মুজিবনগর উপজেলার সরকারি অফিসগুলোতে মানা হচ্ছে না সরকারের নতৃন নিয়ম।এখানে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকার নির্ধারিত নতুন সময় সূচিতে অফিস করছেন না কেউ।অনেকে দেরিতে অফিসে আসছেন আবার নির্ধারিত সময়ের আগেই অফিস ত্যাগ করছেন।
গতকাল রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১১টা পর্যন্ত মুজিবনগর উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে মেহেরপুর প্রতিদিনের টিম সরেজমিনে গিয়ে অনিয়মের এই চিত্র পেয়েছে। ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ৯টা ৩৭ মিনিট। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার অফিস তালাবদ্ধ। একটু পরেই একজন লোক এসে অফিস খোলেন। তিনি নিজেকে অফিসের পিওন পরিচয় দিয়ে বলেন সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম মন্ত্রীর সাথে দেখা করে অফিসে আসবেন।
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা উপস্থিত হতে পারেননি যথাসময়ে।সকাল ৯ টার সময়েও তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা থাকলেও উপস্থিত ছিলেন মাত্র একজন। যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা রকিব উদ্দীন অফিসে প্রবেশ করেননি। মোবাইল ফোনে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা রাকিবের সাথে কথা বললে তিনি জানান আমি আজকে জেলা অফিসে ছিলাম। সেখান থেকে এই মাত্র (৩.৫০ মিনিট) বাসাতে ফিরলাম। অফিসে যাওয়া হয়নি আজকে।অফিসের মুভমেন্ট খাতায় সই করে বাইরে যাওয়ার নিয়ম থাকলেও অনেক সময় সেটা মানা হয়না বলে জানান এই কর্মকর্তা।
সকাল সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের দরজায় দেখা যায় সেবা গ্রহীতার অপেক্ষা। তার অফিস কক্ষের তালা সকাল ৯ টার পরে খোলা হলেও সকাল ১০ টা পর্যন্ত অফিসার আসেননি।
সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মুজিবনগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এর কার্যালয়ের অফিসারের রুমটি ছিল তালাবদ্ধ। দেখা গেছে এই জনগুরুত্বপূর্ণ অফিসটি চালাচ্ছেন একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। তবে, খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুজ্জামান মোবাইল ফোনে বলেন, আমি মুজিবনগরে এবং জেলায় অতিরিক্ত দায়ীত্বে রয়েছে। যে কারনে প্রতিদিন মুজিবনগরে অফিস করা সম্ভব হয়না। কাজ থাকলে যায়। না থাকলে সদর এবং মেহেরপুর কাজ করি।
সকাল সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত উপজেলা সমবায় অফিসার মোঃ মনিরুজ্জামান ছিলেন না অফিসে। তালাবদ্ধ ছিল তার কক্ষটিও। উপজেলা সমবায় অফিসের সহকারী পরিদর্শক মোঃ শাহিনুজ্জামানও উপস্থিত ছিলেন না তার কক্ষে।
তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের সহকারি প্রোগ্রামার এনাম আহমেদ সহজ প্রতিদিনই অফিসে আসেন দেরিতে। আজকেও তার সেই চিত্র পাওয়া গেছে। সকাল ৯:৩০ পর্যন্ত তিনি অফিসে আসেননি। উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার কাউসার আলী এর কার্যালয় ছিল তালাবদ্ধ। তার পাশাপাশি তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল সহকারী পল্লী উন্নয়নের অফিসার মোঃ আব্দুস সালামের কক্ষটিও।
উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর মোঃ পলাশ আলীর অফিস আসেননি সঠিক সময়ে। সকাল ৮টার সময় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রবের তালাবদ্ধ কক্ষ, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম মামুনুর রশিদের কক্ষটি খোলা থাকলেও অফিসে পাওয়া যায়নি সহকারি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। স্যার তখনো অফিসে পৌছাননি বলে জানান অফিস সহায়ক। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আলাউদ্দিন ছুটিতে ভারতে রয়েছেন চিকিৎসার জন্য এমনটি জানান অফিস সহায়ক।
তবে, যথা সময়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি)অফিসে পাওয়া গেছে প্রকৌশলী শাহীন আক্তারকে। অফিসে সঠিক সময় ছিলেন তানিয়া খন্দকার।
সূত্রে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকার নির্ধারিত সকাল ৮টার মধ্যে অফিস কক্ষে থাকা বাধ্যতামূলক। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ অফিসে নির্ধারিত সময়ে কর্মকর্তারা আসেন না। ৮টায় অফিসে আসার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বেশিরভাগই সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে আসেন। এ সুযোগ নিয়ে অধস্তন কর্মচারীরাও নির্ধারিত সময়ে অফিসে আসছেন না।
মুজিবনগরের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বলেন, আমি এই জেলাতে নতুন এসে সদর উপজেলাতে যোগদান করেছি। যোগদানের পরপরই গত ০৮/০৯/২০২২ তারিখ থেকে মুজিবনগরের ইউএনও হিসেবে অতিরিক্ত দায়ীত্ব দিয়েছে। আজকে রবিবার ছিল আমার কাজের প্রথম দিন। আমি যেতে পারিনি সেখানে। খোঁজ খবর নিয়ে তারপর বিষয়টি আমি দেখবো। তবে,সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের অফিসে আসা যাওয়া করা উচিৎ।