মাড়ির সমস্যা হলে আমরা খুব একটা গুরুত্ব দিতে চাই না। এটি বড় রকমের বিপদ ডেকে আনতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে মাড়ির সমস্যা থেকে হতে পারে অ্যালজাইমাসের মতো জটিল রোগ।
এ বিষয়ে যুগান্তরকে পরামর্শ দিয়েছেন মুখ ও দণ্ডরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. ফারুক হোসেন।
গবেষকরা বলেছেন, মাড়ি রোগের সঙ্গে যোগসূত্র আছে এমন ব্যাকটেরিয়া অ্যালজাইমারস রোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে। গবেষকরা জীবিত ও মৃত অ্যালজাইমার রোগী এবং সম্ভাব্য অ্যালজাইমার রোগীদের নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং ক্রমিক মাড়ি রোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যাকটেরিয়াকে অ্যালজাইমার রোগীর ব্রেনে দেখতে পেয়েছেন।
ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা নিশ্চিত করেছে, পরফাইরোমোনাস জিনজাইভালিস নামক ব্যাকটেরিয়া মুখ থেকে ব্রেনে মাইগ্রেট বা চলে যেতে পারে। এ ব্যাকটেরিয়া জিনজাইপেইন নামে একটি বিষাক্ত প্রোটিন নিঃসরণ করে থাকে, যা ব্র্রেনের নিউরনকে ধ্বংস করে থাকে। এ ব্যাকটেরিয়া অ্যালজাইমার রোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্রেন প্ল্যাকস্ একটি অংশ অ্যামাইলয়েড বেটার উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে।
ইঁদুরের ওপর আরও পরীক্ষা দেখায় যে, যখন ওষুধ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা উৎপন্ন টক্সিক প্রোটিনকে ব্লক বা বাধা দেয়, তখন ব্রেনের ডিজেনারেশন বন্ধ হয়ে যায়। যদিও এটি এখনো শতভাগ নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে, মাড়ি রোগ অ্যালজাইমারস্ এবং ডিমেনসিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত; কিন্তু ভবিষ্যতে অ্যালজাইমার রোগের ওষুধ এবং বিভিন্ন চিকিৎসায় এসব গবেষণা যে মূল্যবান ভ‚মিকা রাখবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
মাড়ির যত্নে অবশ্যই ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে হবে।
যেহেতু মাড়ি রোগের সঙ্গে অ্যালজাইমার রোগের যোগসূত্র রয়েছে, সেহেতু মাড়ি রোগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অবহেলা করা যাবে না। মুখের মধ্যে উপকারী এবং অপকারী দুই ধরনের ব্যাকটেরিয়া বিদ্যমান থাকে। মুখে ব্যাকটেরিয়ার একটি ভারসাম্য সব সময় বজায় থাকে। যদি কোনো কারণে ব্যাকটেরিয়ার এ ভারসাম্য নষ্ট হয়, তাহলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, জনসাধারণের মাঝে যাদের স্বাস্থ্যকর এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়ার চেয়ে অধিক ক্ষতিকর বা অপকারী ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অ্যালজাইমার রোগের জন্য প্রোটিন মার্কার বা নির্দেশক পাওয়া যায়। অ্যালজাইমারস রোগে প্রোটিন মার্কার হিসাবে সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডে যে প্রোটিন পাওয়া যায়, তা অ্যামাইলয়েড বেটা নামে পরিচিত।
গবেষকরা বলেছেন, ব্রেইন অ্যামাইলয়েড অতিরিক্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া কমে যাওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত। অ্যালজাইমার রোগ নির্দেশিত হয় ব্রেনের দুটি প্রোটিনের মাধ্যমে। একটি হলো অ্যামাইলয়েড বেটা এবং অন্যটি হলো টাউ। অ্যামাইলয়েড বেটা একত্রিত হয়ে প্ল্যাক তৈরি করে এবং ধারণা করা হয়, এটি ব্রেনে জমা হয়ে অ্যালজাইমার বা ভুলে যাওয়ার রোগ সৃষ্টি করে।
অন্যদিকে টাউ নামক প্রোটিন তৈরি হয়ে স্নায়ু কোষে জট সৃষ্টি করে। অ্যামাইলয়েড পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে যুগ যুগ ধরে টাউ প্যাথলজির আগে অথবা অ্যালজাইমার রোগের লক্ষণগুলো চিহ্নিত হওয়ার আগেই। টাউ মাইক্রোটিবিউল সম্পৃক্ত প্রোটিন অদ্রবনীয় ফিলামেন্ট গঠন করে, যা জমা হয়ে নিউরোফিব্রিলিয়ারি ট্যাঙ্গেল বা জটলা সৃষ্টি করে অ্যালজাইমার বা ভুলে যাওয়া রোগের ক্ষেত্রে। এ কারণেই মাড়ির যথাযথ যত্ন নিতে হবে এবং মাড়ি রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবহেলা করা যাবে না।
মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য ফল, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার এবং দুধ, ডিম এবং দই খাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি সকালে নাস্তার পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে দাঁত ব্রাশ করতে হবে।