তাঁর রহমতের আশা। এ জন্য ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ আকিদা ও বিশ্বাস হলো, আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করতে হবে আশা ও ভয়ের সমন্বয়ে।
হজরত আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক যুবকের কাছে গেলেন, যখন সে মৃত্যুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি নিজেকে কি অবস্থায় মনে করছ? সে উত্তর দিল, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি আল্লাহর রহমতের আশা করছি, আবার নিজের গুনাহের জন্য ভয়ও পাচ্ছি। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এমন মুহূর্তে যার অন্তরে এ দুটি জিনিস একত্রিত হয় তাকে আল্লাহ্ আশার বস্তুটি দান করে থাকেন আর যে জিনিসটি থেকে সে ভয় পায় সে জিনিস থেকে আল্লাহ তাকে নিরাপদ করে দেন। (তিরমিযী)
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ফারুক রাযিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, ‘কাল কিয়ামতের ময়দানে যদি অদৃশ্য জগৎ থেকে আওয়াজ দেয়া হয়: একজন মানুষ ব্যতীত অপর কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না, তখন আমি ধারণা করি এবং প্রবল আশা রাখি যে, সে ব্যক্তি আমিই হবে। আর যদি অদৃশ্য জগতের বাণী এই হয় যে, কেবল একটি মাত্র লোক দোজখে যাবে, তবে আশঙ্কা করছি যে, না জানি সেই লোক আমিই হই’ (কিমিয়ায়ে সা’আদত)
প্রকৃতপক্ষে মানুষের মনে আল্লাহ ভীতি এবং রহমতের আশা সমানভাবে থাকতে হবে। আল্লাহর ভয় মানুষের অন্তরের চালনাকারী, যা তাকে সকল ভালো কাজের দিকে ধাবিত করে। সকল অকল্যাণ ও বদ-আমল থেকে বিরত রাখে। আর আশা হচ্ছে সম্মুখবর্তী পরিচালক যা বান্দাকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে উদ্বুদ্ধ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি পর্যন্ত নিয়ে যায়। বড় বড় নেক-আমল করার হিম্মত ও সাহস বাড়িয়ে দেয়। বদ-আমল থেকে সরিয়ে আনে। আর এটাই হলো গোলামী ও দাসত্বের সারমর্ম।
বর্তমান করােনা পরিস্থিতিতে পুরা বিশ্ব যখন দিগি¦দিক হারিয়ে হতবিহব্বল তখন একজন মুমিনের কাজ হচ্ছে, সে হতবিহব্বল হবে না, দিগি¦দিক হারিয়ে পেরেশান হবে না। সে তার মালিক কতৃক প্রেরিত আজাবকে ভয় করবে আবার তাঁর রহমতের আশাও করতে থাকবে। মনে রাখতে হবে, মহান আল্লাহ্ তায়ালা পৃথিবীতে পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতীর উপর বিভিন্ন রােগ যেমন, প্লেগ, যক্ষ্মা, কলেরা, ম্যালেরিয়া, বসন্ত প্রভৃতির মাধ্যমে মহামারী প্রেরণ করেছিলেন। আবার নির্দিষ্ট সময় পর তা তুলে নিয়েছেন। যা যুগযুগ ধরে স্থায়ী হয় নি। ঠিক তেমনি বর্তমান বিশ্বে করােনাভাইরাসের যে প্রাদুর্ভাব ঘটেছে তাও মহান আল্লাহ্ তায়ালা নির্দিষ্ট সময় পর তুলে নেবেন। ইনশাআল্লাহ। আমাদের জন্য করনীয় হল সেই মহান মালিক কতৃক প্রেরিত আজাবকে ভয় করে সমস্ত প্রকার গুনাহে অনুতপ্ত হয়ে তাওবা ইস্তেগফার করা ও নেক আমালের দিকে ফিরে আসা, আর সাথে সাথে তাঁর রহমতেরও আশা করা।
আসুন আমরা সেই মহান মালিকের নিকটে দু’আ করি, হে মালিক! আমরা আমাদের সমস্ত প্রকার গুনাহে অনুতপ্ত হয়ে অপনার দরবারে তাওবা করছি আপনি আমাদের তাওবা কবুল করুন। আপনি আমাদেরকে নিরাশ ও হতাশ করবেন না। আমাদের মন্দের কারণে আমাদেরকে আপনার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করবেন না। আমাদের অপরাধের কারণে আমাদেরকে আপনার অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত করবেন না। (আমিন)
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
লেখক:
বায়োকেমিস্ট. মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়, খুলনা।