জমির সেই হারানো শক্তিকে ফিরিয়ে আনতে হলে জৈব সার ব্যবহার করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসের অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মতিয়র রহমান।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) সকালে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কেঁচো সার উৎপাদন প্রদর্শনীর মাঠ দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ার মিরপুরে অনুষ্ঠিত মাঠ দিবসের সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, অতীতে ইচ্ছামতো রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরা শক্তি প্রায় পুরোটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। জমির অম্লতা এমনভাবে বেড়েছে যে জমিতে ফসলই উৎপাদন এক রকম কঠিন হয়ে পড়েছে। আবাদি জমির প্রাণ ফিরিয়ে আনতে জৈব সার উৎপাদন এবং প্রয়োগে সচেষ্ট হতে হবে কৃষকদের পাশাপাশি সমাজের সব স্তরের মানুষকে। এ সার মাটিকে রাখতে পারে সতেজ, ফিরিয়ে দিতে পারে আগের সেই প্রাণ। শুধু তাই নয়, এই জৈব সার উৎপাদনে কৃষকদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
মিরপুর উপজেলার বহলবাড়ীয়া ইউনিয়নের খাঁড়ারা গ্রামে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আলীমুল রেজা সুমনের বাড়ির আঙ্গিনায় এ মাঠ দিবস পালিত হয়।
যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রযুক্তি বিষয়ক কেঁচো সার উৎপাদন প্রদর্শনীর মাঠ দিবসে বাস্তবায়ন করে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
বহলবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম সাইদুলের সভাপতিত্বে এবং মিরপুর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মইনুল ইসলাম রাজিবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই মাঠ দিবসের অনুষ্ঠানে চাষিদের কেঁচো সার উৎপাদনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মাহিরুল ইসলাম, বহলবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সানোয়ার হোসেন, কৃষকের বন্ধু এসএম জামাল ও তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আলীমুল রেজা সুমন প্রমুখ।
মাঠ দিবসে বক্তারা বলেন, মাটির পুষ্টিমাণ বৃদ্ধি, মাটির পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো, ভূমিক্ষয় রোধ, মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও মাটির রাসায়নিক বিক্রিয়ার মান নিরপেক্ষ রাখতে সহায়তা করে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার। কেঁচো সারের উপাদানের মধ্যে রয়েছে নাইট্রোজেন শতকরা এক ভাগ, ফসফরাস এক ভাগ, পটাশিয়াম এক ভাগ, জৈব কার্বন ১৮ ভাগ ও পানি রয়েছে ১৫ থেকে ২৫ ভাগ পর্যন্ত। কেঁচো কম্পোস্ট তৈরির জন্য ছায়াযুক্ত স্থানে প্রথমে গর্ত তৈরি করে রিং স্থাপনের পর নিচে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে নিতে হবে। এরপর গর্তে ছোট ছোট কাটা ঘাস, আমের পাতা, হাস মুরগির বিষ্টা, পচা গোবর দিয়ে ২০০টি কেঁচো প্রয়োগ করতে হবে। রিংয়ের উপরিভাগে পাটের ভেজানো বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ৩ দিন পর ২১ দিন পর্যন্ত ৫০-৬০ ভাগ আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য হালকা পানি ছিটাতে হবে। ২৮ -৩২ দিনের মাথায় কেঁচো সার সংগ্রহ করার উপযোগী হয়। ২ ঘন্টা রোদে শুকানোর পর বাজারজাত করাসহ মাঠের ধান, আলু, শাকসবজি, ফুলের টবে বা ছাদ কৃষিতে এ সার ব্যবহার করা যায় বলে জানান।
এসময় ইউনিয়নের সব ইউপি সদস্য, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব, ছাত্রলীগ নেতা রাজিব, রাব্বি, ফিরোজ, আরাফাতসহ শতাধিক কৃষক/কৃষাণী উপস্থিত ছিলেন।