মেহেরপুরে সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে গাংনী উপজেলা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে দীর্ঘ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য চলাকালীন সময়ে পুলিশ পাঠিয়ে মাইক বন্ধের নির্দেশ দিয়ে পরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা।
আজ মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাংনী উপজেলা প্রেসক্লাবের সামনে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের পাশে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
গাংনী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এমএ লিংকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এম এ খালেক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এ খালেক বলেন, সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনার সাথে জড়িত দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার গাংনী সংবাদদাতা আমিরুল ইসলাম অল্ডামের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসুচিতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, গাংনী উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য একরামুল হক, তেরাইল জোড়পুকুরিয়া বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মাসুমুল হক মিন্টু, বাঁশবাড়িয়া টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজম্যান্ট কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ স্বপন, গাংনী উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান পাভেল, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের গাংনী এরিয়া সমন্বয়কারি হেলাল উদ্দিন, এনজিও কর্মী নুরুল ইসলাম রিন্টু, সমাজ কর্মী, আব্দুর রব প্রমুখ।
এদিকে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনকালিন সময় গাংনী থানার এস আই তৌহিদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহার উদ্ধৃতি দিয়ে মাইক বন্ধ করার জন্য বলেন। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচি পালন শেষ সাংবাদিকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহার অফিসকক্ষে দেখা করেন। এবং মাইক বন্ধ করতে পুলিশ পাঠানোর বিষয়টি জানতে চান। পরে ইউএনও প্রীতম সাহা বলেন, এসএসসি পরীক্ষা চলার কারনে মাইক বন্ধ করার জন্য ওসি সাহেবকে ফোন দিয়ে মাইক বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে গাংনী উপজেলা অডিটরিয়ামে উপজেলা পর্যায়ের জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রতিযোগিতায় মাইক ব্যবহার করে উচ্চ শব্দে নাচ গান চলছে এটা কতটা যুক্তিযুক্ত?
মানববন্ধন চলাকালে বিভিন্ন ক্লিনিক ও মাংস বিক্রেতার একাধিক মাইকিংয়ের গাড়ি পাকা সড়কে যেতে দেখা গেছে তাদের জন্য কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? গত বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারী) এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর একদিন আগে সন্ধ্যায় প্রশাসনের নাকের ডগায় ও হাসপাতালের একশ গজ দূরে বিশাল কনসার্ট ও সেখানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, এসব ঘটনায় প্রশাসনের কোন নজরদারি দেখা যায়নি। এলাকায় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অনিয়ম ও অসংগতির সংবাদ প্রকাশ হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়না। প্রশাসনের নাকের ডগায় গাংনী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ইটভাটা গড়ে তুলে বনাঞ্চল উজাড়সহ পরিবেশ দুষন ঘটানো, সরকারি যায়গা দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ, ড্রেজার মেসিন দিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন, দাপ্তরিক কাজ ফেলে রেখে সরকারি সকল দফতরের কর্মকর্তাদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগদানের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানকে চাইলে এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর মেলেনি ইউএনও প্রীতম সাহার কাছ থেকে।
তবে এসব প্রসঙ্গ উঠলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা মানববন্ধনের ঘটনায় মাইক বন্ধের নির্দেশনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে তিনি বলেন, আপনারা নিউজ করতেই পারেন। আজ এখানে আছি কর্তৃপক্ষ মনে করলে বান্দরবন চলে যেতে হবে।
এদিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মাসে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে উপজেলার করমদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভির আহমেদ মাইকের উচ্চ শব্দে হিন্দি গানের সাথে নেচে সমালোচনায় পড়েছেন আয়োজকরা।
এ বিষয়েও প্রশাসনের নজরদারির গাফেলতিকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
পাশে সন্ধানী স্কুল এন্ড কলেজে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাহলে উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে এমন অনুষ্ঠানের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন জানান এটা ইউএনও স্যারের প্রোগ্রাম। মাইক চললে কোন অসুবিধা নাই। তবে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানালে ইউএনও প্রীতম সাহা অফিসের সহায়ক মনিরুল ইসলামকে পাঠিয়ে মাইক বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, গেল ১২ ফেব্রুয়ারী আমঝুপি মানব উন্নয়ন কেন্দ্র (মউক) সংস্থা অফিসের সামনে সড়ক দূর্ঘটনার সংবাদ সংগ্রহকালে নিউজ ২৪ এর স্টাফ রিপোর্টার রাশেদুজ্জামান ও দৈনিক জবাবাদিহি পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সিরাজুদ্দোজা পাভেল দূর্বৃত্তদের হাতে হামলার শিকার হন। এই নিয়ে সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসুচি পালন করে আসছে।