গোটা দক্ষিণাঞ্চলে চলমান বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম কলাপাড়া উপজেলার রাবনাবাদ নদের তীরে ‘১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি মার্চ মাসে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। নানা মহলের সমালোচনার মুখে টানা চার বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে হাজার একর জমিতে গড়ে ওঠে দৃষ্টিনন্দন এই মেগা প্রকল্পটি। এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২.৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা।
২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পদ্মা নদীর উত্তর পারের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ না হওয়ায় মাত্র ৬২২ মেগাওয়াট উৎপাদিত বিদ্যুৎ শুধু দক্ষিণবঙ্গের জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হচ্ছে। গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকার আমিনবাজার পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ হলে উৎপাদিত শতভাগ বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহের সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এই সঞ্চালন লাইন চালু না হলে কঠিন লোকসানের মুখে পড়বে প্রকল্পটি। চলমান এই পরিস্থিতিতে এ মাসেই এটি উদ্বোধনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
পায়রা তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্ত) মো. রেজওয়ান ইকবাল খান যুগান্তরকে জানান, ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে উৎপাদিত ৬২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে দক্ষিণবঙ্গের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। এর আগে গোপালগঞ্জ থেকে পায়রাবন্দর পর্যন্ত ১৬০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করে চালু করা হয়। গোপালগঞ্জের গ্রিড থেকে ঢাকার আমিনবাজার পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। পদ্মায় রিভার ক্লোসিং লাইন নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। সেটি হলেই এর নির্মাণ শেষ হবে।
অতি সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রকল্পে এক হাজার চীনা শ্রমিক-কর্মকর্তা ও আড়াই হাজার দেশি শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। যদিও এর আগে জনবলের সংখ্যা বেশি ছিল। ফলে নির্দিষ্ট সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষম হয়েছে। তাদের মতে, এখানে প্রতিদিন প্রায় ২৯ কোটি ৬ লাখ লিটার পানি প্রয়োজন হয়। যার ৯৫ ভাগ দ্বিতীয়বার শোধন করে প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়। এ প্রসঙ্গে পায়রা তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী সাইম রহমান জানান, বিদেশি শ্রমিকসহ কর্মকর্তারা বাংলাদেশিদের সঙ্গে একযোগে কাজ করছেন। ফলে সময়মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।
পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার খোরসেদুল আলম যুগান্তরকে জানায়, কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রতিদিন দরকার হচ্ছে ১৩ হাজার টন কয়লা। যা ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে সরাসরি বন্দরের নিজস্ব টার্মিনালে ভিড়ছে। কয়লা ব্যবহারে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য এখানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। আছে শ্রমিকদের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থাও।
ধানখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ তালুকদার বলেন, নানা মহল থেকে যে রকম আশঙ্কার কথা শোনা গেছে তার সিকিভাগও নেই। স্থানীয়দের ধারণা ছিল বিদ্যুতের ধোঁয়ায় গোটা এলাকা আচ্ছন্ন হবে কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। তাছাড়া গত এক বছরে এখানকার কোনো গাছপালার পাতার বন এ পর্যন্ত রদবদল হয়নি। এলাকার একাধিক ব্যক্তিরা যুগান্তরকে জানায়, প্রকল্প নিয়ে সরকারবিরোধী মহল যে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছিল, তা আদৌ সত্য নয়। আশা করি, এ অঞ্চলের পরিবেশ স্বাভাবিক থাকবে।
পায়রা তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (প্রধান প্রকৌশলী) শাহ্ আব্দুল মওলা (হেলাল) যুগান্তরকে জানায়, ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন সাড়ে ৬ হাজার টন কয়লা দরকার। রাবনাবাদ চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করায় পুনরায় আশার আলো দেখছেন তাপবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।