মেহেরপুরে মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের সফলতার পাশাপাশি রয়েছে ব্যার্থতাও। মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যে তিন থানায় পুলিশের বিশেষ তিনটি টিম গঠন করা হয়েছে।
মাদক বিরোধী অভিযানে ধরা খেয়ে জেলের ঘানি টানছে বেশ কিছু মাদকের হোতা। কেউ জেল খেটে বাড়ি ফিরে বেছে নিয়েছে স্বাভাবিক জীবন। আবার কেউ পর্দার আড়ালে থেকেই চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের ব্যবসা। মাদক ছেড়ে অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে িেফরে আসতে চাইলেও অনেক সময় তারাও পুলিশের স্বীকার হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০১৯ সালের শুরু থেকে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে ৫০৬টি। এই মামলায় গত এক বছরে আটক হয়েছে ৭২০ জন আসামী। এর ভিতর কেউ কেউ জেলে থাকলেও বেশির ভাগই মুক্ত।
মেহেরপুর জেলা পুলিশ সুত্রে জানা যায়, জেলাতে ২০১৯ সালে মাদক বিরোধী অভিযানে ৪ হাজার ৮’শ ৬১ বোতল ফেন্সিডিল, ১২৭.৫ কেজি গাঁজা, ২ হাজার ১’শ ৭৭ পিচ ইয়াবা, ১.১২ কেজি হেরোইন, ২০ বোতল বিয়ার, ২ লিটার চোলাই মদ ও ৪ টি গাঁজার গাছ উদ্ধার হয়েছে।
প্রশাসনের এতো সাফল্যের পর কিন্তু থেমে নেই মাদক ব্যবসা। বিভিন্ন কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের রমরমা ব্যবসা।
গত ৬ ও ১৩ জানুয়ারী দৈনিক ‘মেহেরপুর প্রতিদিন’এ মাদক নিয়ে সংবাদ প্রকাশীত হয়। সেখানে বেশ কিছু মাদক ব্যবসায়ীর নাম উঠে এসেছে যারা বিভিন্ন কৌশলে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও ‘মেহেরপুর প্রতিদিন’র অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এক সময় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল কিন্তু এখন আর করে না। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইলেও পুলিশি বিভিন্ন হয়রানীর কারনে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আবার কেউ কেউ সম্পূর্ন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছে।
এদের মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের বিজন। এক সময় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত খাকলেও তৎকালীন পুলিশ সুপার হামিদুল আলম এর সহযোগীতায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। এখন বিজন চট্টগ্রামের এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।
এছাড়াও আরও বেশ কিছু মানুষ আছে যারা মাদক ব্যবসা থেকে সরে এসে জীবিকার তাগিদে প্রবাশে পাড়ি জমিয়েছে।
মুজিবনগর থানার ওসি আব্দুল হাসেম জানান, আমরা গত ২০১৯ সালে ৫৬ টি মাদক মামলায় ১০৯ জন আসামী আটক করেছি। সেই সাথে ৩ কেজি গাঁজা, ৫৯০ বোতল ফেন্সিডিল, ৩৭ পিচ ইয়াবা ও ৬৮ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করেছি। আমাদের মাদক বিরোধি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মুজিবনগর পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে সব সময় কঠোর।
গাংনী থানার ওসি ওবাইদুর রহমান জানান, গত ২০১৯ সালে গাংনী থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে ৯০ টি মামলা হয়। এই মামলায় ১১৭ জন আসামীকে আটক করা হয়। সেই সাথে ২ হাজার ৫’শ ৯৫ বোতল ফেন্সিডিল, ৫৩ কেজি ৭৫৫ গ্রাম গাঁজা, ১ হাজার ১’শ ৬৫ পিচ ইয়াবা, ১’শ ৫ গ্রাম হেরোইন ও ২ লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়েছে। গাংনীর মাদক নিয়ন্ত্রণে আমাদের পুলিশ সদস্যরা সব সময় তৎপর রয়েছে।
মেহেরপুর সদর থানার ওসি শাহ দ্বারা খান জানান, আমাদের চলামান অভিযানে ২০১৯ সালের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ২’শ টি মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। এই মামলায় ২৪৫ জন আসামী আমরা আটক করতে সক্ষম হয়েছিলাম। সেই সাথে ৫১৮ বোতল ফেন্সিডিল, ৪’শ ৩৭ গ্রাম হেরোইন, ৩’ ৩৬ পিচ ইয়াবা ও ৯৮ লিটার ভারতীয় মদ উদ্ধার করেছি। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩৭ লক্ষ্য ৮২ হাজার ৪’শ টাকা। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। মাদক নিয়ন্ত্রনে আমরা সব সময় সোচ্চার।
জেলা গোয়েন্দা বিভাগের ওসি রবিউল ইসলাম জানান, গত বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাদক নিয়ন্ত্র আইনে ১৬০ টি মামলা হয়। যেখানে ২৪৯ জন আসামীর নাম আছে। সেই সাথে চলমান অভিযানে ১১’শ ৫৮ বোতল ফেন্সিডিল, ৪৯ কেজি গাঁজা, ৬’শ ৩৯ পিচ ইয়াবা, ৩’শ ৫৭ গ্রাম হেরোইন, ২০ ক্যান বিয়ার ও চারটি গাঁজা গাছ উদ্ধার করা হয়। মাদক বিরোধী অভিযান আমাদের চলমান আছে। মাদকের সাথে কোন আপস নয়।
এ ব্যাপারে মেহেরপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল- আমিন ধুমকেতু বলেন, কেউ যদি খারাপ কাজ থেকে সরে আসতে চাই তাকে সুযোগ দেওয়া উচিত। কোন মানুষই ইচ্ছে করে খারাপ পথে যায় না। প্রয়োজনের তাগিদে অথবা অসৎ সঙ্গে মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ে। যদি প্রশাসন উদ্যোগ নেই এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহযোগীতান করেন তাহলে অনেকটাই মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
জেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব চান্দু বলেন, মাদকের সাথে যারা জড়িত এদের মধ্যে রাঘব বোয়ালরা ধরা ছোয়ার বাইরে থাকে। এদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়না। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যে সব জায়গায় মাদকের রুট হিসেবে পরিচিত সেখানে প্রশাসনের উদ্যোগে পথ করা যেতে পারে। মাদকের সাথে যারা জড়িত আছে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে অনুরোধ করা হবে। সেই সাথে যারা সৎ পথে ফিরে আসবে তাদের পুলিশি কোন হয়রানি বা আটক করা হবে বরং তাদের বিভিন্ন সৎ উপার্জনে সহযোগীতা করা হবে এই আশ্বাস দিলে হয়তো অনেকটা মাদক নিয়ন্ত্রণ হতে পারে।
মেহেরপুর পুলিশ সুপার এস এস মুরাদ আলী বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা সব সময় কঠর অবস্থানে থাকি। আমরা ইতিমধ্যে শুধু মাদক নিয়ন্ত্রনের জন্য তিন থানায় তিনটি চৌকস টিম তৈরি করেছি। তারা খুব ভালো কাজ করছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযানে ব্যাপক মাদক দ্রব্য উদ্ধার সহ মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করা করেছে। আমাদের মাদক বিরোধি অভিযান অব্যাহত থাকবে। (চলবে)
মেপ্র/ইএম