একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পানি ও খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছিল কুষ্টিয়া শহরের দেশওয়ালীপাড়ার কোহিনুর ভিলার সদস্যরা। আর এ কারণে ওই পরিবারের ১৬ সদস্যকে ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছিল রাজাকার আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোহিনুর ভিলার সামনে মুক্তিযোদ্ধা মনোগ্রাম খচিত একটি সাইনবোর্ডে নিহত ১৬ জনের নাম লেখা রয়েছে। ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল দীর্ঘদিনের পুরোনো ওই বাড়ির জরাজীর্ণ অবস্থা। একতলা বাড়িটির ছাদে টিন, রেলের পাত ও শালকাঠের পিলার দেয়া।
সেসব সহ পলেস্তারা খসে পড়ছে। তবে বাড়িটি বসবাসের অযোগ্য হলেও জোড়াতালি দিয়ে কোনো রকমে বসবাস করছে পরিবারের সদস্যরা। এছাড়াও কোহিনুর ভিলার পেছনে ১৬ জনের গণকবরটিও রয়েছে অযত্ন আর অবহেলায়। বছরের আজকের দিনটিতে কেবল পরিবারের পক্ষ থেকে মিলাদ মাহফিল করা হয়ে থাকে। তবে মুক্তিযুদ্ধ সংসদ কিংবা প্রশাসনের আয়োজনে কোনো অনুষ্ঠান বা শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় না।
কোহিনুর ভিলার সদস্য আব্দুল হালিম বলেন, ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে কোহিনুর ভিলার ১৬ সদস্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছিল রাজাকার আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পানি ও খাবার দিয়ে সহযোগিতা করার কারণে তাদের হত্যা করা হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের গণকবর দেয়। হত্যার শিকার ওই ১৬ সদস্যের মধ্যে কোহিনুর ভিলার গৃহকর্তাসহ তার স্ত্রী-সন্তান, কর্মচারী, আত্মীয় ছিল।
তিনি বলেন, ‘কোহিনুর ভিলার সামনে মুক্তিযোদ্ধা মনোগ্রাম খচিত ওই সাইনবোর্ডটি দেখে মানুষ মনে করে আমরা সরকারিভাবে অনেক সহযোগিতা পেয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের কোনো সহযোগিতা করা হয় না। আমাদের থাকার ঘরের পরিবেশ নেই এবং সেই গণকবরটিও অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে।
তিনি সরকারের কাছে দাবি করে বলেন, ‘কোহিনুর ভিলার নিহতদের যেন শহীদের মর্যাদা দেয়া হয়। আমরা পরিবারের সদস্যরা সেই অপেক্ষাতে আছি।
কুষ্টিয়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হাজী রফিকুল আলম টুকু বলেন, ‘এই কোহিনুর ভিলা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এই বাড়িসহ গণকবরটি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হচ্ছে। আশা করি আমরা স্মৃতি সংরক্ষণ করতে সক্ষম হব। ওই পরিবারের একজনকে আমরা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করব। আর ওই নিহত ১৬ জনকে শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।