মেহেরপুরে মুজিবনগর উপজেলায় ভৈরব নদীতে চায়না দুয়ারি’ জাল ব্যবহার করে নির্বিচারে মাছ শিকার করছেন স্থানীয় জেলে সহ এক শ্রেণীর অসাধু মানুষ। হুমকিতে পড়েছে দেশিয় প্রজাতির মাছ। পুরো ভৈরব নদী জুড়ে অসংখ্য চায়না দুয়াড়ী জাল। এসব দেখেও চোখ বন্ধ করে অন্ধ সেজে বসে আছে উপজেলা মৎস্য অফিস। এই জালের বিরুদ্ধে চোখে পড়ার মত নেই কোন কার্যক্রম।
খুব সহজে মাছ ধরার এই জাল ব্যবহারে বন্ধ না করলে ভবিষ্যতে দেশীয় প্রজাতির মাছ অস্তিত্বের সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমান সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের নিজস্ব উদ্যোগে মৃতপ্রায় ভৈরব নদী নতুন করে খননের ফলে হারিয়ে যাওয়া দেশিও প্রজাতির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
কিন্তু ভৈরব নদীতে ব্যাপক ভাবে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জালের ব্যাবহারে এবং উপজেলা মৎস্য অফিসের নিংক্রিয়তার ফলে হারাতে বসেছে দেশিয় প্রজাতির মাছ সহ নদীর জীববৈচিত্র।
এই জালে গিটগুলোর যে দূরত্ব, তাতে এটি দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ জালের আওতায় পড়ে। তবে নিষিদ্ধ জালের তালিকায় থাকার পরের মৎস্য অফিসের নিংসক্রিয়তার সুযোগ নিয়েই অবাধে চায়না দুয়ারি জাল ব্যবহার করা হচ্ছে।
মাছের প্রজনন মৌসুমে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের পর এবার ভয়ংকর চায়না দুয়ারি নামক জালে দেশীয় প্রজাতির সব মাছ ধরা পড়ছে। শুরুর দিকে ভৈরব নদীতে এ জাল ব্যবহার হলেও এখন ছড়িয়ে পড়ছে প্রত্যন্ত গ্রামেও। বর্তমানে জেলে সহ স্থানীয় মানুষ অহরহ ব্যবহার করতে শুরু করেছেন এ জাল।
ভৈরব নদীর মিঠাপানির সব ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ সূক্ষ এ জালের কানে ধরা পড়ছে। বিশেষ করে মাছের প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা চিংড়ি, পুটি, ট্যাংরা, কই, শিং, বেলে, বোয়াল, শোল, টাকিসহ দেশি প্রজাতির সব মাছ চায়না দুয়ারির ফাঁদে নিধন হচ্ছে। সেই মাছশূন্য হয়ে পড়ছে ভৈরব নদী।
আইন অনুযায়ী দেশে মাছ ধরার যেসব জালের অনুমোদন রয়েছে সেগুলোতে ‘মেস সাইজ’ তথা জালের ফাঁসের একটি গিট থেকে আরেক গিটের দূরত্ব হতে হয় ন্যূনতম পাড়ে ৪ সেন্টিমিটার। ‘মেস সাইজ তথ্য ফাঁসের আকার এর চেয়ে ছোট হলে সে ভাল আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ।
জেলেরা জানাচ্ছেন, চায়না দুয়ারি জালে এই ফাঁসের আকার সাড়ে ৪ সেন্টিমিটারের চেয়ে অনেক কম। ফলে এই জালে সব ধরনের মাছ ছেঁকে ওঠে। জেলেরা আরও বলেন, ‘পেশায় জেলে শুধু তাই নয়, মাছের ডিম পর্যন্ত আটকে যায় এই জালে। সহজেই মাছ ধরা যায় এবং দাম কম হওয়ায় বেশির ভাগ জেলে এখন এ জাল ব্যবহার করছেন। কারেন্ট জালসহ নিষিদ্ধ জালের তালিকায় এর নাম না থাকাকে কারণ দেখিয়েও অনেকে এই জাল ব্যবহার করছেন।
জেলেরা আরও বলছেন, এখন অনেক শৌখিন মৌসুমি মৎস্য শিকারি মাছ ধরতে নেমেছেন। ফলে যারা পুরোনো কৌশলে মাছ ধরতেন, তাদের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে চায়না দুয়ারি কিনছেন। নদীতে চায়না দুয়ারি জাল বন্ধে উপজেলা মৎস্য বিভাগেরর তেমন কোনো তৎপরতাও চোখে পড়ে না। প্রকাশ্যেই অনেকে চায়না দুয়ারি জাল ব্যবহার করেই মাছ ধরছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দা গোপালনগর গ্রামের এক জন জানান, দুপুর হলেই ছোট ছোট ডিঙিতে করে এই চানা দুয়ারি নদীতে ফেলা হয়। সারা রাত নদীতে রাখার পর সকালে তুলে আনা হয়। এ সময় জালে ধরা পড়ে দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় সব মাছ নদীতে থাকা জলজপ্রাণী, এমনকি ওঠে মাছের ডিমও। এ জাল দিয়ে মাছ ধরলে কিছু দিন পর হয়তো নদীতে আর কোনো মাছ পাওয়াই কঠিন হবে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক জেলে বলেন, ‘আগে কারেন্ট জাল ব্যবহার করলেও চায়না দুয়ারি আসার পর সেটি বাদ দিয়েছি। কারণ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরলে প্রশাসন উৎপাত করে। এ ছাড়া কারেন্ট জালের চেয়ে চায়না দুয়ারিতে মাছ বেশি পাওয়া যায়। ৫০ হাজার টাকা খরচ করে আটটি চায়না দুয়ারি কিনেছি।”
এমন মানুষও চায়না দুয়ারি নিয়ে মাছ ধরছেন। হাট-বাজারে গুণগতমান ও আকার অনুসারে তিন থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এ জাল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চায়না দুয়ারি দিয়ে মাছ শিকারি আরও কিছু মানুষ জানান, চায়না দুয়ারি দিয়ে মাছ ধরা ঠিক নয়, সেটি তারাও জানেন। তারপরও তারা মাছ ধরছেন।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতি:) দায়িত্বে থাকা মেহেরপুর সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীন ইসলাম বলেন ‘এই জালে মাছসহ নানা ধরনের জলজ প্রাণীও আটকে যায়। যেসব মাছ বাজারে বিক্রি হয় না, সেগুলোও ধরা পড়ে। কিন্তু সেগুলো জালে আটকে গেলে আর নদীতে ফিরিয়ে দেয়া হয় না। ফলে দেশীয় মাছসহ নানা ধরনের জলজ প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
আমি কয়েক দিন আগে যোগদান করেছি বিষয়গুলো নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে আমার আলাপ হয়েছে চায়না না দুয়ারী জালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।