বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য গ্রামীণ পর্যটনশিল্পের উন্নয়নেের প্রয়োজনে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি-২০৩০) অর্জন ত্বরান্বিত করতে গ্রামীণ পর্যটনের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্ব পর্যটন সংস্থা (UNWTO) এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী একজন পর্যটক ১০টি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে থাকে।
বৈশ্বিক জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ১০% পৃথিবীর অনেক দেশের জনগণের আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে পর্যটন। পর্যটন একটি সেবাধর্মী শ্রমঘন শিল্প। প্রস্তাবিত জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২ এ পর্যটনকে একটি শিল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত শিল্পনীতি অনুযায়ী পর্যটনে ১২টি উপখাতের আওতায় ১২০টিরও অধিক বিষয়কে পর্যটন শিল্পের আওতায় আনা হয়েছে যার মধ্যে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম, ট্যুর গাইড, পরিবহন ও আবাসন খাত অন্যতম।পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে বাংলাদেশের স্থানীয় জনপদের লোকজন উপকৃত হবে তারাই পর্যটনের উন্নয়নে এগিয়ে আসবে।
এছাড়াও গ্রামের মানুষের মধ্যে মমত্ববোধ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, সহযোগিতা, একতা, সাম্য বৃদ্ধি পাবে যা বর্তমানে চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সহযোগিতা করবে এবং বাস্তবায়িত হবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা।
সেই লক্ষমাত্রা কে সামনে রেখে, মুজিবনগরে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে, দিন ব্যাপি কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম ও ট্যুর গাইড প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার সকালে মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স অডিটরিয়ামে,বর্তমান সরকারের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতিহারে অন্যতম প্রতিশ্রুতি “আমার গ্রাম আমার শহর” ধারণাটি গ্রামীণ পর্যটন উন্নয়নের সাথে সম্পর্কযুক্ত। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল ও ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে গ্রামীণ ট্যুরিজম উন্নয়ন করা হচ্ছে, কারণ গ্রামীণ পর্যটন জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একটি কার্যকর অবদান রাখছে।
তার ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত মুজিবনগরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু পর্যটকের সমাগম ঘটে। দর্শনার্থীগণ মুজিবনগরের পর্যটনের আকর্ষণীয় স্থানসমূহে স্থানীয় বাহন ভ্যানে করে সাধারণত ঘুরে বেড়ায়। ঐতিহাসিক মুজিবনগরে আগত পর্যটকদের এর ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে অবহিত করার জন্য গাইড তৈরি করা এবং পর্যটকদের আবাসন ও খাবারের জন্য কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তত্বাবধানে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে দক্ষ ট্যুর গাইড, ট্যুর অপারেটর, হোম-স্টে, পরিবহন কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।গ্রামীণ পর্যটন উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার ৬০ জন ট্যুর গাইড, ৩০ জন কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম উদ্যোক্তা ও ৯০ জন পরিবহন কর্মীদের নিয়ে দু’দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে।
প্রশিক্ষণের প্রথম সেশনে দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুজিবনগর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আব্দুর রব এর সঞ্চালনায় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন (এমপি)।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এর চেয়ারম্যান আলী কদর, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড: মোহাম্মদ মনসুর আলম খান।
উপস্থিত ছিলেন, মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজন সরকার, মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম তোতা সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন।
উদ্বোধন শেষে দুই দিনব্যাপী কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম ও ট্যুর গাইড প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয় কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম ও ট্যুর গাইড প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিবিটি এক্সপার্ট ও ফ্যাকাল্টি মেম্বার আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজন সরকার ট্যুরিজম উইন্ডো এর সত্ত্বাঅধিকারী( বিশিষ্ট ট্যুর গাইড) মনিরুজ্জামান মাসুম বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এর সরকারি পরিচালক মাজহারুল ইসলাম,
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এর সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন এবং মুজিবনগর টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ উপ-পরিদর্শক দুই দিনব্যাপী কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম ও ট্যুর গাইড প্রশিক্ষণে, মুজিবনগর উপজেলার ৬০ জন ট্যুর গাইড, ৩০ জন কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম উদ্যোক্তা এবং ৯০ জন পরিবহন কর্মীকে প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়।