মাথাভাঙ্গা ও চিত্রা নদীর সংযোগ খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়নে কৃষকদের বাঁধার মুখে খাল খনন বন্ধ হয়ে গেছে। গত শুক্রবার বিকাল ৫ টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলার দুধপাতিলা ও দোস্ত গ্রামের কৃষকরা খনন কাজ বন্ধ করে দেন।
গত শনিবার দুপুর ১২ টার দিকে এলাকার কৃষকদের আয়োজনে দুধপাতিলা ও দোস্তের মাঠে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে খাল খনন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষনা দিয়েছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষকদের পক্ষে ৪টি দাবী তুলে ধরে চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ আদালতের সাবেক পিপি ও লোকমোর্চার সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেন বলেন, কৃষকদের ক্ষতি পূরণ দিতে হবে, বিনা নোটিশে খাল খনন করা জমির ফসলের ক্ষতি পূরণ দিতে হবে, সিএস, এস এ ও আর এস রের্কডে কৃষকরা জমির মালিক তাদের ন্যায্যতা দিতে হবে এবং যদি খাল খনন করতেই হয় তাহলে খননকৃত খালের পূর্বপাশে মাঠের ফসল বহনের জন্য রাস্ত করে দিতে হবে।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে কৃষক আফসার আলী মাস্টর, যুবলীগ নেতা বিপ্লব, আসিক করিম (অকুল) ও মেম্বর মহিউদ্দিন আরো দাবী করেন খাল খননের পক্ষে পানি উন্ন্য়ন বোর্ড ও ভুমি কমিশনাসহ কেউ তাদের খাল খননের নকশা দেখাতে পারেনী। আদৌও মাথাভাঙ্গা ও চিত্রা নদীর সংযোগ খাল ছিলো কি না তার কোন নকশা খননকারীরা কৃষকদের দেখাতে পারেনি। ফলে শত শত মানুষ খাল খনন বন্ধ করে দেয় দুই গ্রামেবাসীর কৃষকরা।
কৃষকরা খাল খননের এক্সাভেটর (ভেকু মেশিন) বন্ধ করে দিয়ে কর্তপক্ষের সাথে গ্রামবাসীর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে ঘোষনা দেয় জমির মালিকেরাসহ গ্রামবাসী।
খাল খননের আওতাধীন জমির মালিকেরা অভিযোগ করে বলেন, দির্ঘদিন ধরে পৈত্যিকসূত্রে ও ক্রয়সূত্রে এ সকল জমির মালিক তারা। সংশ্লিষ্ট ভুমি অফিসে এসকল জমির নিয়মিত খাজনাও প্রদান করা হয়। এছাড়া এসকল জমির ক্রয় ও বিক্রয়ের সময় সরকার রেজিষ্ট্রিশন বাবদ টাকাও কেটে নিচ্ছে। যেহেতু সংশ্লিষ্ট ভুমি সংক্রান্ত সকল বিষয়ে যেমন নিয়মিত খাজনা ও রেজিষ্ট্রিশন ফি দিয়ে আইন অনুযায়ী তারা মালিক। সেহেতু জমির মালিকদের অনুমতি ছাড়া আইন বহির্ভূত কর্তৃপক্ষের খাল খনন করা সম্পূর্ন আইন বিরোধী বলে জানান এসকল জমির মালিকেরা।
এসময় চুয়াডাঙ্গা জেলা লোকমার্চার সভাপতি ও উকিল বারের সাবেক সভাপতি অ্যাড. আলমগীর হোসেন বলেন, চিত্রা নদী খননে সরকার যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে আমরা কেউ সরকারী প্রকল্প বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু নদী খননের আওতাধীন যে ব্যাক্তি মালিকানা জমিগুলি রয়েছে সেগুলো সরকার নিতে পারে। তার জন্য ঐসকল জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আইন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমাধান ছাড়া আমরা (গ্রামবাসী) আর একফুট জমি কাটতে দেবনা। প্রয়োজনে আমরা মানববন্ধন করব। আমরা সকলে আইনকে শ্রদ্ধা দেখিয়ে শান্তিপূর্ন পরিবেশে আইনের মাধ্যমে এ সমস্যার মোকাবেলা করবো। আইনকে কেউ হাতে তুলে নেবেন না।
এর আগে ১৮ ডিসম্বর ২০১৯ তারিখ দামুড়হুদা উপজেলার হাউলি ইউনিয়নের বড়দুধ পাতিলা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে গোলজার আলী এ খাল খননের আওতাধীন একটি জমির মালিক হওয়ায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৫(১) ধারায় মামলা দায়ের করে।
এ মামলায় আদালত পরবর্তি ধার্যকৃত দিন ২৬/২/২০২০ তারিখের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসকে সরোজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেন দাখিল করার আদেশ দিয়েছেন। আদালত কোন দাঙ্গা হাঙ্গামা না করে উভয় পক্ষকে শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় অনুলিপি প্রদান করেছে। আদালতের আদেশ অমান্য করে আইন বিরোধী কোন কর্মকান্ড করলে অমান্য কারির বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নোটিশ প্রদান করেন।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম বলেন, আমরা আদালত সকলের উর্ধে নয়। খাল খননের আওতাধীন অনেক জমির মালিক আদালতে মামলা করে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আসছে। আমাদের পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রত্যেক ঠিকাদারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে খাল খননের আওতাধীন কোন জমি নিয়ে যদি আদালতে মামলা থাকে তাহলে ঐ সকল জমি আদালতের স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত খনন করা যাবে না।
এ বিষয়ে খননকৃত কাজের ঠিকাদার সেলিমের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।