অনেকটা শখের বশে মাত্র চারটি মধুর বাক্স কিনে সরিষা রাখেন। কিছুদিন পর থেকে তিনি মধু সংগ্রহ শুরু করেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন মৌ চাষ। এখন তার খামারে কয়েকশ’ মৌমাছির বাক্স। গড়ে তুলেছেন ‘মিষ্টি মৌ-খামার’। বলছিলাম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের গেটপাড়া গ্রামের মামুন-অর-রশিদের কথা। মৌমাছি চাষ করে তিনি এখন বেশ । এলাকায় তিনি এখন ‘মধু মামুন’ নামে পরিচিত।
জানা গেছে, পড়াশোনা শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন মামুন। কিন্তু তা আর বেশিদিন করা হয়ে ওঠেনি। এলাকার বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতেই উদ্যোগ নেন মৌ খামার গড়ে তোলার। এরপর থেকেই মধুর বাণিজ্যিক চাষের দিকেই মনোযোগী হন তিনি। তার খামারে এখন ১৬ জন কর্মী কাজ করেন। বছরে ১০-১২ টন মধু উৎপাদন হয় তার খামারে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তার মধু এখন রফতানি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে মিরপুর উপজেলার ধুবাইল মাঠের খামারে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তৃত সরিষা মাঠে চলছে মধু আহরণ। সরিষা ¶েতের মাঝে ফাঁকা একটু জায়গার বেশ কিছু কাঠের বাক্স। সেখানে পুরো মাঠ থেকে মৌমাছির আনাগোনা। প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেসব বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে।
মামুন-অর-রশিদ বলেন, ‘১৯৯৭ সালে শখের বসে ২ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে মাত্র ৪টি মধুর বাক্স কিনে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ শুরু করি। ১৯৯৮ সালে মাস্টার্স পাস করে কিছুদিন চাকরি করেছিলাম। ভালো না লাগায় চাকরি ছেড়ে মধুর বাণিজ্যিক চাষ শুরু করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কুষ্টিয়ার মিরপুর ও নাটোরের গুরুদাসপুর এবং চলনবিলে এবার সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণ করছি। এছাড়াও এবারই প্রথমবারের মতো রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে টমেটো ফুলের মধু সংগ্রহ শুরু করেছি।’
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন সময় তিনি বিভিন্ন এলাকা থেকে কালজিরা ফুলের মধু ও লিচু ফুলের মধুও সংগ্রহ করেন। এ বছর ৩০০টি বাক্স থেকে থেকে দুই হাজার কেজি মধু পাবেন বলে আশা করছেন।
খামারে কর্মরত জাহান আলী নামের এক শ্রমিক জানান, এই খামারে কাজ করেই তার সংসার চলে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাকে মধু সংগ্রহ করতে হয়। খামারে কয়েকজনের কর্মসংস্থান হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মামুন বলেন, ‘কৃষি অফিসার আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। আমাকে কুষ্টিয়া, চলনবিল, মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মধু আহরণে যেতে হয়। তাদের কাছ থেকে মৌ বাক্সসহ রানী মৌমাছি এবং মধু আহরণের জন্য একটি পিকআপ পেয়েছি। এছাড়াও উন্নতমানের বাক্সসহ বিভিন্ন সময়ে নানান সুযোগ সুবিধা পেয়েছি।’
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘উপজেলার মডেল মৌ-খামারি মামুন মধুর চাষ করে হয়েছেন। তার সাফল্য দেখে আরও অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। সাধারণ উপায়ে মধু সংগ্রহ করতে গেলে মান ৪০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। আর মামুনের খামারে প্রযুক্তির ব্যবহার করায় মধুর মান থাকে।’
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর সাড়ে এগারশ’ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এবছর বারোশ’ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিংকন বিশ্বাস বলেন, ‘মিরপুর উপজেলায় তামাকের চাষ ছিল অনেক বেশি। তবে এখন তামাক চাষ কম করা গেছে। এখন মাঠজুড়ে হলুদ সরিষা দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়।’
এস এম জামাল, কুষ্টিয়া থেকে।