মেহেরপুরের মুজিবনগরে নেপিয়ার ঘাস চাষ করে গবাদিপশুর খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত ঘাস বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক চাষি ও খামারি। চাষ সহজ হওয়ায় এবং একবার রোপণে অনেক দিন ঘাস পাওয়ায় উপজেলার অনেক কৃষক এবং খামারি এখন ঝুঁকছেন নেপিয়ার চাষের দিকে। প্রতিটি উপজেলাতেই এখন কম-বেশি এই ঘাসের চাষ হচ্ছে। অনেকে আবার নেপিয়ার বিক্রিকে পেশা হিসেবে নিয়ে সচ্ছলতা অর্জন করেছেন। খড়ের (বিচালি) দাম বেশি হওয়ায় বেশির ভাগ গরুর খামারিরা বর্তমানে নেপিয়ার ঘাস দিয়ে গবাদিপশুর খাদ্যের চাহিদা পূরণ করছেন। অধিক পুষ্টিগুণ থাকায় এই ঘাস পশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মাংস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই সুস্থ-সবল পশু পালনে সবুজ ঘাস হিসেবে নেপিয়ারে গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। নেপিয়ার ঘাস দেখতে আখের মতো। ৪ থেকে ১০ ফুট বা তার চেয়েও বেশি লম্বা হয়। দ্রুত বাড়ে, সহজে জন্মে, খরাসহিষ্ণু, পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য এই ঘাস।
মানিকনগর গ্রামের নেপিয়ার ঘাস চাষি ইয়াসিন মোল্লা জানান, প্রথমে তিনি নিজের গবাদিপশুকে খাওয়ানোর জন্য ১০ কাঠা জমিতে নেপিয়ার লাগান। অতিরিক্ত ঘাস বিক্রি করা শুরু করলে তাঁর চাষের খরচ উঠে আসে। বিষয়টি লাভ জনক মনে হওয়ায় তিনি নিজের জমিসহ লিজ নেওয়া ৫ বিঘা জমিতে আবার নেপিয়ারের চাষ করেন। ঘাস বিক্রি করে সে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে নেপিয়ার ঘাস বিক্রি করাই তাঁর পেশা। ইয়াসিন মোল্লার মতো এলাকার অনেকেই এখন এই ঘাস বিক্রিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন।
নেপিয়ার ঘাসের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্ষার শুরুতে ঘাসের শিকড় বা চারা রোপণ করতে হয়। রোপণের আগে প্রতি একর জমিতে দেড় থেকে দুই টন গোবর সার মিশিয়ে দিতে পারলে ভালো হয়। গোবর সার না দিলে পরিমাণ মত রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। প্রতিটি সারির মাঝে দূরত্ব রাখতে হয় দুই-তিন ফুট। প্রতিটি চারার মাঝে দূরত্ব থাকবে দেড় ফুট করে। চারা বা শিকড় লাগানোর পর যদি রোদ হলে বা মাটিতে রস কম থাকলে সেচের প্রয়োজন হয়। সাধারণত প্রতি একর জমিতে সাত থেকে আট হাজার চারা বা শিকড়ের দরকার হয়। ভালো ফলন ও বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত সার এবং পানি দিতে হয়। প্রথমবার ঘাস কাটার পর বিঘাপ্রতি ২০ কেজি ইউরিয়া ও ১০ কেজি পটাশ সার দিলে এই ঘাস দ্রুত বাড়ে।
রতনপুর গ্রামের গরুর খামারি মাইকেল টুইস মন্ডল বলেন, ‘বর্তমানে খড়ের দাম অনেক বেশি। কিন্তু কিনতে গেলে পাওয়া যাচ্ছে না। দানাদার খাদ্যের দামও বাড়ছে। এসব কারণে খড়ের বিকল্প হিসেবে নিজের ১ বিঘা জমিতে নেপিয়ার চাষ করে অল্প পরিমাণ বিচালির সঙ্গে মিশিয়ে গবাদিপশুকে খাওয়াচ্ছি।’
মুজিবনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, ‘থাইল্যান্ড থেকে এই ঘাস আমাদের দেশে এসেছে। এর উৎপাদন খরচ কম। অন্যান্য ঘাসের তুলনায় বেশ পুষ্টিকর। একবার রোপণ করলে ৪ থেকে ৫ বছর ফলন পাওয়া যায়। তাই উপজেলার কৃষক ও খামারিরা নিজেরাই এই ঘাস উৎপাদনে ঝুঁকেছেন। অন্যান্য ফসলের চেয়ে এখন ঘাস চাষে লাভ বেশি হচ্ছে। নেপিয়ার ঘাস চাষে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস কৃষক ও খামারিদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে।