মুজিবনগরে সরকারী প্রণোদনা কৃষি অফিসের সহযোগীতা, আধুনিক প্রযুক্তি ও উচ্চফলনশীল বরোধান চাষের কারনে চলতি বছরে উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা চাষীদের।
মুজিবনগর উপজেলা একটি কৃষি নির্ভর উপজেলা সবজি ও সুখ সাগর পেয়াজ চাষের জন্য প্রসিদ্ধ হলে উপজেলার প্রায় ৪০শতাংশ জমিতে বরো ধান চাষ হয়।
মুজিবনগর কৃষি বিভাগের তথ্য মতে উপজেলায় মোট চাষ যোগ্য জমির পরিমাণ ৮৮০০ হেক্টর এর মধ্যে চলতি বরো মৌসুমে উপজেলার ৩ হাজার ৩’শ ৩০ হেক্টর জমিতে বরো আবাদ হয়েছে এবং এবারে ১৯ হাজার ৯ শত ৮০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি অফিস।
চলতি মৌসুমে উপজেলায় উচ্চফলনশীল জাত ব্রী ধান ৮৪, ব্রী ধান ৮৯, ব্রী ধান ৮১, ব্রী ধান ৫৮ ও বি আর ২৮ ধানের চাষ চাষ হয়েছে তবে উপজেলায় চলতি মৌসুমে সবথেকে উচ্চফলনশীল ব্রী ধান ৫৮ জাতের চাষ বেশি হয়েছে।
মুজিবনগর উপজেলায় উৎপাদিত ধান উপজেলার মানুষের চাহিদা মিটিয়েও ব্যাবস্যায়ীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
গত ৪ তারিখে বিকেলে দেশের অধিকাংশ এলাকার উপর দিয়ে ৩৫ ডিগ্রী তাপমাত্রার উপরে গরম ঝড় হাওয়া বয়ে যায় এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিট ইনজুরির কারনে অনেক জেলায় ধানে শীষ শুকিয়ে গেলেও মুজিবনগর উপজেলায় ক্ষতির পরিমাণ কম মাত্র আধা হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি অফিস। উচ্চফলনশীল জাতের ধান চাষ করলে রোগ বালাই কম হবে উৎপাদন বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ কমবে তাই উচ্চফলনশীল জাতের ধান চাষ করার জন্য চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি অফিস।
ধানের ফলন যাতে ভাল হয় তার জন্য প্রতিনিয়ত সঠিক পরিচর্যা ও পোকামাকড় দমনে সঠিক মাত্রায় বালাইনাশক প্রয়োগ করার সবসময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীরা।
মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের ধান চাষি রবিউল ইসলাম জানান চলতি মৌসুমে তিনি ৫ বিঘা জমিতে উচ্চফলনশীল বরো ধানের চাষ করেছি অনুকুল আবহাওয়া ও সঠিক পরিচর্যার কারনে এ বছর ধানের ফলন ভাল হয়েছে আগামী ১৫/২০ দিনের মধ্যে ধান কাটব আশা করছি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারে ভাল ফলন পাবার প্রত্যাশা করছি।
মুজিবনগর উপজেলার নাজিরাকোনা গ্রামের চাষি জহিরউদ্দীন জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি প্রায় সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে উচ্চফলনশীল জাত ব্রী ধান ৫৮ ও ৮৯ জাতের চাষ করেছেন। এ ধানের শীষ খুব বড় বড় হয়েছে ধান খুব ভাল হয়েছে চিটার পরিমাণ কম। বিঘাপতি ২৫ থেকে ৩০ মন ধান হবে বলে আশা করছি তবে সার বিষের দাম বেশি হওয়ায় এবং ধান কাটার সময় ধান কাটা শ্রমিক সংকট ও মুজুরি বেশি হওয়া, পরিবহন খরচ বেশি হওয়ার কারনে লাভ কম হয়। সরকার সার বিষ এর দাম কমালে আমরা আরো লাভবান হতাম।
মুজিবনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান খাঁন বলেন, চলতি বরো মৌসুমে উপজেলার ২৬ শত ৮০ জনকে বিভিন্ন ভাবে সরকারী প্রণদোনা দিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস। এই মৌসুমে উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ হাজার জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের বরো ধানের আবাদ হয়েছে। গত ৪ তারিখের বিকেলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপজেলা কিছু জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে রোগ বালাইয়ের কারনে কোন জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এবং রোগ বালাই এর প্রকোপ খুব একটা দেখা যায়নি এ বছর।
তবে বি আর ২৮ ধানের রোগ বালাই বেশি কারণ ২৮ জাতের ধান অনেক পুরোনো হওয়ায় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারনে এ ধানের ক্ষতির পরিমাণ বেশি তাই কৃ্ষি বিভাগ ২৮ ধানের চাষ বাদ দিয়ে উচ্চফলনশীল ব্রীধান ৮৯ ও ৫৮ চাষ করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছে।
উচ্চফলনশীল জাতের ধান একর প্রতি ৬০ থেকে ৯০ মন পর্যন্ত ফলন হয়। এবারের মৌসুমে রোগবালাই মাত্রা কম থাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকার কারনে উপজেলায় ১৯ হাজার ৯ শত ৮০ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হবে বলে আশার করছে কৃষি অফিস।