চট্টগ্রামে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (কেজিডিজিএল) ৬০ কর্মকর্তার পদোন্নতি নিয়ে তোলপাড় চলছে। অভিযোগ উঠেছে, এসব কর্মকর্তার পদোন্নতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে।
এর মধ্যে একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিয়োগ লাভে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার আগেই কেজিডিজিএলে পদোন্নতি দেয়ার ঘটনা ঘটল।
শুধু তাই নয়, পদোন্নতি দেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তালিকা সংস্থার এমডিকেও দেয়া হয়নি। তাকে অন্ধকারে রেখেই ‘মধ্যরাতে’ পদোন্নতির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
কেজিডিজিএল সূত্র জানায়, একসঙ্গে সংস্থার ৫৭ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তাদের পদোন্নতির ফাইলে স্বাক্ষর করা হয় গত বৃহস্পতিবার ‘মধ্যরাতে।’
পরদিন ছুটির দিন শুক্রবার সকালে আরও ৩ কর্মকর্তার পদোন্নতির ফাইলে স্বাক্ষর করা হয়। পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা এ ঘটনাকে ‘মিডনাইট প্রমোশন’ বলে অভিহিত করছেন।
মধ্যরাতে পদোন্নতি দেয়ার কথা স্বীকার করে মহাব্যবস্থাপক (অ্যাডমিন) প্রকৌশলী সারোয়ার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, মধ্যরাতে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে এটা ঠিক।
এর কারণ হচ্ছে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতে হলে অনেক দাফতরিক কাজ শেষ করতে হয়। এসব কাজ করতে রাত হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া অনেকে আছেন পদোন্নতিবঞ্চিত হয়ে আদালতে রিট করে দেন।
যার ফলে পদোন্নতি ১-২ বছর আটকে যায়। এ কারণে তাড়াহুড়ো করে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, দুদকের ছাড়পত্র রয়েছে। দুদকের ছাড়পত্র ছাড়া কাউকে পদোন্নতি দেয়া হয়নি।
পদোন্নতি পাওয়া ৬০ কর্মকর্তার মধ্যে উপ-মহাব্যবস্থাপক (সাধারণ, অর্থ ও হিসাব, কারিগরি) পদে ১৭ জন, ব্যবস্থাপক (সাধারণ, অর্থ ও হিসাব, কারিগরি) পদে ৪০ জন ও উপ-ব্যবস্থাপক (সাধারণ ও কারিগরি ক্যাডারে) ৩ জন রয়েছেন।
পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের তালিকা যুগান্তরের হাতে এসেছে। মহাব্যবস্থাপক (অ্যাডমিন) প্রকৌশলী সারোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে ব্যবস্থাপক থেকে উপ-মহাব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে ১৭ জনকে।
তারা হলেন প্রকৌশলী অনুপম দত্ত, হাবিবুল গণি, হাছান আলী সরকার, মোস্তাফিজুর রহমান, আজিজুল হক, কবির উদ্দিন আহম্মদ, আবুল কাশেম হাওলাদার, প্রকৌশলী আহসান হাবীব, প্রকৌশলী রফিক খান, প্রকৌশলী হাসান সোহরাব, নজরুল ইসলাম, একেএম সালেহ উদ্দিন, শফিউল আজম খান, শামসুল কবির, প্রকৌশলী মৌসুমী পাল, প্রকৌশলী আবু জাহের ও প্রকৌশলী নাহিদ আলম।
উপ-ব্যবস্থাপক পদে থেকে ব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে ৪০ জনকে।
তারা হলেন- প্রকৌশলী আশেক উল্লাহ চৌধুরী, কামরুল ইসলাম চৌধুরী, মোহাম্মদ আবু শাহেদ চৌধুরী, সৈয়দ মোনাব্বর হোসেন, মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, চন্দনময় নন্দী, হালিম উম্মে হিন্দিয়া, ফারুক হোসেন, মৃদুল কান্তি ঘোষ, সালাহউদ্দিন মাসুদ, বেলাল উদ্দিন, সোহেল মৃধা, আশরাফ আলী, মনজুর রহমান, সুলতান আহম্মেদ, আবদুল আজিজ, মহিউদ্দিন চৌধুরী, বাসুদেব বিশ্বাস, বসির আহাম্মদ ভূইয়া, পলাশ রায় চৌধুরী, ইয়াকুব আলী, মনোরঞ্জন দাশ, রফিকুল ইসলাম, শেখ ফরিদ, আবুল কালাম আজাদ, প্রকৌশলী মুহাম্মদ রিফাত নওশাদ ভূইয়া, প্রকৌশলী কাওছার, প্রকৌশলী বদিউল আলম, প্রকৌশলী ওয়াছিউর রহমান, প্রকৌশলী আবু হানিফ, প্রকৌশলী রেজাউল করিম, প্রকৌশলী শহিদুর রহমান, প্রকৌশলী মিনহাজ উদ্দিন, প্রকৌশলী নিজাম উদ্দীন খান, প্রকৌশলী প্রজিত বড়ুয়া, একেএম ওবায়ুদুর রহমান খান চৌধুরী, অপূর্ব কুমার বণিক, প্রকৌশলী শাপলা দেওয়ানজী ও প্রকৌশলী ফারুক আহম্মেদ।
পরের দিন শুক্রবার যে তিনজনকে উপ-ব্যবস্থাপক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে তারা হলেন- মনির হোসেন, রফিউজ্জামান ও কামরুল ইসলাম।
এ তিনজনের অফিস আদেশে স্বাক্ষর করেছেন উপমহাব্যবস্থাপক লুৎফুল করিম চৌধুরী। এ ব্যাপারে লুৎফুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমি শুধু আদেশে স্বাক্ষর করেছি। বিস্তারিত কিছু জানি না।’
কেজিডিসিএলের একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, সংস্থার সাবেক এক এমডির দুই ছেলেও রয়েছেন পদোন্নতিপ্রাপ্তদের এই তালিকায়।
তাদের নিয়োগ নিয়েই জালিয়াতির অভিযোগ আছে এবং এ ব্যাপারে দুদকে অনুসন্ধান চলছে।
যদিও সংস্থার বর্তমান এমডি খায়েজ আহম্মদ মজুমদার নিজেই পদোন্নতিসংক্রান্ত মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) বরাবরে পাঠানো নথিতে লিখেছেন, ‘পদোন্নতির জন্য প্রস্তাবিত কর্মকর্তাদের তালিকা (রেটিং শিটসহ) নির্দেশনা মোতাবেক আমাকে না দেখিয়ে কমিটির নিকট উপস্থাপন করা হয়েছে, যা মোটেও সঠিক হয়নি। যাই হোক দুদকের ছাড়পত্র, দুদকের সম্মতিসহ চাকরির প্রবিধিমালা, পদোন্নতি নীতিমালা অনুযায়ী সবকিছু যথাযথ থাকলে কমিটির সুপারিশ মতে ব্যবস্থা নেয়া যায়।’
দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর তদন্ত কর্মকর্তা ও উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন কেজিডিসিএলের নিয়োগ ও দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ তদন্ত করছেন বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সূত্র- যুগান্তর