চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার এলাকার বিভিন্ন স্থানে মাদকের ছড়াছড়ি। হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। শহর কিংবা গ্রাম সবখানেই রয়েছে মাদক। দর্শনা থানায় ২৯৫ টি বিভিন্ন মামলার মধ্যে ১৫৬ টি মাদকের মামলা। সেখানে মাদকসহ অন্যান্য মামলায় গ্রেফতার হয়েছে ৭৫৭ জন।
গত ১ বছর ৩ মাসে দর্শনা সহ-থানা এলাকায় ব্যাপক হারে মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসা চলছে দেদারছে বেড়ে গেছে। এ মামলায় গ্রেফতারের সংখ্যা এ পর্যন্ত ৭৫৭ জন। এ সংক্রান্ত অভিযানে ব্যাবসায়ী গ্রেফতারের পাশিপাশি উদ্ধার করা হয়েছে ভারতীয় ফেনসিডিল ২ হাজার ৪ শত ৫৫ বোতল, ইয়াবা ১হাজার ৩ শত ৭৫ পিচ, বিদেশী মদ ৩৯ বোতল, চুলাই মদ ৬৭টি লিটার, টেপেন্ডাল ট্যাবলেট ৫ হাজার ৭ শত ৯৬ পিচ, গাঁজা ৫৯ কেজি গাঁজা, ৪টি গাজার গাছ, বিদেশী সিগারেট ১ হাজার ৮শত ৭০ প্যাকেট। এ সকল মাদকদৃশ্য বলে দেয় দর্শনা থানা এলাকা মাদকে সয়লাভ।
এছাড়া বিভিন্ন স্থানে বসছে মাদকের আড্ডা। দর্শনা মদনা গ্রামের টাওয়ারের পাশে দোকানের পিছনে প্রতিনিয়ত চলছে মাদকের আড্ডা, পরাণপুর স্কুল মাঠে সন্ধায় চলছে গাঁজা সেবন, দর্শনা রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় প্রতিদিন বিকালে ইয়বা ও ফেন্সিডিল বিক্রী, দর্শনা হল্ট ষ্টেশনের উভয় পাশে মাদক ব্যবসা চলছে দেদারছে। এছাড়া দর্শনার আকন্দবাড়িয়া রামনগর, জয়নগর, ঈশ্বরচন্দ্রপুর, আজমপুর ও শ্যামপুর গ্রামসহ থানাধীন বিভিন্ন স্থানে মাদক সেবন যেন ওপেন সিকরেট। দর্শনায় রয়েছে বৃহত্তম চিনিশিল্প, রয়েছে রেলওয়ে শুল্ক ষ্টেশন ও আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট। এ উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত কোলঘেঁষা এলাকা দর্শনা।
এই দর্শনায় হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে মরন নেশা ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের নেশাজাত দ্রব্য। এসব সেবন করছে উঠতি বয়েসের যুবকরা ও স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলারাসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাইভেটকার ও মটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন যোগে দর্শনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আগমন করতে। ফলে দর্শনা পৌরসভাসহ সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায় মরন নেশা মাদক সেবন করা। পুলিশ প্রশাসন দুই একটা ছোট মাদক ব্যাবসায়ীকে আটক করলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে মাদকের শীর্ষ গডফাদারা।
প্রশাসন এখনই লাগাম টেনে না ধরলে ভয়াল মাদকের ছোবলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিঃশেষ হয়ে যাবে। উলেখ্য, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার বিরাট অংশ ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ায় এখানে মাদকদ্রব্য শুধু সহজলভ্যই নয় বরং এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার হয়ে থাকে মরন নেশা মাদক। বর্তমানে দর্শনায় প্রতিটি গ্রামে ছেঁয়ে গেছে মরণ নেশা মাদক। যেটা নীরবে ধ্বংস করে দেয় একটি মানুষ, একটি পরিবার আর একটি জাতিকে। ফলে খুব সহজেই মাদক পাওয়ার কারণে আমাদের তরুণ প্রজন্ম মাদকের ওপর ঝুঁকে পড়ছে। মাদকের ভয়াল থাবায় ধ্বংসের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের যুবসমাজ। দেশের জনসংখ্যার সবচেয়ে বড় একটি অংশ রয়েছে তরুণ প্রজন্ম। তরুণরা একটি দেশের ভবিষ্যৎ স্বপ্নদ্রষ্ট।
তাদের মধ্যে যে শক্তি, সাহস আর উদ্দীপনা রয়েছে, সেটা যদি দেশের কল্যাণে কাজে না লেগে ব্যাহৃত হচ্ছে দেশের তরুণ্য শক্তি। যে তরুণরাই আগামীর বাংলাদেশের কান্ডারি হবে। তরা বেকারত্বের জ্বালাযন্ত্রনা আর কষ্টে ঝুঁকে মাদক সেবণের প্রতি।
আমাদের কবি-সাহিত্যিকেরা বলেছেন বিগত দিনে তরুণ্যরই সর্বক্ষেত্রে জয়গান গেয়েছেন। আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার জন্য শপথ নিতে দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নেবে এবং পাশাপাশি দেশটাকে সুন্দর করতে স্বার্থকভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মানসিকতা অন্তরে ধারণ করতে হবে। সেখানে মাদকের ছোবলে নিজেরাই ধংস হচ্ছে। মাদক সেবনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় কিশোর থেকে ৪৫ বছরের বয়সীদের মধ্যে। মাদকসেবীর মধ্যে ৮০ শতাংশই তরুণ আবার ৪০ শতাংশ হলো বেকার। ফলে এ সব মাদকসেবীদের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ছে। মাদকের ছোবলে এদের কোমল হাত রূপান্তরিত হচ্ছে খুনির হাতে।
আপনারা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়া শিক্ষার্থী ঐশীর কথা! যার হাতে খুন হতে হয়েছিল তার পিতা পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার মা স্বপ্না রহমান। তাদের দোষ ছিলো তারা তাদের মেয়েকে মাদকাশক্তি থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল। সারাদেশে খোঁজ করলে আপনি দেখতে পাবেন এমন শতশত ঐশীকে। যারা নিত্যদিন মাদকাসক্ত হয়ে খুন করছে মাতাপিতা কিংবা পরিবারের অন্য কোন সদস্য এবং ভেঙ্গে ফেলছে পরিবারের সুন্দর স্বপ্নকে। বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে আমাদের তরুণদের সকল শক্তি, সাহস আর উদ্দীপনা হারিয়ে যাচ্ছে মাদকের ভয়াল গ্রাসে। দিনদিন এই মাদকের সম্প্রসারণ বেড়েই চলছে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, মাদক কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাদের যুবসমাজকে? আর এর পরিণতিই বা কী হবে? কিংবা এর থেকে উত্তরণের উপায় কী? এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আমাদের মনে। এই মাদকের রাজ্যে প্রবেশ করার প্রথম সদর দরজা হলো ধূমপান বা তামাক গ্রহণ। যেটা আজ শহরাঞ্চল কিংবা গ্রামাঞ্চলে সবজায়গায় বিদ্যমান। এমনকি আমাদের আগামীর স্বপ্ন যারা, সেই শিক্ষার্থীদের অনেকেই এটাকে মনে করে স্মার্ট হওয়ার মানদন্ড।
সুতরাং আর বুঝতে বাকি নেই, মাদক এই জাতিকে কোন পর্যায়ে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে। মাদকাসক্তির পিছনে কাজ করে তিনটি কারণ। জৈবিক, ব্যক্তিভিত্তিক এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা। আর এই পারিপার্শ্বিক অবস্থাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। বন্ধু-বান্ধবের খারাপ প্রভাব, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অভাব, নতুন অভিজ্ঞতা গ্রহণের ইচ্ছা, অবসর সময় কাটানোর কোনো ভালো মাধ্যম না থাকা, বেকারত্বের হতাশা ও ক্ষোভ, মূল্যবোধের অভাব, মাদকের ভয়াবহতা না জানা, মাদকের সহজল্যভতা, খারাপ দৃষ্টিভঙ্গি এবং সহজেই আনন্দ পাওয়ার ও যৌনশক্তি বৃদ্ধির ইচ্ছা। পারিবারিক কলহও মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ।
মাদকাসক্তির ফলে আমাদের শারীরিক, সামাজিক, মানসিক, আর্থিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষতিসাধন হয়। আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গ অকেজো ও দূর্বল হয়ে পড়ে। মাদক এমন একটি জিনিস যেটা একজন মানুষকে জীবনকে তার স্বাভাবিক জীবন থেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে সরিয়ে নেয়। তার পরেও থেমে নেই মাদকের কারবার।
চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলা সীমান্তবর্তী হওয়ায় বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে দেশে ধেয়ে আসছে মাদক। যার ফলে মাদকে ভাসছে উপজেলার সীমান্তবর্তী দর্শনা। দর্শনা থানায় গত ১ বছর ৩ মাসে মোট ২৯৫টি মামলার মধ্যে ১৫৬ টি মামলায় মাদকের।
এ মামলায় গ্রেফতারের সংখ্যা এ পর্যন্ত ৭৫৭ জন। এ সংক্রান্ত অভিযানে ব্যাবসায়ী গ্রেফতারের পাশিপাশি উদ্ধার করা হয়েছে ভারতীয় ফেনসিডিল ২হাজার ৪ শত ৫৫ বোতল, ইয়াবা ১হাজার ৩শত ৭৫ পিচ, মদ ৬৭টি লিটার, টেপেন্ডাল ট্যাবলেট ৫ হাজার ৭শত ৯৬ পিচ, গাঁজা ৫৯ কেজি গাঁজা, ৪টি গাজার গাছ, বিদেশী সিগারেট ১ হাজার ৮শত ৭০ প্যাকেট। এ সকল মাদকদ্রব্য আটকের দৃশ্য দেখে বুঝতে বাকি থাকে না যে,দর্শনা মাদক কতটা ভয়ংকর রুপ নিয়ে বিস্তর লাভ করেছে। তাই মাদকের সয়লাবের লাগাম টেনে ধরা না হলে মাদক সেবনের ফলে ধব্বংশ হয়ে যাবে যুবসমাজ। মাদকের এ ভয়াল আগ্রাসনের সয়লাব ঠেকাতে প্রশাসনের জোরালো ভুমিকা রাখার জোর দাবী জানিয়েছে এলাকার সচেতন মহল।