সম্পদের জন্য চাচারা যদি মারধর করে বের করে দেন, এ জন্য মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি সন্তানরা কাউকে জানাননি। এ জন্য মৃত মায়ের মরদেহ তিন দিন ঘরে রেখেই চলছিল তাদের জীবনযাপন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যারাতে অ্যাম্বুলেন্সচালক টাকা চাইতে বাড়িতে গেলে ঘরে মরদেহ রাখার ঘটনাটি জানাজানি হয়। পরে বাড়ির আত্মীয়স্বজনরা থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।
এমন ঘটনা ঘটেছে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদরের রাজনপুর গ্রামে। ঘটনাটি জানাজানির পর এলাকাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে। পরে নিহতের স্বজন ও স্থানীয় জনতার সহায়তায় দাফন করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলা সদরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছানা মিয়া গত ২ জানুয়ারি মারা যান। স্ত্রীর সঙ্গে তেমন বনিবনা ছিল না। যে কারণে ছানা মিয়ার স্ত্রী চল্লিশোর্ধ জেসমিন বেগম এক ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে সিলেট নগরীতে বসবাস করতেন।
অসুস্থ অবস্থায় গত শনিবার নগরীর উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।
ওই দিন গভীর রাত ৩টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান ছেলেমেয়েরা। এর পর থেকেই তারা ঘরবন্দি ছিলেন। বাড়ির আশপাশের লোকজনও জানতেন না ঘরের ভেতর মরদেহ রাখা!
স্থানীয়রা আরও বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যারাতে অ্যাম্বুলেন্সচালক টাকা চাইতে বাড়িতে গেলে ঘরে মরদেহ রাখার ঘটনাটি জানাজানি হয়। পরে বাড়ির আত্মীয়স্বজনরা থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।
বাড়ির লোকজন জানান, সাংসারিক জীবনে ছানা মিয়ার সঙ্গে তার স্ত্রীর দূরত্ব থাকলেও প্রায় অর্ধকোটি টাকার সম্পদ বিক্রি করে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ দিয়ে গেছেন। কিন্তু তারাও ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারেননি। আর মরদেহের সঙ্গে একই ঘরে বসবাসের বিষয়টি সন্তানদের মানসিক সমস্যা হিসেবে দেখছেন তারা। কেননা তারাও জানতেন ঘরে লোকজন আছে। কিন্তু ডাকাডাকি করলেও জবাব দিতেন, কিন্তু দরজা খুলতেন না। এমনকি বাবার মৃত্যুর পর মরদেহ দেখতেও আসেননি স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা।
এ ঘটনার পর মৃতের ছেলে সনি, মেয়ে সুমা, উমা ও ইমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তারা পুলিশকে জানায়, সাংসারিক জীবনে তার বাবা-মায়ের মধ্যে দূরত্ব ছিল। বাপ-চাচারা ৫ ভাই।
বাবা আগেই মারা গেছেন। মাও মারা গেছেন। সম্পদের জন্য চাচারা যদি মারধর করে বের করে দেন, এ জন্য তারা মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি কাউকে জানাননি। এমনকি দাফন করতে না পারায় মরদেহ ঘরে রেখে দেন।
ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ওসি শাফায়াত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ওই নারীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের দেওয়া মৃত্যুসনদও রয়েছে। তবে মৃতের সঙ্গে সন্তানদের ঘুমানোর বিষয়টি অস্বাভাবিক।
যদিও তারা সুস্থ আছেন। মানসিক সমস্যার কারণে তারা এমনটি করতে পেরেছে। এর পর রাতে পঞ্চায়েতের সঙ্গে আলোচনার পর মরদেহ দাফন করা হয়। আর স্বাভাবিক মৃত্যুর কারণে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।