মেহেরপুরে মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়েছে নারীসহ যুবকরা। মাদক সেবনসহ ব্যবসায়ী হিসেবেও শোনা যাচ্ছে এদের নাম। অব্যাহত অভিযান, আটক, জেল, জরিমানা কোন কিছুতেই যেন কমছেনা মাদকের বেপরোয়তা।
গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেছেন, ভারত, মিয়ানমার থেকে মাদকের চালান বন্ধে সরকারকে বেগ পেতে হচ্ছে। কেন বেগ পেতে হচ্ছে, তাহলে কি মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন ব্যর্থ হচ্ছে। এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সুধিজনের মধ্যে।
পুলিশের দাবি মেহেরপুরে মাদক এখন নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে অন্য কিছু। গতকাল রবিবার সকালেও মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা বালিয়াঘাট থেকে হাড়াভাঙ্গা গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে ও সেন্টার পাড়ার রুহুল আমিনের ছেলে মিন্টু মিয়া নামের দুইজনকে ৪২৬ বোতল ফেন্সিডিলসহ আটক করেছে গাংনী পুলিশ এবং বিকালে সদর উপজেলার বুড়িপোতা থেকে বাজিতপুর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা ২০ বোতল ফেন্সিডিলসহ কুশলি বেগম নামের এক মাদক ব্যবসায়ী আটক করেছে।
মাদকের সাথে জড়িতরা প্রায় আটক হচ্ছে, জেল খাটছেন আবার জামিনে মুক্তু হয়ে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন।
গত ৬ জানুয়ারী মেহেরপুর প্রতিদিন প্রত্রিকায় “মাদকের অভয়ারণ্য তেঁতুলবাড়িয়ার বিভিন্ন সীমান্ত” শিরোনামে ১ম পর্ব প্রকাশিত হয়। যেখানে ১৯ জন মাদক ব্যবসায়ীর নাম প্রকাশ হয়।
২য় পর্বের অনুসন্ধানিতেও উঠে এসেছে আরও ১০ জনের নাম। এর মধ্যে আছে বেশির ভাগ নারী ও যুবকের নাম। এদের বয়স ২৫ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। ফলে সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ এই যুবকদের কারণে। জীবনের মূল্যবান সময়টা কারো না কারো প্ররোচনায় অথবা অধিক ইনকামের আশায় তারা মাদকে জড়িয়ে পড়ছেন।
গাংনী উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের ইউনুস মোল্লার ছেলে সুজন। এর বিরুদ্ধে মাদকসহ ৪টি মামলা রয়েছে। ধরণ পাল্টিয়ে মাদকের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। করমদী গ্রামের আমির কসাই এর ছেলে সাহারুল। এর বিরুদ্ধে ২টি মাদক মামলা আছে। ২০১৮ ও ১৯ সালে সে মাদক চোরা চালানের সময় ধরা খায়। এ নিয়ে সে জেলও খাটে। তারপরও সে মাদক ব্যবসা ছাড়তে পারিনি।
করমদী গ্রামের মৃত আব্দুল কুদ্দস এর ছেলে মাগরিব। এর নামে মাদক সহ ৮টি মামলা আছে। বর্তমানে তিনি মাদক মামলায় ২ বছরের সাজা পেয়ে জেল খাটছেন। করমদি গ্রামের শরিফুল ও সপ্না। এরা দুইজন স্বামী-স্ত্রী। শরিফুল পুলিশের ভয়ে সৌদি প্রবাসী হলেও। সপ্না এলাকায় থেকে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। করমদি গ্রামের শওকত আলীর ছেলে আরিফুল হক। ২০০৮ সালে আরিফুলের নামে একটি মাদক মামলা হয়।
মোহাম্মদপুর গ্রামের শহিদুল এর ছেলে মুক্তাদির আহমেদ কাজল। ২০১৫ সালে তার নামে একটি মাদক মামলা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন কায়দায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সহড়াতলা গ্রামের মজিদ এর ছেলে ফিরোজ। বিশেষ ক্ষমতা আইন মামলার আসামী। ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত।
তেঁতুলবাড়িয়ার কামদেবপুর গ্রামের সুলতান মাহমুদ এর ছেলে গোলাম রব্বানী। ২০০৫ সালে একটি এবং ২০১৯ সালে তার বিরুদ্ধে আরো একটি মাদকের মামলা হয়।
এছাড়াও ১ম পর্বে প্রকাশিত মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় সহড়াতলার মনিরুল ফকির এর স্ত্রী রাহিমা। এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত। তার নিয়ন্ত্রনে আছে বেশ কয়েকজন ছোটখাট ব্যবসায়ী।
মাদকের বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুর রহমান মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, গাংনীর মাদক ব্যবসা এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। চলমান অভিযানে মাদক এখন দুষ্প্রাপ্য। আপনারা জানেন ইতিমধ্যে আমরা বেশ কয়েকটা সফল অভিডান পরিচালনা করেছি। একটা সময় ছিল যখন গাংনী থেকে নামি দামি বাইকে চড়ে সীমান্তু এলাকায় গিয়ে মাদক সেবন করতো এলাকার তরুণ জেনারেশন। কিন্তু এ দৃশ্য আর চোখে দেখা যায় না। আমরা আশা করছি অল্প দিনেই গাংনী কে মাদক মুক্ত উপজেলা ঘোষনা করা হবে।
মেহেরপুর জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহজালাল খান বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বছরের শুরুতেই আমরা দুইজন মাদক ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল দিতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। (চলবে)
মেপ্র/ইএম