নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নাজমুল নামে করোনায় আক্রান্ত এক যুবককে মধ্যরাতে মারধর করে রাস্তায় বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বাড়ির মালিকসহ স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার রূপসী বাগবাড়ি এলাকায় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে।
মারধর করে তাড়িয়ে দেয়ার পর নাজমুল একটি মসজিদের সামনে থাকা একটি রিকশায় বসে কান্নাকাটি করতে থাকেন। এসময় তার পরনে ছিল পিপিই গাউন। এ অবস্থাতেই রাস্তায় বের করে দেয়া হয় তাকে।
পরে তাকে উদ্ধারে তৎপরতা চালায় থানা পুলিশ এবং উপজেলা প্রশাসন।
নির্যাতনের শিকার করোনা রোগী নাজমুল ময়মিনসিংহের বাসিন্দা আবু সিদ্দিকের ছেলে।
রুপগঞ্জের রূপসী বাগবাড়ি এলাকার নূর হোসেন ওরফে কাইল্লা নূরার বাড়িতে ভাড়া থেকে তিনি স্থানীয় সিটি গ্রুপে চাকরি করার পাশাপাশি লেখাপড়া করছেন বলেও এলাকাবাসী ও স্বজনরা জানিয়েছেন।
নাজমুলের মামা সিরাজ বলেন, নাজমুলের জ্বর, সর্দিসহ করোনার নানা উপসর্গ দেখা দিলে ৩ মে উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগে তার নমুনা দিয়ে আসি। বুধবার রিপোর্টে তার পজিটিভ আসে। কিন্তু তার কোনো উপসর্গ ছিল না। তারপরও চিকিৎসকের পরামর্শে বাসাতেই ছিল। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর রাতে বাড়ির মালিকসহ এলাকার কিছু লোকজন এসে জোর করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এই অবস্থায় সে মীরবাড়ি মসজিদের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। এটা খুবই অমানবিক একটি কাজ।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম যুগান্তরকে বলেন, আমি একটু আগে বিষয়টি শুনেছি। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ডাক্তার এবং পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আমি নিজেও ওই ছেলের সঙ্গে কথা বলেছি। এমন অমানবিক কাজ কেউ করতে পারে না।
তিনি বলেন, ছেলেটিকে পুলিশের মাধ্যমে উদ্ধার করে তার বাসায় পাঠানো হয়েছে। তার মা তার সঙ্গে আছে। এখন আর দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। তার পাশে আমরা আছি।
এটি রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ হয়েছে বলে উল্লেখ করে ইউএনও জানান, যে ব্যক্তি বা যারাই এই কাজটি করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সকাল পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করছি। তদন্ত করে শনাক্ত করব কারা এর সঙ্গে জড়িত। তারা যতো প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
মমতাজ বেগম আরও বলেন, ছেলেটি আমাদের পরামর্শে বাসায় আইসোলেশনে ছিল। এতো রাতে একজন মানুষকে এভাবে বাড়ি থেকে বের করে দেয়াটা অমানবিক। যেহেতু দেশে আইন আছে, প্রশাসন আছে। আমরা বিষয়টি দেখব। আইন হাতে তুলে নেয়ার এখতিয়ার কারো নেই।
বিষয়টির নিন্দা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ওই ছেলে ওই বাড়িতেই থাকবে। তাকে যদি সেখান থেকে হাসপাতাল বা অন্য কোথাও নিতে হয় সেটি আমরা নেব। তার নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করব। এভাবে একজন করোনা রোগীকে বের করে দেয়া মানে অন্যকে সংক্রমিত করা।
এ ব্যাপারে জানতে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি মাহমুদুল হাসানের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।